বলিউড অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তীকে বুধবার জামিন দিল বম্বে হাইকোর্ট। নার্কোটিক কন্ট্রোল ব্যুরো (এনসিবি) রিয়া সহ আরও চারজনকে তার বয়ফ্রেন্ড অভিনেতা সুশান্ত সিংহ রাজপুতকে মাদক সরবরাহ করার অভিযোগে গ্রেফতার করে। মুম্বই পুলিশ তদন্ত করে জানায় জুন মাসে প্রয়াত সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুর কারন আত্মহত্যা।
রিয়ার জামিনের ব্যাপারে হাইকোর্ট তার পর্যবেক্ষণে বলেছে রিয়া কোনও মাদকের কারবারি নয়। ''তিনি নিজের জন্য বা অন্যের আর্থিক সুবিধার্থে বা অন্য সুবিধায় ড্রাগ চালাচালি করেনননি,'' একথা বলেছে কোর্ট।
যদিও হাইকোর্ট জামিন দেয়নি রিয়ার ভাই সৌভিককে। কের্টের পর্যবেক্ষেণ, তাঁর ''সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে একাধিক মাদক কারবারির।''
কোর্ট এনসিবির যুক্তিতে অসম্মতি প্রকাশ করেছে। এনসিবির যুক্তি অন্যকে মাদক গ্রহণের জন্য টাকা দিয়ে সাহায্য করা মানে এই অভ্যাসে উৎসাহ দেওয়া আর তা এনডিপিসি আইনের ২৭এ ধারার অধীন—অর্থ যোগান ও লেনদেন যা অপরাধের তালিকায় পড়ে।
এনডিপিসি আইন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে হাইকোর্ট বলে, ''যদি অন্য কোনও ব্যক্তি যেমন বন্ধু অথবা আত্মীয় এই ধরণের মাদক সেবনের ক্ষেত্রে টাকা দেয়, সেক্ষেত্রে মাদক গ্রহণকারী ব্যক্তিকে শুধুমাত্র ১ বছর বা আইনানুগ শাস্তি দেওয়া যেতে পারে... কিন্তু যে ব্যক্তি ওই মাদক কেনার জন্য টাকা দেবে তার ২ বছর জেলের বিধান আছে। ''এটি একেবারেই সামঞ্জস্যহীন এবং একদমই অযৌক্তিক,'' বিচারপতি সারাং কোতওয়াল একথা বলেন।
বিকেলেই বাইকুল্লা জেল থেকে ছাড়া পান রিয়া। রিয়ার আইনজীবী সাতীশ মানসিন্ধিয়া এরকম সম্ভাবনার কথা জানান আগে।
আরও পড়ুন: কিটো ডায়েট কি আদেও স্বাস্থ্যকর, নায়িকার মৃত্যুতে ফের উঠল প্রশ্ন
কোর্টের কাছে বিশেষ সুবিধা কোনও বিখ্যাতই পাননা
বিচারপতি কোতওয়াল অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল অনিল সিংহের যুক্তি খারিজ করে বলেন, ''বিখ্যাত বা অনুকরণীয় ব্যক্তিদের শক্ত করে দেখা উচিত যাতে করে তা নতুন প্রজন্মের কাছে উদাহরণ হয়...''
''আমি আপনার সঙ্গে সহমত পোষণ করিনা,'' ওই বিচারপতি বলেন। ''সকলে আইনের কাছে সমান। কোনও বিখ্যাত বা অনুকরণীয় ব্যক্তি আইনের কাছে বিশেষ সুবিধা ভোগ করেন না। একইভাবে, এই ধরণের কোনও ব্যক্তি আইনের মুখোমুখি হলে তাঁর কোনও বিশেষ দায়বদ্ধতাও নেই,'' তিনি আরও বলেন।
বিষয়টি নিয়ে কোর্ট এককথায় বলে এটি এনসিবির মামলা যেখানে মাদক আগেই সেবন করা হয়ে গেছে আর তার কোনও বিহিত নেই। এই ক্ষেত্রে, কোর্ট বলে, ''এই ধাপে কিছুই দেখানোর নেই যে, রিয়া চক্রবর্তী ''কোনও অপরাধ করেছে বানিজ্যিকভাবে মাদক রেখে।''
জামিনের কঠিন শর্ত
জামিন দেওয়ার সময় হাইকোর্ট কঠিন শর্ত আরোপ করেছে। তার মধ্যে রয়েছে এক লক্ষ টাকার জামিনের বন্ড। রিয়া চক্রবর্তীকে তাঁর কাছাকাছি থানায় পাশপোর্ট জমা দিতে হবে ও রিপোর্ট করতে হবে। তিনি যেন অবশ্যই তাঁর পাশপোর্ট জামা দেন এবং দেশের বাইরে না যান। রিয়া কোনও সাক্ষ্যপ্রমাণ বা সাক্ষীর সঙ্গে দেখা করে প্রমাণ লোপাট বা প্রভাব খাটাতে পারবে না। তিনি যদি গ্রেটার মুম্বই এলাকার বাইরে যেতে চান তদন্তকারী আধিকারিকদের আগাম জানাতে হবে। যেতে চাইলে আগাম অনুমতি নিতে হবে। পরবর্তী ৬ মাস প্রতি সোমবার তাঁকে এনসিবিকে রিপোর্ট করতে হবে। তিনি যেন উপযুক্ত কারণ ছাড়া সমস্ত কেসের দিন কোর্টে হাজির হন।
এনসিবি ৮ সেপ্টেম্বর রিয়াকে গ্রেফতার করে। এনডিপিসি আইনের অধীন রিয়ার ভাই সৌভিক, আব্দুল পারিহার এবং সুশান্ত সিংহ রাজপুতের গৃহকর্মী দিপেশ সাওয়ান্ত এবং স্যামুয়েল মিরান্ডাকেও গ্রেফতার করা হয়।
আরও পড়ুন: লকডাউনে বাতিল হওয়া প্লেনের টিকিটের মূল্য ফেরত: আপনার যা জানা প্রয়োজন