পাকিস্তানের নূর খান বিমান ঘাঁটি বলে ভাইরাল সুদানের বিমানবন্দরের ভিডিও
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিওটি সুদানের খারটুম বিমানবন্দরের যা বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ভিডিওর সঙ্গে ভারত-পাক সংঘাতের কোনও সম্পর্ক নেই।



অপারেশন সিঁদুর (Operation Sindoor) পরবর্তী সংঘাতে, ভারতের (India) প্রত্যাঘাতে পাকিস্তানের (Pakistan) রাওয়ালপিন্ডির নূর খান বিমান ঘাঁটিতে (Nur Khan airbase) হওয়া ক্ষতির দৃশ্য ভুয়ো দাবি করে একটি অসম্পর্কিত ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।
বুম দেখে ভিডিওটি সুদানের এবং ২০২৫ সালের অন্তত মার্চ মাস থেকে ইন্টারনেটে রয়েছে।
১০ মে, ২০২৫-এ ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই সীমান্ত এলাকায় হামলা ও পাল্টা হামলা পুনরায় শুরু হয়। এক্ষেত্রে, উভয় দেশই একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে।
সাম্প্রতিক একটি সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় সেনা রাওয়ালপিন্ডির নূর খান বিমান ঘাঁটি আক্রমণ করার কথা জানায়।
এই প্রেক্ষাপটে, নূর খান বিমান ঘাঁটি বলে সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে একটি তিন মিনিটের ভিডিও যেখানে রানওয়েতে বিমানের ধ্বংসাবশেষ দেখা যায়।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, “পাকিস্তানের নূর খান এয়ারপোর্টের অর্ধশ্রাদ্ধ দেখুন পরের পর দেখতে থাকুন অপারেশন সিঁদুরে পাকিস্তানের ধ্বংসস্তূপ।”
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ভিডিও সুদানের খারটুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের, রাওয়ালপিন্ডির নূর খান বিমান ঘাঁটির নয়।
আমরা ভিডিওর কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে নিশ্চিত হই ভিডিওটি অন্তত ২০২৫ সালের মার্চ মাস থেকে ইন্টারনেটে রয়েছে অর্থাৎ চলতি মাসে হওয়া অপারেশন সিঁদুর ও নূর খান বিমান ঘাঁটিতে ভারতীয় আক্রমণের আগে থেকেই।
সার্চের মাধ্যমে আমরা ইউটিউবে ২ এপ্রিল, ২০২৫ তারিখে আপলোড করা ভাইরাল দৃশ্যসহ একটি দীর্ঘতর ভিডিও খুঁজে পাই। ভিডিওটির ক্যাপশনে দাবি করা হয় দৃশ্যগুলি "আরএসএফ যোদ্ধাদের দ্বারা ভাঙচুর হওয়া খারটুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অবস্থার।”
আমরা ইউটিউব ভিডিওতে বেশ কয়েকটি সংকেত পেয়েছি যা ইঙ্গিত করে দৃশ্যমান বিমানবন্দরটি সুদানের খারটূম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের।
আমরা বিমানবন্দরের একটি জায়গায় “টারকো” নামটি লেখা দেখতে পাই এবং অনুসন্ধান করে দেখি একই নামের একটি সুদানীয় বিমান সংস্থা রয়েছে। এছাড়াও, ভিডিওতে একটি বিমানের পিছনে 'সুদান' শব্দটি লেখা দেখা যায়।
আমরা ভিডিও সহ সবচেয়ে পুরনো পোস্ট ইনস্টাগ্রামে পাই যা ৩১ মার্চ, ২০২৫-এ আপলোড করা হয়েছে।
এছাড়াও, ২৬ মার্চ, ২০২৫-এর একাধিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায় সুদানের সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) খারটুমের রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ ও বিমানবন্দর এবং রাষ্ট্রপতি প্রাসাদ সহ বেশিরভাগ জায়গা থেকেই আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সকে (আরএসএফ) বিতাড়িত করে। প্রতিবেদন অনুসারে সুদানের সশস্ত্র বাহিনী এবং র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের মধ্যে যুদ্ধ ১৫ এপ্রিল, ২০২৩-এ শুরু হয়েছিল। প্রতিবেদনের শেষে জানা যায় এসএএফ বিমানবন্দরের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে।
এছাড়াও, বুম ওপেন-সোর্স তদন্তের বিশেষজ্ঞ বেঞ্জামিন স্ট্রিকের সাথে যোগাযোগ করে, যিনি খারটুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভাইরাল ভিডিওটি জিও লোকেট করেন। তার অনুসন্ধানে একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত বিমান দেখা যায় যা ৩০ নভেম্বর, ২০২৪-এর স্যাটেলাইট ছবিতে অক্ষত ছিল।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির স্যাটেলাইট ছবিতে, বিমানটিকে ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় দেখা যায় যা ইঙ্গিত করে ভাইরাল ভিডিওটি সম্ভবত ২০২৪ সালের ৩০ নভেম্বরের পরে এবং ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে তোলা হয়েছিল। দুটি ছবির তুলনা দেখুন নীচে।
বুম স্বাধীনভাবে ভাইরাল ভিডিওর ঘটনা যাচাই করতে সক্ষম হয়নি। তবে, আমরা নিশ্চিত হয়েছি ঘটনাস্থল খারটুম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, পাকিস্তানের নূর খান বিমান ঘাঁটি নয়।