ডঃ লি ওয়েনলিয়াঙের মৃত্যুতে উহানের বাসিন্দাদের শোক পালন করার একটি ভিডিওকে মিথ্যে দাবি সহ শেয়ার করে বলা হচ্ছে যে, করোনাভাইরাসের আতঙ্কে লোকজন প্রাণভয়ে কান্নাকাটি করছে। নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কথা প্রথম জানান ডঃ লি।
১৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি একটি উঁচু বাড়ি থেকে তোলা। ভিডিওটিতে হুইসিল আর স্লোগানের শব্দ শোনা যায়। ডঃ লির মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করতেই তেমনটা করা হচ্ছিল। ভিডিওটিতে বাড়িগুলিকে অন্ধকারাচ্ছন্ন মনে হয়। আর ক্যামেরা আস্তে আস্তে শহরের অন্য দিকে ফোকাস করলে জায়গাটিকে জনশূন্যও মনে হয়। নোভেল করোনাভাইরাসের আবির্ভাব হওয়ায়, ২৩ জানুয়ারি থেকে উহান শহরে সব কিছু বন্ধ রয়েছে।
চৌত্রিশ বছর বয়সী ডঃ লি ওয়েনলিয়াঙ ছিলেন চোখের ডাক্তার। কাজ করতেন উহান সেন্ট্রাল হসপিটালে। ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ উনিই প্রথম নতুন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে সকলকে সাবধান করেন। কিন্তু উহান পুলিশ ওই তরুণ ডাক্তারের বিরুদ্ধে ইন্টারনেটে গুজব ছড়ানোর অভিযোগ আনে। তার কিছুদিনের মধ্যে উনিও নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন এবং ৭ ফেব্রুয়ারি মারা যান।
বুম দেখে, ডঃ লি ওয়েনলিয়াঙের প্রতি উহানবাসীর শ্রদ্ধা জানানোর পদ্ধতিই ধরা পড়েছে ভিডিওটিতে।
'ভারত সমাচার'-এর প্রধান সম্পাদক ব্রজেশ মিশ্র ভিডিওটি টুইট করেন। সেই সঙ্গে দেওয়া হিন্দি ক্যাপশনে বলা হয়, "চিনের উহান শহরের বাসিন্দারা তঁদের বাড়িতে বসে আর্তনাদ করে প্রাণভিক্ষা চাইছেন। সাহায্য ও চিকিৎসার বদলে তাঁদের বাড়িতে বন্দি করে রাখা হয়েছে। চিনের মানুষের এই কান্না বিশ্ববাসীকে দীর্ঘকাল তাড়িয়ে বেড়াবে। করোনাভাইরাস চরম আঘাত হানতে চলেছে। ভারতকে এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।"
(মূল হিন্দিতে টুইট: "जिंदगी की भीख मांगते चीन के वूहान शहर के ये लोग अपने घरों से चीखकर गिड़गिड़ा रहे हैं. इलाज, मदद की बजाय इन्हें घरों में बंद कर दिया गया है. चीन के लोगों की ये चीखें सदियों तक विश्व समुदाय का पीछा करेंगी. कोरोना वायरस चरम की तरफ बढ़ रहा है.भारत को तत्काल तैयारी में जुटना होगा.")
जिंदगी की भीख मांगते चीन के वूहान शहर के ये लोग अपने घरों से चीखकर गिड़गिड़ा रहे हैं. इलाज, मदद की बजाय इन्हें घरों में बंद कर दिया गया है. चीन के लोगों की ये चीखें सदियों तक विश्व समुदाय का पीछा करेंगी. कोरोना वायरस चरम की तरफ बढ़ रहा है.भारत को तत्काल तैयारी में जुटना होगा. pic.twitter.com/hZDcxpgpWX
— Brajesh Misra (@brajeshlive) February 7, 2020
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ভিডিওটি একই বক্তব্য সহ ফেসবুকেও ঘুরছে।
তথ্য যাচাই
একজন টু্ইটার ব্যবহারকারী জানান যে, ভাইরাল ভিডিওটির ক্যাপশনে যা বলা হয়েছে তা সঠিক নয়। জানা যায় যে, ডঃ লি ওয়েনলিয়াঙের স্মৃতির প্রতি উহানের বাসিন্দাদের শ্রদ্ধ জানানোর দৃশ্য ধরা আছে ভিডিওটিতে। তাঁদের শ্রদ্ধা জানানোর পদ্ধতিটা ছিল একেবারে অভিনব, কারণ ওই শহরে সকলেই গৃহবন্দি হয়ে আছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে, কাউকেই বাড়ির বাইরে বেরতে দিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।
ऐसा कुछ नही है पत्रकार महोदय,वो लोग किन्ही अन्य कारण से shout कर रहे हैं और लाइट भी बंद कर रखी है । pic.twitter.com/JDj8QhtOjI
— Vivek Upadhyay (@drvupt) February 7, 2020
ওই টুইটার ব্যবহারকারী জানান যে, কয়েক মিনিটের জন্য আলো নিভিয়ে, মোবাইল ফোনের টর্চ জ্বেলে এবং হুইসিল বাজিয়ে উহানের বাসিন্দারা ডাক্তারের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ওই টুইটটি নীচে দেওয়া হল।
武汉今晚全市8:55至9:05分悼念李文亮医生、关灯五分钟打开手机与电筒射向天空五分钟。然后开灯集体吹哨5分钟。这是中国历史上空前绝无的悼念仪式! pic.twitter.com/ITzJ0O0Vlv
— 野山 (@naochashu) February 7, 2020
'ইপক টাইমস' ওই একই ভিডিও ইউটিউবে আপলোড করেছিল। ভিডিওটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়, "উহান শহর ডঃ লি ওয়েনলিয়াঙ, 'হুইসিল ব্লোয়ার' জন্য শোক পালন করে।
খবরে প্রকাশ, ফুটেজটি হল উহান বাসিন্দাদের একটি কার্যক্রমের অংশ। সেটির নাম দেওয়া হয়, 'আজ রাতে আমি হুইসিল বাজাব উহান'। ডঃ লির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ওই কর্মসূচি ৭ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। বাড়ির বাইরে বেরন নিষিদ্ধ হওয়ায়, স্থানীয় বাসিন্দারা সন্ধ্যে ৮.৫৫ থেকে ৯.০৫ পর্যন্ত বাড়ির আলো নিভিয়ে দেন, মোবাইলের টর্চ জ্বালেন এবং হুইসিল বাজাতে থাকেন ওই ডাক্তারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে।
তাইওয়ানের সংবাদ চ্যানেল 'ইবিসি নিউজ' তাদের ১ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের বুলেটিনে একই খবর দেয়। তাতে একাধিক ফুটেজের সাহায্যে দেখানো হয় উহানবাসী কিভাবে ডক্তারকে স্মরণ করেন। ওই বুলেটিনের ২৩ সেকেন্ডের মাথায়, ভাইরাল ফুটেজটি দেখা যায়।
ওই ভিডিওর বিবরণে বলা হয়, "লি ওয়েনলিয়াং, যিনি সকলকে উহান নিউমোনিয়া সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, নিজেই সংক্রমণের শিকার হয়ে গতকাল সকালে মারা যান। তাঁর মৃত্যুতে সবাই স্তম্ভিত। গতকাল সন্ধ্যায়, উহানের বাসিন্দারা শোক প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে ৫ মিনিটের জন্য আলো নিভিয়ে দেন। কিন্তু লি ওয়েনলিয়াঙের মৃত্যু জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি করে। চিনের কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। ঘোষণা করা হয় যে, ন্যাশনাল সুপারভিশন কমিটির একটি টিম তদন্ত করতে উহান যাবে।"
নতুন করোনাভাইরাসের নাম রাখা হয়েছে '২০১৯-এনসিওভি'। চিনের উহানে একটি সামুদ্রিক খাদ্যসামগ্রীর বাজারই ওই ভাইরাসের উৎস স্থল বলে দাবি করা হচ্ছে। ওই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইতিমধ্যে ১,৬৬৯ জন (দেখুন জনহপকিন্স) মানুষ মারা গেছেন।