সোশাল মিডিয়ায় একটি ছবি শেয়ার হচ্ছে, যেখানে উত্তরপ্রদেশের এক মন্দিরের ব্যালকনি থেকে এক পুরোহিতের মৃতদেহ ঝুলতে দেখা যাচ্ছে। সঙ্গে উস্কানিমূলক বিবরণ —মুসলিমরা নাকি ওই হিন্দু পুরোহিতকে হত্যা করেছে । নিহত ব্যক্তিটি রায়বেরিলির উঞ্চাহার এলাকার রাম-জানকী মন্দিরের পুরোহিত বাবা প্রেমদাস । নীচে জনতার ভিড় । স্থানীয় পুলিশ বুমকে জানিয়েছে, ৪ জন হিন্দুর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে । জেলা প্রশাসন সূত্রেও বলা হয়েছে, ওই পুরোহিত খুন হননি, আত্মহত্যা করেছেন । সোশাল মিডিয়ায় কিন্তু গুজব রটানো হচ্ছে যে মুসলমানরাই ওই পুরোহিতকে হত্যা করেছে । ফেসবুকে একজন ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন, এটি আইসিস-এর ধরনে ঘটানো সন্ত্রাসবাদ ।
ফেসবুকে হিন্দি ক্যাপশন দিয়ে ছবিটি শেয়ার হচ্ছে, যাতে লেখা—“রাম-জানকী মন্দিরে আরও এক পুরোহিত খুন। জেহাদীরা আগেই হুমকি দিয়েছিল, যদি মন্দিরে ভজন ও আরতি বন্ধ করা না হয়, তাহলে পুরোহিতকে হত্যা করা হবে । আর এবার ঠিক সেটাই তারা করে দেখালো । হিন্দুরা মনে রেখো—মুসলমানরা যত দিন তোমাদের বন্ধু, ঠিক আছে । কুন্তু সুযোগ পেলেই ওরা তেমায় ধ্বংস করবে এবং তোমার প্রিয়জনদেরও বাদ দেবে না” । শেয়ার হওয়া প্রতিটি পোস্টেই জেহাদি শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে ।
বুম স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানতে পারে, এই মৃত্যুর ঘটনার পিছনে মুসলিমদের কোনও হাত নেই । রায়বেরিলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শশিশেখর সিং বুমকে জানান, বুধবার সকালে মানুষ মন্দিরে গিয়ে দেখেন, পুরোহিত বাবা প্রেম দাসের মৃতদেহ মন্দিরের ব্যালকনির দেয়াল থেকে ঝুলছে । মৃত্যুটি খুন, না আত্মহত্যা, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে, তবে জড়িত সন্দেহে ৪ জন হিব্দুকে গ্রেফতার করা হয়েছে । মন্দিরের কর্তৃপক্ষ যে ৪ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তাদের মধ্যে কোনও মুসলিম নেই, সকলেই হিন্দু । তিনি আরও জানান, এই মৃত্যুর পিছনে কোনও সাম্প্রদায়িক প্ররোচনা নেই । বাবা প্রেম দাস সকলেরই শ্রদ্ধেয় ছিলেন এবং তাঁর শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে অনেক মুসলমানকে যোগ দিতে ও শোকপ্রকাশ করতেও দেখা গেছে ।
বুম রায়বেরিলির জেলাশাসক সঞ্জয় ক্ষত্রির সঙ্গেও যোগাযোগ করে, যিনি বলেন যে “মৃত্যুটি আসলে আত্মহত্যার ঘটনা । সম্প্রতি বাবা প্রেম দাসের বিরুদ্ধে একটি পুরনো ধর্ষণ মামলা হাইকোর্টে নতুন করে শুরু হয়েছিল । আদালত তাঁর বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলে তিনি প্রবল মানসিক চাপের মধ্যে পড়ে যান । তাঁর মৃত্যুর পর একটি সুইসাইড নোট-ও পাওয়া গেছে । পুলিশ মন্দির কর্তৃপক্ষের দাবি তদন্ত করে দেখছে যে ৪ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে, তারা হল বি এম মৌর্য ও তার ৩ সহযোগী সঞ্জীব মৌর্য, বাবা রামস্বরূপ এবং অমৃত লাল । এদের কেউই মুসলমান নয়” ।