গুয়াতেমালার একটি ভিডিওতে জনতার হাতে জীবন্ত পুড়তে-পুড়তে যন্ত্রণায় বেঁকে যাওয়া একটি অল্পবয়সী মেয়ের ছবি একটি ভুয়ো সাম্প্রদায়িক বয়ান সহ ফেসবুক ও টুইটারে ভাইরাল হয়েছে, যাতে দাবি করা হয়েছে মধ্যপ্রদেশের এক বালিকাকে গির্জার প্রার্থনায় যোগ দেওয়ার অপরাধে এ ভাবে মারা হয়েছে।
ভিডিওটিতে জনতা যখন কালো শর্টস ও টপ পরা একটি মেয়ের গায়ে আগুন দিয়ে তাকে পুড়িয়ে মারছে, তখন চারপাশে বহু লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
এক পাকিস্তানি টুইটার ব্যবহারকারী মানো (@মানো_আইএসআই) ভিডিওটি শেয়ার ক’রে (যদিও পরে তা মুছেও দেয়) ক্যাপশন দেয়, “খ্রিস্টান চার্চের এক প্রার্থনায় যোগ দেওয়ার অপরাধে মধ্যপ্রদেশের এই হিন্দু বালিকাটিকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। দয়া করে ভিডিওটি চারিদিকে ছড়িয়ে দিন যাতে সারা বিশ্ব ভারতের অসহিষ্ণু চেহারাটা দেখতে পায়। এই গ্রহের উপর যথার্থ নরক কোথায়, দেখুন। দেখুন ‘অবিশ্বাস্য ভারত’-এর সবচেয়ে নোংরা রূপ!”
এই লেখার সময় পর্যন্ত টুইটটি ১০২ বার রিটুইট করা হয়েছে এবং ১০৪ জন সেটি ‘লাইক’ করেছে। ভিডিওটি দেখতে অস্বস্তি হতে পারে বলে বুম সেটিকে প্রতিবেদনের অন্তর্ভুক্ত করেনি।
২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ভিডিওটি একই সাম্প্রদায়িক দাবি ও ক্যাপশন সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাফেরা করছে।
তথ্য যাচাই
২০১৫ সালের গুয়াতেমালার ঘটনা
বুম দেখেছে, গুয়াতেমালার রিও ব্রাভো-তে ১৬ বছরের একটি মেয়েকে জনতা পুড়িয়ে মেরেছিল এক ট্যাক্সি-চালককে খুন করার অভিযোগে। এ সংক্রান্ত ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর ২০১৫ সালের মে মাসেই আন্তর্জাতিক সংবাদ-মাধ্যমে ঘটনাটি ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হয়েছিল।
মোটরসাইকেল ট্যাক্সির চালক কার্লোস এনরিক গঞ্জালেস নরিয়েগাকে(৬৮) যে দলটি খুন করে, জনতার মতে মেয়েটি ছিল তাদেরই একজন। ২০১৫ সালের ২৩ মে দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট সংবাদপত্র ঘটনাটি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
বুম লক্ষ করেছে, ভাইরাল হওয়া ভিডিও ক্লিপটি ১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের একটি দীর্ঘতর ভিডিও-র অংশ। স্প্যানিশ ভাষায় প্রকাশিত গুয়াতেমালার একটি সংবাদপত্র লা প্রেসনা লিবর-এর এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, মেয়েটিকে জনতা নৃশংসভাবে পেটায় এবং তারপর তার গায়ে পেট্রল ঢেলে তাকে জ্যান্ত জ্বালিয়ে দেয়। ৬৮ বছরের নরিয়েগাকে যারা খুন করে, তাদের সকলেই পালিয়ে গিয়েছিল, শুধু এই মেয়েটি পালাতে পারেনি, জনতার হাতে ধরা পড়ে যায়।
এই ভুয়ো খবরটি ২০১৮ সালের ১৭ ডিসেম্বরে দ্য কুইন্ট সংবাদমাধ্যমও তথ্য-যাচাই করেছিল।