বাংলাদেশের একটি মসজিদে ত্রাণ বিতরণের সময় হিন্দুদের বাদ দেওয়ার ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভারতের বলে শেয়ার করা হচ্ছে। ভিডিওটিতে লকডাউনের সময় মসজিদের সদস্যদের রেশন বিতরণ করতে দেখা যাচ্ছে। একটু পরেই ঘোষণা করা হয় যে, হিন্দুদের ওই ত্রাণের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়নি। তাই রিলিফের সামগ্রী তুলতে তাঁরা যেন না আসেন।
বুম দেখে ভিডিওটি বাংলাদেশের সিলেটের। সেখানে ত্রাণ বিলি করার ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক বৈষম্যের জন্য একজন রাজনৈতিক নেতা সমালোচিত হন। ২৬ মার্চ থেকে বাংলাদেশে সম্পূর্ণ লকডাউন চলছে। কোভিড-১৯ পজিটিভ মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকায়, সেখানে লকডাউনের মেয়াদ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
ভিডিওটির ছ'সেকেন্ডের মাথায় একজনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, "হিন্দুদের আসতে হবে না। তাঁদের নাম লিস্টে নেই।"
হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন সহ ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছে। ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "একটি মসজিদ থেকে খাবার বিলি করা হচ্ছিল। কিছু দুস্থ হিন্দু সেখানে গেলে তাঁদের বিতাড়ন করা হয়। বলা হয়, হিন্দুদের জন্য কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি।"
(হিন্দি বয়ানটি এই রকম: एक मस्जिद से खाद्य सामग्री बाँटी जा रही थी, कुछ जरूरतमंद हिन्दु वहाँ पहुँच गये पर उसको यह कहकर भगा दिया गया की यहाँ पर हिन्दुओं के लिये कोई व्यवस्था नहीं है)
ভিডিওটির বাঁ দিকে বাংলায় লেখা আছে যে হিন্দু হওয়ার কারণেই তাঁদের ত্রাণ দেওয়া হয়নি। আসল বয়ানটি এই রকম: "শুধু হিন্দু হওয়ার অপরাধে ত্রাণ পেলনা অসহায় হিন্দুরা; বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি!! পাকিস্তানেও পায়নি আর বাংলাদেশেও দেখা লাগল। ২.৫৫ মিনিটে খেয়াল করুন।"
লক্ষ্য করার যে, ভিডিওটির বাংলা লেখাটি এডিট করে তার জায়গায় একটি হিন্দি লেখা বসিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেক পোস্টে। এবং ভিডিওটিকে ভারতের ঘটনা বলে চালানো হচ্ছে।
প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে, ভিডিওটির আরও বড় একটি সংস্করণের সন্ধান পাওয়া যায়। ওই ভিডিওটি ৫ এপ্রিল ২০২০ ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছিল। বাংলায় লেখা ক্যাপশনে বলা হয়, "হিন্দুদের ত্রাণ দেওয়া হবে না, হিন্দুরা বাড়ি চলে যাও। সিলেট।"
৪ এপ্রিল ২০২০ তে 'সিলেট মিরর'-এ প্রকাশিত একটি খবর আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। খবরটিতে বলা হয় ঘটনাটি সিলেটের ওসমানীনগরে ঘটে। সেখানে ওই অঞ্চলের জন্য বরাদ্দ ত্রাণ সামগ্রী থেকে হিন্দুদের বঞ্চিত করা হয়।
৩ এপ্রিল ২০২০ শুক্রবারের নামাজের পর এই ঘটনাটি ঘটে। ত্রাণ বিতরণের কাজে নেতৃত্ব দেন কামরুল ইসলাম। উনিই লিস্টের নামগুলি ঘোষণা করছিলেন। কামরুল ইসলাম বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির একজন নেতা এবং সিলেটের পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির পরিচালক।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ভিডিওটি একটি ফেসবুক লাইভের অংশ, যেটি পরে ভাইরাল হয়ে যায়।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে, ত্রাণ বিতরণের কাজটা প্রশাসনকে না জানিয়েই করা হয়, কারণ মসজিদে জমায়েতের কোনও অনুমতি ছিল না। উপজেলার নির্বাহী কর্মাকর্তা মোসাম্মত তহমিনা আখতার ঘটনাটিকে বৈষম্যমূলক বলে ঘোষণা করেন এবং ওসমানীনগর থানার ওসিকে ব্যাপারটি তদন্ত করার নির্দেশ দেন।
'সিলেট ভয়েস'-এর প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, ৫ এপ্রিল কামরুল ইসলাম একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ওই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন যে, আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে, হিন্দুদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী তাঁদের বাড়িতে অথবা অন্য কোনও নির্ধারিত জায়গায় দেওয়া হবে। উনি বিভেদ সৃষ্টি না করার জন্য আবেদন করেন। ওই প্রতিবেদনে হিন্দুদের নামের একটি তালিকাও প্রকাশিত হয়।
আরও পড়ুন: না, উগ্র বক্তব্য পরিবেশিত জনসমাবেশের ভাইরাল এই ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের নয়