ধর্ষণের সংস্কৃতি নিয়ে কিরণ খের-এর একটি পুরনো বক্তব্য প্রেক্ষিত থেকে আলাদা করে ফেসবুকে জিইয়ে তোলা হয়েছে, যাতে দাবি করা হচ্ছে যে তিনি ধর্ষণকে সমর্থন করেন ।
চণ্ডীগড়ের এই সাংসদের সঙ্গে (যিনি বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন) বুম যোগাযোগ করে । তিনি সোশাল মিডিয়ায় এই মর্মে ভাইরাল হওয়া পোস্টটিকে 'জঞ্জাল' আখ্যা দিয়েছেনঃ
"এটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয় যে এই ভুয়ো খবরটি আবার প্রচার করা হচ্ছে । প্রায় দু বছর আগে আমরা এটা নিয়ে চর্চা করেছিলাম এবং তখন এটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল । কেউ দুরভিসন্ধি নিয়ে আবার এটা শুরু করেছে l দয়া করে এসব বিশ্বাস করবেন না ।"
—কিরণ খের, সাংসদ, ভারতীয় জনতা পার্টি
পোস্টটিতে ভাইরাল ইন ইন্ডিয়া নামে একটি ভুয়ো খবর ছড়ানো হিন্দি পেজ-এর লোগো বা প্রতীক রয়েছে আর কিরণ খের-এর একটি ছবিও সাঁটা হয়েছে । সঙ্গে উদ্ধৃতিঃ "বলাত্কার তো যুগ-যুগ ধরে হয়ে আসছে । এটা আমাদের সংস্কৃতি । একে বন্ধ করা সম্ভব নয় ।"-কিরণ খের
পোস্টটির আর্কাইভ বয়ান দেখুন এখানে ।
অনেক ফেসবুক পেজেই পোস্টটি শেয়ার হয়েছে ।
তথ্য যাচাই
বুম 'কিরণ খের' এবং 'ধর্ষণ' এই শব্দদুটি বসিয়ে গুগল-এ অনুসন্ধান চালায় । সেখান থেকে আমরা পৌঁছে যাই অতীতে কিরণ খের-এর করা ধর্ষণের সংস্কৃতি বিষয়ক বেশ কয়েকটি মন্তব্যে ।
বুম লক্ষ্য করে, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া তাঁর মন্তব্যটি একটি দীর্ঘতর বিবৃতির অংশ, যাতে তিনি ধর্ষণের কঠোর নিন্দা করেছেন ।
যেমন ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সংঘটিত হরিয়ানা ধর্ষণ কাণ্ড বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন—"একমাত্র মানসিকতার পরিবর্তনই ধর্ষণের সংস্কৃতিতে ইতি টানতে পারে ।"
২০১৮ সালের ২২ জানুয়ারি চণ্ডীগড়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথাপ্রসঙ্গে তিনি বলেন—"দেখুন, ধর্ষণ এই প্রথম ঘটছে, এমন নয় । বরাবরই এটা ঘটে আসছে । যদি আপনারা মনে করেন, এবারই প্রথম এমন ঘটনা ঘটলো, তবে আপনারা ভুল করবেন । নিজেদের পরিবারের মহিলাদের সমান মর্যাদা দিন এবং একসাথে এগিয়ে চলুন । তবেই মানসিকতার পরিবর্তন ঘটবে এবং কুসংস্কার ও পক্ষপাতকে উপেক্ষা করা যাবে । এটা খুবই দুঃখের যে শুধু হরিয়ানায় নয়, এ ধরনের ঘটনা প্রায় সর্বত্রই ঘটছে এবং কেবল মৃত্যুদণ্ডই ধর্ষকদের চূড়ান্ত শাস্তি হতে পারে ।"
২০১৭ সালে ধর্ষিতাদের প্রতি কিরণের 'পরামর্শ' বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল
২০১৭ সালে কিরণ খের যে চণ্ডীগড়ের গণধর্ষিতাদের উপস্থিত বুদ্ধির অভাবের সমালোচনা করেছিলেন, তাতে রাজনীতিক এবং নেটিজেনদের মধ্যে প্রবল বিরূপ মনোভাব দেখা দিয়েছিল । মিডিয়ার সঙ্গে কথাপ্রসঙ্গে কিরণ সে সময় বলেছিলেন, "মেয়েদের আরও অনেক বেশি সতর্ক থাকা উচিত এবং যদি কোনও অটোরিক্সায় ইতিমধ্যেই ৩ জন পুরুষ বসে থাকে, তবে কোনও মেয়ের তাতে ওঠা উচিত নয় ।"
তাঁর এই বক্তব্য মারফত তিনি ধর্ষণের যারা শিকার, তাদেরই নিন্দা করছেন, এমন বিতর্ক সোশাল মিডিয়ায় উঠেছিল ।
কিরণ খের অবশ্য তাঁর বক্তব্যে অবিচল থাকেন এবং বলেন—"তিনি কেবল অল্পবয়সী মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়েই উদ্বিগ্ন, যেহেতু দিনকাল এখন খুবই খারাপ" ।