একটি মৃতদেহের দাহকার্যের সময় দাঁড়িয়ে থাকা দুই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী ও নরসিংহ রাওয়ের একটি পুরনো ছবি দিয়ে দাবি করা হচ্ছে, ইন্দিরা গান্ধীর দাহকার্যের সময় এটি তোলা হয় । দাবিটি ভুয়ো ।
ছবিটিতে সনিয়া, রাহুল এবং প্রিয়ংকার সঙ্গে পি চিদম্বরমকেও দেখা যাচ্ছে । কয়েকজন নেটিজেন ছবিটির সেই অংশে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, যেথানে গান্ধী পরিবারের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের ভঙ্গি এবং নরসিংহ রাওয়ের ভঙ্গি সম্পূর্ণ আলাদা । তারপরই সোশাল মিডিয়ায় ছবিটি ভাইরাল হয় এই তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করতে যে, গান্ধী পরিবার বরাবরই নিজেদের মুসলিম পরিচয় গোপন করে এসেছে । বৃহস্পতিবার এই ছবিটি এক টুইটার ব্যবহারকারী তুলে দেন এবং দৈনিক ভারত নামের একটি ভুয়ো খবরের ওয়েবসাইট সঙ্গে-সঙ্গে সেটা প্রচারও করে । রিপোর্টটির একটি আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে এবং এখানে ক্লিক করুন ।
ইন্ডিয়া ইজরায়েল কানেক্ট নামের একটি ফেসবুক পেজও ছবিটি পোস্ট করে । সঙ্গে ক্যাপশনে প্রশ্ন তোলা হয়—“ইন্দিরার দাহকাজের সময় পুত্র রাজীব কেন মুসলিম প্রার্থনার ভঙ্গিতে হাত জোড় করে আছেন, যেখেনে নরসিংহ রাও হিন্দু নমস্কারের ভঙ্গি অবলম্বন করছেন?” আর্কাইভ লিঙ্ক এই লেখার সময় পর্যন্ত ছবিটি অন্তত ১০০ বার শেয়ার হয়ে গেছে ।
এই লেখার সময় পর্যন্ত ছবিটি অন্তত ১০০ বার শেয়ার হয়ে গেছে ।
https://www.facebook.com/iicconnect/photos/a.1303590069680144/2138841242821685/
তথ্য যাচাই
বুম এই ছবিটি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে অনলাইনে দুটি লিংক খুঁজে পায়, যা এই ছবিটির সঙ্গে মেলে । সেই সঙ্গে পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানের এক রাজনীতিক মহসিন দাওয়ার-এর একটি টুইটও ।
একই ছবি আমরা খুঁজে পাই www.skyscrspercity.com নামের একটি ওয়েবসাইটে । আর্কাইভ করা সাইট।
টুইট এবং ওয়েবসাইট উভয়েই জানাচ্ছে—ছবিটি ১৯৮৮ সালের ২১ জানুয়ারি পেশোয়ারে প্রয়াত স্বাধীনতা-সংগ্রামী খান আবদুল গফ্ফর খানের অন্ত্যেষ্টির সময় তোলা, যিনি সীমান্ত গান্ধী বা বাচ্চা খান নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন । ৯৮ বছর বয়সে গফ্ফর খান মারা যান তার আগের দিন ২০ জানুয়ারি, একটি স্ট্রোক হওয়ার ৬ মাস পর । আমরা যাচাই করে দেখি, সে সময় নিউইয়র্ক টাইমস এবং লস এঞ্জেলেস টাইমস-এও খবরটি ছাপা হয়েছিল যে, প্রয়াত সীমান্ত গান্ধীর অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী তাঁর পরিবার এবং মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে পেশোয়ারে যান ।
নীচে ইউনাইটেড প্রেস ইন্টার্ন্যাশনালে প্রকাশিত সংশ্লিষ্ট খবরটির আর্কাইভ বয়ানের একটি অংশ তুলে দেওয়া হলঃ
“প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীই প্রথম ভারতীয় নেতা যিনিগত ২৮ বছরে পাকিস্তান সফর করলেন । তিনি পেশোয়ারে উড়ে আসেন এমন একজনকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে যিনি৪০ বছর আগে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আপসহীন লড়াই চালিয়েছিলেন । ভারতীয় বিমানবাহনীর একটি বিমানে রাজীব তাঁর ইতানীয় স্ত্রী সনিয়া এবং মন্ত্রিসভার কিছু সদস্যকে নিয়ে ইসলামাবাদ থেকে ১০০ মাইল পশ্চিমে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারেঅবতরণ করেন ১২টা ৪৯ মিনিটে ।”
ইউ-টিউবে অন্য একটি কোণ থেকে তোলা একই ঘটনার একটা ভিডিও-ও খুঁজে পাই, যাতে একটা রঙিন ফোটোগ্রাফও রয়েছে ।
সীমান্ত গান্ধী নামে সমধিক পরিচিত খান আবদুল গফ্ফর খান তাঁর পাখতুন জনজাতির জন্য এবং অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতার জন্য ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সংগ্রামের সৈনিক ছিলেন । আক্ষরিক এবং আলঙ্কারিক, উভয় অর্থেই এই নেতা ছিলেন এক দীর্ঘদেহী রাজনীতিক । তিনি ছিলেন মহাত্মা গান্ধীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং তাঁর অহিংসা নীতির একনিষ্ঠ অনুগামী । বেশ কয়েক দশক তিনি ভারত ও পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলে এবং দেশান্তরে নির্বাসিত অবস্থায় কাটান ।
ইন্দিরা গান্ধীর শেষ কৃত্য
ইন্দিরা গান্ধীর শেষ কৃত্য ৩ নভেম্বর, ১৯৮৪ হিন্দু রীতিনীতির মতে পালন করা হয়। ৩১ অক্টোবর, ১৯৮৪ তাঁর দুই দেহরক্ষীর দ্বারা তাঁকে হত্যা করা হয়।
প্রতিবেদনটি আপডেট করা হয়েছে।