রকমারি মহার্ঘ্য আসবাব এবং ঘর-সাজানোর জিনিসের ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দাবি করা হচ্ছে যে, এগুলো জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার বাড়ির জিনিস।
ছবিতে রয়েছে সূক্ষ্ম কারুকার্যময় কাঠের নানা আসবাবপত্র।
ফেসবুকে সংশ্লিষ্ট পোস্টটির ক্যাপশন, “প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার নিবাস। আক্ষরিক অর্থেই তিনি সম্ভবত রাজ্যের গোটা অরণ্যসম্পদই ধ্বংস করে ফেলেছেন।”
ফেসবুকে পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে।
২০১৯ সালের ৫ অগস্ট জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নেওয়ার পর থেকেই ওমর আবদুল্লাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।
একই ছবির গুচ্ছ হোয়াটসঅ্যাপেও ভাইরাল হয়েছে একই ক্যাপশন দিয়ে।
বস্তুত, ‘ওমর আবদুল্লার বাংলোয় একটি ঝলক ’ নাম দিয়ে একটি ব্লগ-পোস্টেও একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাক-নেটিজেনরা হিমাচল প্রদেশে আপেল গাছ ধ্বংস করার ভিডিওকে কাশ্মীরের ঘটনা বলে শেয়ার করছে
তথ্য যাচাই
বুম দেখেছে, আসবাবপত্রের এই ছবিগুলি সবই নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে, যেগুলি কাঠের আসবাব বানানোর ‘নিজে করো’ পদ্ধতি প্রচার করে থাকে। আমেরিকার বিভিন্ন কাঠের আসবাব নির্মাতার আসবাবের নমুনার ছবিও তার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
প্রথম ছবি
এই ডাইনিং টেবিলটি পেনকল.কো ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া হয়েছে, যা গৃহসজ্জা এবং আসবাবের বিভিন্ন নমুনা গ্রাহকদের জন্য তুলে ধরেছে, যাতে তাঁরা সেই অনুযায়ী নিজেদের বাড়ির অন্দরমহল সজ্জিত করতে পারেন।
দ্বিতীয় ছবি
এই ছবিটি মার্কিন ওয়েবসাইট টুলক্রাফ্টে আপলোড করা ছিল। এই ডাইনিং টেবিলটি নাকি প্রখ্যাত মার্কিন কাঠশিল্পী এবং আসবাব-নির্মাতা জর্জ নাকাসিমার তৈরি। গত বছর মে মাসে এই ডাইনিং টেবিলের ছবি সহ নিবন্ধটি আপলোড হয়।
তৃতীয় ছবি
বুম খেয়াল করেছে, এই ছবিটিতে ‘ইডেনউড ২০১৪’ এই জলছাপ রয়েছে। খোঁজখবর নিয়ে আমরা দেখলাম মাঝখানে জিপার দিয়ে আটকানো এই টেবিলটি বেশ কিছুকাল ধরেই মার্কিন আসবাব সংস্থা ইডেনউড-এর একটি পেটেন্ট আসবাব।
এই জিপার-টেবিলের একটি ভিডিও গত বছর এপ্রিলে আপলোড হয় ‘কুড়িটি আশ্চর্যজনক কাঠের আসবাব নির্মাণের অনবদ্য শৈলীর অবশ্য দ্রষ্টব্য নমুনা’ হিসাবে।
চতুর্থ ছবি
বুম আউটডোর টেবিলের মাঝে সাকুলেন্ট উদ্ভিদ লাগানো এই ছবিটি খুঁজে পেয়েছে এই ওয়েবসাইটে।
পঞ্চম ছবি
সূক্ষ্মভাবে খোদাই করা এই কারুকার্যময় ডাইনিং টেবিলটির ছবি তার উপরে বাসনপত্র সাজানো অবস্থায় বুম দেখেছে একটি নিবন্ধে, যার শিরোনাম, ‘১৮টি উন্মাদ টেবিল ডিজাইন যা আপনি কখনও দেখতে পাবেন।’ নিবন্ধটি ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে আপলোড হয়েছে এবং এটি খুঁজে পাওয়া গেছে ২০১৩ সালে আপলোড হওয়া ইমগার পোস্টে।
ষষ্ঠ ছবি
বুম দেখেছে, এই ছবিটিতে হ্যালসিয়ান ফার্নিচার লিমিটেডের জলছাপ রয়েছে এবং এটি ওই সংস্থার সরকারি ফেসবুক পেজে গত বছর জানুয়ারিতে পোস্ট করা হয়।
সপ্তম ছবি
বুম দেখেছে, এই চমকপ্রদ ডিজাইনটাও একটি ওয়েবসাইটে আপলোড করা আছে তাদের জন্য, যারা নিজেদের বাড়ি সাজাতে রকমারি জিনিস লাগায়। এটিও আপলোড হয় গত বছর জানুয়ারি মাসে।
অষ্টম ছবি
ঘোড়ার পায়ের নালের আকারের এই মোমবাতি-স্ট্যান্ডটিও বুম একটি ‘নিজে করো ওয়েবসাইটে’ দেখতে পেয়েছে। গত বছর জুনে এটি সাইটে আপলোড হয়েছিল।
নবম ছবি
বিয়ের সময় কাপ-কেক বসানোর এই স্ট্যান্ডের ছবিটাও বুম ফেসবুক পেজে আপলোড হতে দেখেছে গত বছর মে মাসে।
দশম ছবি
এই শৌখিন কাঠের আসবাবটিরও ছবি বুম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ওয়েবসাইট উডল্যান্ড ক্রিকে খুঁজে পেয়েছে, যেটি ৪১৯৫ ডলার দরে বিক্রি হয়।
একাদশ ছবি
এই কাঠের ঘড়িটির নির্মাতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানার এক সংস্থা ট্রিমেন্ডাস ডিজাইন্স। এই একই ঘড়ির ছবি এখানেও দেখতে পারেন।
দ্বাদশ ছবি
বুম রান্নাঘরে লাগানোর উপযোগী এই কাউন্টার-টপটির ছবিও একটি ওয়েবসাইটে আপলোড হতে দেখেছে ২০১১ সালের মার্চ মাসে।
ত্রয়োদশ ছবি
এই কাঠের টেবিলটির ছবিও একটি ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া, যারা হাতে-তৈরি কাঠের রকমারি শৌখিন আসবাব বানায়।
ভাইরাল হওয়া পোস্টটিতে বেশ কিছু বিলাসবহুল হোটেলের ছবিও দেওয়া হয়েছে, যেগুলিকে ওমর আবদুল্লার বাসস্থান বলে ভুলভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বুম এই ভুয়ো দাবির পর্দাফাঁস আগেই করেছে।
আরও পড়ুন: এগুলো কি জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীদের বাড়ি? একটি তথ্য যাচাই