এক রোহিঙ্গা কিশোরী, তার কোলে একটি শিশু— ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) নিউজ-এর একটি সংবাদ প্রতিবেদনে প্রকাশিত এই ছবিটির স্ক্রিনশট ভাইরাল হল। সঙ্গে বিপজ্জনক ভুয়ো দাবি— এই মেয়েটির স্বামীর বয়স ৫৪, এবং এখনই তার সন্তানের সংখ্যা দুই।
ছবির সঙ্গে থাকা লেখায় দাবি করা হয়েছে, ‘এই হল ১৪ বছর বয়সী এক রোহিঙ্গা ‘নারী’। তার দুটি সন্তান। স্বামীর বয়স ৫৪। ১৪ বছরেই যার দুটি বাচ্চা হয়ে যায়, সারা জীবনে তার সন্তানের সংখ্যা অন্তত ২০টিতে গিয়ে দাঁড়াবে।’
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনটি হল: 14 सालकीरोहिंग्या“महिला”, नाम: सखराइसके2 बच्चेहै।शौहर54 सालकाहै। * इसके14 सालमें2 बच्चेहै।जीवनभरमेंकमसेकम20 करेगी)
বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরে (৭৭০০৯০৬১১১) এই ছবিটি আসে, সঙ্গে ক্যাপশন: ভারতে মুসলমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির উদ্দেশ্য হল এই দেশটিকে একটি মুসলিম রাষ্ট্রে পরিণত করা। এই দেশের কিছু বিশ্বাসঘাতক নেতা এই কাজে তাদের সাহায্য করছেন। ঠিক সময়ে ব্যবস্থা না নেওয়া গেলে এটি এক মারাত্মক সমস্যার আকার নেবে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আইন তৈরি করুন। ভারতকে একটি শক্তিশালী, সমৃদ্ধ ও সুখী দেশ বানান।
(মূল হিন্দিতে পোস্টটি: देश मे बढ़ती हुई मुस्लिम आबादी, भारत को मुस्लिम राष्ट्र बनाने की ओर बढ़ता हुआ कदम है और हमारे कुछ गद्दार नेता भी इस काम मे उनके साथ हैं। समय रहते इस पर ध्यान न दिया गया तो बहुत ही गम्भीर समस्या हो सकती है। जनसँख्या नियंत्रण कानून बनाओ, देश को सशक्त ,समृद्ध और खुशहाल बनाओ)
ফেসবুকে এই ক্যাপশনটি সার্চ করে আমরা একাধিক পোস্টের সন্ধান পাই, যার প্রতিটিতেই এই ছবিটি শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা বিবিসি নিউজ-এর একটি ভিডিয়োর সন্ধান পাই— ‘In the jungle with Rohingya refugees feeling Myanmar’ ভিডিয়োটি ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ইউটিউবে আপলোড করা হয়েছিল।
ভিডিয়োটিতে বিবিসির প্রতিনিধি সঞ্জয় মজুমদারকে মায়ানমার থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের সঙ্গে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। ছবিটির মেয়েটিকে ভিডিয়োর ২.০৬ মিনিটে দেখা যাচ্ছে। এই ক্লিপে মেয়েটির সম্বন্ধে কোনও কথা উল্লেখ করা হয়নি। ফলে বোঝা যাচ্ছে, তার সম্বন্ধে যে গল্পটি রটানো হচ্ছে, তা মিথ্যে।
আমরা বিবিসির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা জানান, ভিডিয়োটিতে মেয়েটির কোলে যে শিশুটিকে দেখা যাচ্ছে, সেটি তার সন্তান, এমন কোনও ইঙ্গিত তাঁরা এই ভিডিয়োতে দেননি।
বুম-এর প্রশ্নের উত্তরে পাঠানো ই-মেলে বিবিসির মুখপাত্র জানান, ‘বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা প্রথম যে শিবিরটিতে ঠাঁই পান, তার সম্বন্ধে বিবিসির প্রতিবেদনের অপব্যাখ্যা করা হয়েছে এই ভাইরাল পোস্টটিতে। প্রতিবেদনটির কোনও অংশে এমন কোনও ইঙ্গিত করা হয়নি যাতে মনে হতে পারে যে ওই শিশুটি এই কিশোরীটির সন্তান।’
২০১৭ সালে ভারতের সোশ্যাল মিডিয়ায় যখন রোহিঙ্গা-বিদ্বেষ চরমে উঠেছিল, তখন বুম এই ছবিটির তথ্য যাচাই করেছিল, ২০১৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর।
সেই সময় ছবিটি টুইট করেছিলেন রবীন্দর সঙ্গওয়ান নামে এক ব্যক্তি। সঙ্গে ছিল মিথ্যে দাবি যে ১৪ বছর বয়সী এই মেয়েটির বিয়ে হয়েছে ৫৬ বছরের একটি লোকের সঙ্গে, যার ইতিমধ্যেই ছ’জন স্ত্রী ও ১৮টি সন্তান রয়েছে।
রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সব মেসেজ ছড়িয়ে রয়েছে, ইতিপূর্বে বুম তার কয়েকটির তথ্য যাচাই করেছে। (এখানে, এখানে)