ত্রিপুরার সাম্প্রদায়িক হিংসার সঙ্গে জোড়া হল পুরনো সম্পর্কহীন ছবি
বুম দেখে একটি ছবি ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে গুয়াহাটিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের, বাকি দুটি ছবিও পুরনো।
সম্পর্কহীন তিনটি পুরনো (Old Image) ছবির একটি কোলাজ সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে ত্রিপুরায় হওয়া সাম্প্রদায়িক (Tripura Violence) হিংসার সাথে যোগ করা হচ্ছে।
২৬ অক্টোবর ২০২১ বাংলাদেশের সম্প্রদায় হিংসার বিরুদ্ধে উত্তর ত্রিপুরার পানিসাগরে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ মিছিল বার করে। পরে ওই মিছিল থেকে একদল দুস্কৃতকারী দোকানপাট ও বাড়িতে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। মসজিদেও হামলা চালানো হয় বলে সংখ্যালঘু সংগঠগুলির দাবি। এরই প্রেক্ষাপটে ছবিগুলি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে।
ফেসবুক পোস্টে শেয়ার করা কোলাজের প্রথম ছবিতে দেখা যায় রাস্তায় প্রতিবাদে আগুন জ্বালানো হচ্ছে। দ্বিতীয় ছবিতে অগ্নিকাণ্ডে দমকলকর্মীদের আগুন নেভাতে দেখা যায়। তৃতীয় ছবিতে দেখা যায় দুই ব্যক্তি কোরান হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
ছবিগুলি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "ত্রিপুরা মুসলমানদের জন্য দোয়া করুন সবাই। ভারতের একটি ছোট্ট অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরা। ত্রিপুরায় এখন পর্যন্ত ১৬ টি মসজিদে আগুন এবং অনেক ঘর বাড়িতে আগুন লাগিয়েছে। ত্রিপুরার মুসলিমদের জন্য দোয়া করুন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে মুসলমানদের ওপর বেশ কিছুদিন ধরে হামলা চলছে। মুসলিমদের বহু বাড়িঘর, দোকানপাট ও ১২টি মসজিদ পুড়িয়ে দিয়েছে কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী জনগোষ্ঠী ও বজরং দলের লোকেরা। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পা চাটা গোদী মিডিয়া আর ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর কথা বাদ দিলাম। মুসলিম রাজনৈতিক নেতারাও ত্রিপুরা সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। জানেন তো আজ পবিত্ৰ জুম্মাহর দিন ! বাদ আছরে দোয়া কবুল হবার মুহুর্ত,এই সময়টুকুতে বেশি বেশি দোয়া করি আল্লাহর কাছে ! নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড় দেন কিন্ত ছেড়ে দেন না !"
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
একই দাবি সহ এই তিনটে ছবি ফেসবুকে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় হিংসা বলে ছড়াল পুলিশের 'জয় শ্রীরাম' ধ্বনির পুরনো ভিডিও
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ছবিগুলি পরস্পর সম্পর্কহীন এবং পুরনো। ছবিগুলি সঙ্গে ত্রিপুরার সাম্প্রদায়িক হিংসার কোনও সম্পর্ক নেই।
প্রথম ছবি
বুম রিভার্স সার্চ করে দেখে রাস্তায় জনতার আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদের ছবিটি ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর ইন্ডিয়া টুডের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "বুধবার রাজ্যসভায় পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে গুয়াহাটিতে বিক্ষোভকারীদের জ্বালিয়ে প্রতিবাদ।" ছবির সূত্র হিসেবে সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
১২ ডিসেম্বর ২০১৯ প্রকাশিত ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে বলা হয় ২০১৯ সালে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে অসম ও ত্রিপুরার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের জেরে দুই রাজ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ছবি
দমকল কর্মীদের আগুন নেভানো ও দুই ব্যক্তির হাতে ধরা পুড়ে যাওয়া কোরানের ছবি দুটি ২০২১ সালের জুন মাসে দিল্লির এক রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।
টুইটারে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে আমরা সাংবাদিক আসিফ মুজতাবার একটি টুইটের খুঁজে পাই। ওই টুইটে তিনি জানান, ২০২১ সালের জুন মাসে দিল্লির কাঞ্চন কুঞ্জ এলাকায় এক রোহিঙ্গা শিবিরে একটি অগ্নিকাণ্ডের সময় ভাইরাল ছবিগুলি তোলা হয়েছিল।
তিনি টুইটে লেখেন, "এই ছবিগুলি নতুন দিল্লির কাঞ্চন কুঞ্জে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা, ত্রিপুরার নয়। এই বছর জুন মাসে @miles2smile যখন ত্রাণ কাজ শুরু করেছিল তখন আমরা এই ছবিগুলি পেয়েছি৷ দয়া করে ভুল তথ্য শেয়ার করবেন না৷ "
তিনি আরও লেখেন এই ছবিগুলি নতুন দিল্লির ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক মহম্মদ মেহেরবানের তোলা।
বুম সাংবাদিক আসিফ মুজতাবার সঙ্গে কথা বললে তিনি আমাদের একই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি আরও বলেন যে, ছবিতে যে দুই ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, তাঁরা দিল্লির ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু।
আসিফ মুজতবা একই ছবি ২০২১ সালের ১৩ জুন ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন। সেই ছবি ও র্তমানে ভাইরাল হওয়া ছবি হুবহু এক।
বুম কোরান পুড়ে যাওয়ার এই ছবিটি স্বতন্ত্রভাবে তথ্য-যাচাই করেছে।
আরও পড়ুন: ২০১৯ সালে মোদীর জনসভার ছবি অসমে বাংলাদেশের হিংসা বিরোধী প্রতিবাদ বলে ছড়াল