দ্য গার্ডিয়ান, এএনআই, ইন্ডিয়া টুডে, হিন্দুস্তান টাইমস এবং জি সালাম সহ বেশ কয়েকটি সংবাদসূত্র ২০১৯ সালের কাবুলের (Kabul) একটি বোমা বিস্ফোরণের পুরনো ছবিকে শেয়ার করে ভুয়ো দাবি করছে যে, এটি কাবুলে এই ২০২২ সালের অগস্টে সংঘটিত বিস্ফোরণের ছবি।
বুম দেখে ছবিটি পুরনো, যখন তালিবান জঙ্গিরা ২০১৯ সালের জুলাই মাসে একটি বন্দুকের লড়াইয়ের পর রাজধানী কাবুলের একটি বাড়িতে আত্মঘাতী বোমারু হামলা চালিয়েছিল।
১৭ অগস্ট ২০২২ কাবুলের একটি মসজিদে সান্ধ্য নামাজের সময় এক বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে। তালিবান গোয়েন্দা সূত্র উদ্ধৃত করে রয়টর্স জানিয়েছে কাবুলের খয়ের খানা এলাকায় বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়। কাবুল পুলিশ জানিয়েছে ওই বিস্ফোরণে ২১ জন লোক নিহত হয়েছে।
বিস্ফোরণের প্রতিবেদন প্রকাশ করে দ্য গার্ডিয়ান একটি ছবি দিয়েছে, যার ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "তালিবান গোয়েন্দা সূত্রে জানানো হয়েছে যে কাবুলের খয়ের খানা অঞ্চলে একটি মসজিদে ওই বিস্ফোরণটি ঘটানো হয়l ছবি টুইটার থেকে।"
সংবাদসংস্থা এএনআই-ও একই ছবি টুইট করে এবং প্রতিবেদন প্রকাশ করে লিখেছে এটি নাকি এক আফগান টুইটার ব্যবহারকারীর কাছ থেকে পাওয়া।
ইন্ডিয়া টুডে পর্যন্ত ঘটনাস্থল থেকে তাদের রিপোর্ট বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এছাড়াও সম্প্রচারের সময় ওই পুরনো ছবিটাই ব্যবহার করে এবং এক রিপোর্টারকে তাতে বলতে শোনা যায়, "যখন কাবুলের মসজিদে এই বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, তখন আমরাই একমাত্র চ্যানেল হিসেবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম।"
টাইমস অফ ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস, জি-সালাম, এবং অর্গানাইজার উইকলিও তাদের রিপোর্টে ভাইরাল হওয়া ওই ছবিটাই ব্যবহার করেছে।
ফেসবুকেও এই ছবিটাই ঘুরছে।
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রদেশে পঞ্চায়েত সচিবকে মারধর ভুয়ো দাবিতে ছড়াল উত্তরপ্রদেশের ভিডিও
তথ্য যাচাই
বুম ছবিটির খোঁজখবর করে ২০১৯ সালের ১ জুলাই ভক্স-এর একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায়, যাতে ওই ছবিটা দিয়ে লেখা হয়েছিল—"আফগানিস্তানের কাবুলে একটি বোমা হামলার পর আক্রান্ত বাড়িটি থেকে উদ্গীর্ণ ধোঁয়ার কুণ্ডলী।"
প্রতিবেদনটিতে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, ছবিটি তারা গেট্টি ইমেজেস নামক আলোকচিত্র সংস্থার কাছ থেকে নিয়েছে। আমরাও অনুসন্ধান করে গেট্টি ইমেজেস-এর ওয়েবসাইটে ছবিটা প্রকাশিত হয়েছে বলে দেখতে পাই।
ছবিটা তুলেছিলেন তুরস্কের সংবাদসংস্থা আনাদোলু-র আলোকচিত্রী হারুন সাবাউন এবং সেটি ২০১৯ সালে আপলোড করার সময় ক্যাপশন দেওয়া হয়, "আফগানিস্তানের কাবুলে ২০১৯ সালের ১ জুলাই এক আত্মঘাতী বোমা-হামলার পর বাড়িটি থেকে ধোঁয়া উঠছেl অন্তত ১০ জন ওই হামলায় নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ৬১ জনl প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি ছাউনির কাছে বন্দুকের লড়াইয়ের পরই বিস্ফোরণটি ঘটানো হয় বলে সরকারিভাবে এবং স্থানীয় সংবাদ সূত্রে জানা গেছে।"
আমরা এরপর ২০১৯ সালে তালিবানি তৎপরতার সংবাদ অনুসন্ধান করতে থাকি। জানা যায়, আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি ঘাঁটির কাছে তালিবানিরা নিশানা করেছিল ১ জুলাইতে। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, "এটা ছিল একটা বহুমুখী হামলা, যাতে গাড়ি-বোমার ব্যবহারও করা হয় এবং জঙ্গিরা মানববোমা হিসাবেও হামলা চালায়। হামলায় অন্তত ৪০ জন নিহত হয়, একটি ব্যক্তিগত যুদ্ধের সংগ্রহশালা, একটি টিভি স্টেশন এবং একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, জখম হয় অনেক পড়ুয়াও।"
একই দিনে প্রকাশিত হয় রয়টর্স-এর একটি প্রতিবেদনও যাতে এক তালিবান জঙ্গিকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়, তারা আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি চৌহদ্দিকে নিশানা করেছিল। রিপোর্টে আরও জানানো হয়, যে বিস্ফোরণে কিছু সরকারি কর্মী, কয়েকজন তালিবান জঙ্গি এবং কিছু নিরস্ত্র সাধারণ নাগরিকও জখম হয়েছিল।
এরপর আমরা ১৭ অগস্ট কাবুলের মসজিদে সংঘটিত বিস্ফোরণের দিকে নজর ফেরাই। দেখি যে, ওই বিস্ফোরণ সংক্রান্ত ছবি অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস তার ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে।
আর তাতেই আমরা বুঝতে পারি, সাম্প্রতিক এই বিস্ফোরণের কোনও ছবিই ভাইরাল হওয়া ছবির সাথে মিলছে না। ঘটনাটির বিষয়ে রয়টর্সের একটি রিপোর্ট নীচে দেখতে পারেন।
আরও পড়ুন: ডিনামাইটে আহত বলিভিয়ার প্রতিবাদী জম্মু-কাশ্মীরের ভিডিও বলে ছড়াল