একটি হোয়্যাটসঅ্যাপ মেসেজে দাবি করা হয়েছে যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) কোভিড-১৯ লকডাউন সম্পর্কে প্রোটোকল এবং পদ্ধতি বিষয়ে জানিয়েছে। এই মেসেজটি ভুয়ো। বুম হু-র এক জন প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি এই মেসেজটিকে একেবারেই উড়িয়ে দিয়ে বলেন যে এটি মিথ্যা।
নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে এবং কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে এই মেসেজে প্রস্তাবিত লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো এবং তার মাঝে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সব ধরনের সোশাল মিডিয়ায় এই মেসেজটি ভাইরাল হয়েছে।
এই মেসেজের মূল কথা হল, "সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লকডাউন সময়সীমার প্রোটকল এবং পদ্ধতি।" এর পর বলা হয়েছে এক দিনের জনতা কারফিউ-এর পর তিন সপ্তাহের লকডাউন, তার পর হু পাঁচ দিনের ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করেছে এবং তারপর আবার চার সপ্তাহের জন্য বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা। এই মেসেজটিতে বলা হয়েছে যে দেশে ১৫ জুন পর্যন্ত লকডাউন চলতে পারে এবং এটি হু'র মতামত বলে জানানো হয়েছে।
নীচে সম্পূর্ণ মেসেজটি পড়তে পারেন।
হু'র লোগো দেওয়া এই একই মেসেজ হোয়্যাটসঅ্যাপে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা ফেসবুক এবং টুইটারে খোঁজ করলে দেখতে পাই যে নেটিজেনরা এই মেসেজটি সেখানেও শেয়ার করেছেন।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
*WORLD HEALTH ORGANISATION PROTOCOL&PROCEDURE OF LOCKDOWN PERIODS FOR CONTROLLING ON MOST DANGEROUS VIRUS*
— anil (@anil76026272) April 3, 2020
STEP 1 - 1 DAY.
STEP 2- 21 DAYS.
AFTER 5 DAYS.
STEP 3- 28 DAYS.
AFTER 5 DAYS.
STEP 4 - 15 DAYS.
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস সংক্রান্ত এই 'অ্যাডভাইজারি' ইউনিসেফের নয়
তথ্য যাচাই
বুম দেখে যে লকডাউনের মেয়াদবৃদ্ধি এবং তার মাঝে মাঝে ছাড় দেওয়ার এই নীতিটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নয়। হু লকডাউনের কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়নি। আমরা সংস্থার এক প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান যে এই মেসেজটি ভিত্তিহীন।
একটি টুইটে বিশ্ব সংস্থার সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া শাখাও এই দাবিটিকে উড়িয়ে দেয়।
Messages being circulated on social media as WHO protocol for lockdown are baseless and FAKE.
— WHO South-East Asia (@WHOSEARO) April 5, 2020
WHO does NOT have any protocols for lockdowns. @MoHFW_INDIA @PIB_India @UNinIndia
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা লকডাউনের কোনও মেয়াদ বেঁধে দেয়নি। কোন দেশে রোগ কতটা ছড়াচ্ছে, সেই অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট দেশটি তার লকডাউন নিয়মাবলি তৈরি করবে। চিনের উহানে প্রথম নোভেল করোনাভাইরাস আক্রান্তের খোঁজ পাওয়া যায় বলে মনে করা হচ্ছে এবং সেখানে ২৩ জানুয়ারি থেকে শুরু করে প্রায় দুমাস ধরে লকডাউন চলেছে।
গবেষকদের দেওয়া প্রস্তাবিত লকডাউন মডেল সংক্রান্ত একটি মডেল
এ ছাড়া আমরা দেখতে পাই কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ভারতীয় বংশদ্ভুত গবেষকের গবেষণাপত্রের উপর ভিত্তি করে ভাইরাল হওয়া এই মেসেজটি করা হয়েছে। এই গবেষণাপত্রে রোগ ছড়ানো আটকানোর জন্য সহনশীল লকডাউন এবং তার মাঝে ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এই স্টাডি অনুসারে ভারত সরকার যে ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে তা ফলপ্রসূ হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং 'এর শেষে কোভিড-১৯ নতুন করে ছড়িয়ে পড়বে'। এই অসুখ নতুন করে ছড়ানো আটকানোর জন্য ৪৯ দিনের লকডাউন প্রয়োজন বলে অনুমান করা হয়েছে।
এই স্টাডির শিরোনাম দেওয়া হয়েছে, "ভারতে কোভিড-১৯ মহামারির ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্বের বয়সভিত্তিক প্রভাব।" নীচে এটির পিডিএফ ভার্সন দেওয়া হল।
এই স্টাডির উপসংহারে বলা হয়েছে, "আমাদের এই মডেল থেকে দেখা যাচ্ছে, মাঝে মাঝে ছাড় দিয়ে দীর্ঘমেয়াদি লকডাউনের পথে হাঁটলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা এমন একটি স্তরে নেমে আসবে, যেখানে সংক্রামিত ব্যক্তির সামাজিক সংযোগগুলিকে চিহ্নিত করা যাবে, এবং প্রয়োজনে তাঁদের কোয়রান্টিনের ব্যবস্থাও করা যাবে।"
আরও পড়ুন: বাদুড়-সঙ্গমে মানুষের মধ্যে ছড়ায় কোভিড-১৯ দাবির মূলে একটি ভুয়ো ওয়েবসাইট