তাবরেজ আলম নামে বিহারের এক নিহত বন্দুকবাজের আট মাসের পুরনো শেষযাত্রার ছবিকে এ বছরের ১৮ জুন পোস্টের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে মারা ঝাড়খণ্ডের তাবরেজ আনসারির অন্তিম যাত্রার ভিডিও বলে চালানো হচ্ছে।
তাবরেজ আনসারিকে ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা খরসোয়ান জেলায় গত ১৮ জুন চোর সন্দেহে এক উন্মত্ত জনতা পিটিয়ে হত্যা করে।
তাকে একটা বৈদ্যুতিক পোস্টের সঙ্গে বেঁধে চার ঘন্টা ধরে প্রচণ্ড মারা হয়, ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘জয় হনুমান’ বলতে বাধ্য করা হয়, যতক্ষণ না পুলিশ এসে চুরির অভিযোগে তাকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে নেয়। চার দিন পর ২২ জুন তার মৃত্যু হয়।
তাবরেজ আনসারিকে পোস্টে বেঁধে চার ঘন্টা ধরে লাঠি দিয়ে পেটানোর এবং সেই সঙ্গে তাকে ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘জয় হনুমান’ বলতে বাধ্য করার অস্বস্তিকর ভিডিওটি ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে।
কিন্তু এখন আনসারির সঙ্গে সম্পর্কহীন বহু মানুষের জনাজায় যোগ দেওয়ার একটি ভিডিওকে তার শেষ যাত্রার ছবি বলে প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা, “তাবরেজ আনসারির জনাজা। তাবরেজকে ন্যায়বিচার দেওয়া হোক, দোষীদের ফাঁসিতে ঝোলানো হোক।”
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
এই ভিডিওটি এবং অন্য একটি কোণ থেকে তোলা একই অন্তিমযাত্রার অন্য একটি ভিডিও গত ২৪ ঘন্টায় ফেসবুক ও টুইটারে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম একটি ভিডিও-র খোঁজখবর চালিয়ে দেখেছে, সেটি ২০১৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ইউ-টিউবে আপলোড করা হয়েছিল। ভিডিওটির ক্যাপশন,“তাবরেজের জনাজায় হাজারো মানুষের ভিড়।”
ই-টিভি ভারত-এর শেয়ার করা এই ভিডিওটিতে ইনাডু ইন্ডিয়ার লোগো রয়েছে।
ভিডিওটির হিন্দি ক্যাপশনে ঘটনাটি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য রয়েছে—“জেহানাবাদ: রাষ্ট্রীয় জনতা দলের প্রাক্তন সাংসদ সহাবুদ্দিনের অনুচর বন্দুকবাজ তাবরেজ আলমের (ওরফে তব্বু) মৃতদেহ তার দেশের বাড়ি গরেলিয়া খণ্ড কলোনিতে পৌঁছয়। সেখানকার ইদগায় তার জনাজার নামাজ পাঠ করা হয়। হাজার-হাজার লোক এই উপলক্ষে সমবেত হয়।”
অন্য কোণ থেকে তোলা এবং সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া একই জনাজার অন্য একটি ভিডিওর ক্যাপশনে কিন্তু লেখা রয়েছে: “তাবরেজ আনসারির জনাজা। আল্লা তাকে স্বর্গে স্থান দিন! আমিন!”
ভিডিওটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বুম এই ভিডিওটি ইউ-টিউবে খুঁজে পেয়েছে। একই ঘটনার অনুরূপ একটি ভিডিও ২৩ সেপ্টেম্বর ইউ-টিউবে পোস্ট করা হয় জেহানবাদ নিউজ থেকে।
কে এই তাবরেজ আলম?
তাবরেজ আলম রাজনীতিক সহাবুদ্দিন আনসারির এক প্রাক্তন বন্দুকবাজ। ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর একটি মসজিদ থেকে বের হওয়ার পরেই বাইক-আরোহী দুই ব্যক্তি তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে। স্থানীয় পুলিশ সাংবাদিকদের জানায়, জমিজমা নিয়ে পুরনো বিবাদের জেরেই এই খুন। পাটনা পুলিশের তদানীন্তন এসএসপি মনু মহারাজের সাংবাদিকদের কাছে এ বিষয়ে বক্তব্য পেশ করার এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।
বুম সরাইকেলার পুলিশ সুপারের সঙ্গেও যোগাযোগ করে, যিনি জানান, ঝাড়খণ্ডে গণপ্রহারে নিহত তাবরেজ আনসারির জনাজা ২২ জুন, ২০১৯ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছিল।