একটি ভিডিয়ো সম্প্রতি ভাইরাল হল, যাতে দেখা যাচ্ছে যে একটি চলন্ত গাড়ির সামনের আসনে বসে এক মহিলা নাচছেন। ভাইরাল হওয়া অনলাইন পোস্টে দাবি করা হল যে মিছিলটি বিহারের বেগুসরাই লোকসভা কেন্দ্রের সিপিআই প্রার্থী কানহাইয়া কুমারের প্রচারে বেরিয়েছে। আর সামনের আসনে বসে যাঁকে নাচতে দেখা যাচ্ছে, তিনি ছাত্র আন্দোলনের কর্মী গুরমেহর কউর।
ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্টটিতে একটি ভিডিয়োর সঙ্গে দুটি ছবিও আছে।
পোস্টটিতে হিন্দি ভাষায় যা লেখা হয়েছে, তা অনুবাদ করলে মোটামুটি এ রকম দাঁড়ায়: “এই ভদ্রমহিলা, গুরমেহর কউর, কানহাইয়ার হয়ে প্রচার করছেন। তাঁরাই নাকি বেগুসরাইয়ের উন্নতি করবেন। এঁদের লজ্জাও করে না।”
(মূল হিন্দি পোস্ট: यही है वो #मोहतरमा हैं जो #कन्हैया के नामांकन में चुनाव प्रचार कर रही हैं,#गुरमेहरकौर। यही लोग मिलकर #बेगूसराय का विकास करेंगे।छी छी शर्म भी नहीं आती है।।)
ভিডিয়োটিতে দেখা যাচ্ছে যে মহিলা একটি হিন্দি সিনেমার গানের তালে তালে নাচছেন।
যে ছবিদুটি শেয়ার করা হয়েছে, সেগুলি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সহ সভাপতি শেহলা রশিদের। স্পষ্টতই, ভিডিয়োটি বা ছবিদুটির কোনওটিতেই গুরমেহর কউর উপস্থিত নেই।
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে এবং তার আর্কাইভড ভার্সনগুলি দেখা যাবে এখানে ও এখানে।
২.১৫ সেকেন্ডের ভিডিয়োটিতে দেখা যাচ্ছে যে এক জন মহিলা একটি চলন্ত গাড়ির ভিতরে নাচছেন, এবং বেশ কয়েক জন কমবয়সী ছেলেমেয়ে তাঁকে উৎসাহ জোগাচ্ছেন। যে গানটি বাজছে, তা কোনও একটি হিন্দি সিনেমার। ভাইরাল হওয়া পোস্টটিতে দাবি করা হয়েছে যে ভিডিয়োতে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে, আর মিছিলে কানহাইয়া কুমারের পাশে যে মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁরা দুজন এক— গুরমেহর কউর। দুটি দাবিই মিথ্যে।
পোস্টটি এখন ফেসবুক ও টুইটার, দুই প্ল্যাটফর্মেই ভাইরাল হয়েছে।
গুরমেহর কউর ছাত্র রাজনীতির কর্মী এবং এক জন লেখক। ২০১৭ সালে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, “পাকিস্তান আমার বাবাকে মারেনি, যুদ্ধ তাঁকে হত্যা করেছে।” এই মন্তব্যের জন্য তাঁকে টুইটারে বিস্তর ট্রলিংয়ের সম্মুখীন হতে হয়।
তথ্য যাচাই
বুম এই ভিডিয়ো ও ছবিগুলিকে আলাদা ভাবে যাচাই করে দেখেছে।
গাড়ির ভিতরের মহিলাটি কে?
বুম ভিডিয়োটিকে খুঁটিয়ে দেখে এবং বেশ কয়েকটি জিনিস লক্ষ্য করে:
গাড়িটির স্টিয়ারিং ডান দিকের বদলে বা দিকে।
ভিডিয়োটিতে মেয়েটির হাতে যে বোতলটি দেখা যাচ্ছে, তাতে Al Ain লেখা। Al Ain সংযুক্ত আমীর আরবশাহির একটি জনপ্রিয় প্যাকেজড ওয়াটার ব্র্যান্ড।
স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে যে এই ভিডিয়োটি ভারতের নয়।
এর পর বুম ভিডিয়োটিকে ফ্র্যাগমেন্ট করে এবং যাঁকে গুরমেহর কউর বলে দাবি করা হচ্ছে, সেই মহিলার কিছু মাগশট নেয়। অনলাইনে গুরমেহর কউরের যে ছবিগুলি আছে, আমরা তার সঙ্গে এই মাগশটগুলিকে মিলিয়ে দেখি।
আমরা গুরমেহর কউরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি জানান যে এই ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োর দাবি ভুয়ো।
“হ্যাঁ, এই খবরটা বেশ পুরনো আর সম্পূর্ণ ভুয়ো। দুই বছর আগে যেখন রামজস কলেজে প্রতিবাদ তুঙ্গে উঠেছিল, তখনও দক্ষিণপন্থীরা এই ভিডিয়োটি প্রচার করে দাবি করেছিল যে ওটা আমি। গত ৭-৮ বছরে আমি কোনও আরব দেশে যাইনি। যখন গেছিলাম, তখন আমার বয়স ছিল ১২ বছর।”
গুরমেহর কউর, ছাত্র আন্দোলনের কর্মী
গুরমেহর আরও জানান যে তিনি কানহাইয়া কুমারের হয়ে বেগুসরাইয়ে প্রচারে গিয়েছিলেন।
বুম নিশ্চিত ভাবেই প্রমাণ করতে পেরেছে যে এই ভিডিয়োটিতে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে তিনি গুরমেহর কউর নন। কিন্তু তিনি কে, তা আমরা জানতে পারিনি। ২০১৬ সালের অগস্ট মাসে ইউটিউবে এই ভিডিয়োটি আপলোড করা হয়।
ছবির মহিলা কে?
ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা একাধিক নিউজ রিপোর্ট খুঁজে পাই, যাতে এই ছবিটিই ব্যবহার করা হয়েছে।
ছবিতে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে, তিনি শেহলা রশিদ। তিনি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সহ সভাপতি ছিলেন, এবং জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস মুভমেন্টের সদস্য। প্রাক্তন আইএএস অফিসার শাহ ফয়জল এই রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠা করেছেন।
শেহলা রশিদ ও তাঁদের আরও কয়েক জন সঙ্গী কানহাইয়া কুমারের হয়ে বেগুসরাইয়ে বিপুল প্রচার চালাচ্ছেন। এটিই কানহাইয়ার প্রথম লোকসভা নির্বাচন।