২০১২ সালে সুদানে দূতাবাসে হামলাকে ফরাসি দূতাবাসের উপর হামলা বলা হল
মার্কিন ফিল্মে ইসলামের সমালোচনা করার জন্য ২০১২ সালে সুদানের খার্তুমে পশ্চিমা দেশগুলির দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ হয়েছিল তখন।
সুদানে জার্মান দূতাবাসের সামনে এক বিক্ষোভের ৮ বছরের পুরনো ভিডিও সে দেশে ফরাসি দূতাবাসের বাইরে সাম্প্রতিক বিক্ষোভের ভিডিও বলে চালানো হচ্ছে।
১৬ অক্টোবর ২০২০ তে, স্যামুয়েল প্যাটি নামের এক ফরাসি স্কুল শিক্ষকের শিরচ্ছেদ করার পরিপ্রেক্ষিতে ক্লিপটি শেয়ার করা হচ্ছে। প্যাটি তাঁর ক্লাসের ছাত্রদের মহম্মদের একটি কার্টুন ছবি দেখিয়ে ছিলেন বলে, চেচেন বংশোদ্ভূত এক ইসলামি চরমপন্থী প্যাটির মাথা কেটে দেয়া। বলা হচ্ছে, কার্টুন ছবিগুলি কিছু লোককে আঘাত করেছিল।
বাকস্বাধীনতাকে সমর্থন করে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাকরঁ ইসলামি চরমপন্থীদের সমালোচনা করার সঙ্গে সঙ্গে আরও বলেন যে, প্রফেট মহম্মদের কার্টুন আাঁকা বন্ধ করা হবে না। মাকরঁর এই মন্তব্যের প্রতিবাদে, অনেক মুসলমান সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী ফরাসি দ্রব্য বয়কটের ডাক দেন।
ভাইরাল ক্লিপটিতে বিক্ষোভকারীদের একটি বাড়ির গেট ভাঙ্গতে ও রাস্তায় জিনিসপত্র পোড়াতে দেখা যাচ্ছে।
হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন সহ ক্লিপটি শেয়ার করা হচ্ছে। ক্যাপশানটিতে বলা হয়েছে, "মুসলমানরা সুদানের ফরাসি দূতাবাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। হে অত্যাচারী, বিশ্বের মুসলমানদের ওপর তোমাদের অত্যাচার ও তাদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক কার্যকলাপ সহ্য করা যেতে পারে, কিন্তু আমাদের নবীর কোনও অবমাননা আমরা বরদাস্ত করতে রাজি নই। তা তোমরা আমাদের সন্ত্রাসবাদী বা জেহাদি, যাই বল না কেন।"
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ফেসবুকে ভাইরাল
একই ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করলে দেখা যায়, ক্লিপটি একই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে।
বৃহঃস্পতিবার দক্ষিণ ফ্রান্সের নিসে অপরিচিত সন্দেহভাজনের হাতে ঐতিহাসিক নতরদাম গির্জায় এক মহিলাকে গলা কেটে খুন করা হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও দুজন। ফ্রান্সের প্রশাসন এটিকে সন্ত্রাসবাদী হামলা হিসেবেই দেখছে।
আরও পড়ুন: ২০১৯ সালে মধ্যপ্রদেশে নারী নির্যাতনের দৃশ্য উত্তরপ্রদেশের বলে ভাইরাল
তথ্য যাচাই
ভিডিওটির প্রধান ফ্রেমগুলি আলাদা করে আমরা গুগুলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তার ফলে, বেশ কিছু সংবাদ প্রতিবেদন বেরিয়ে আসে। তাতে দেখা যায়, ক্লিপটি সুদানের। ২০১২ তে একটি মার্কিন ফিল্মে ইসলামের সমালোচনা করা হয় বলে, সুদানের রাজধানী খারতুমে বিক্ষোভকারীরা জার্মান দূতাবাসের ওপর চড়াও হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের মত পশ্চিমি দেশগুলির দূতাবাসও আক্রান্ত হয়।
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২ তে প্রকাশিত জার্মান খবরের কাগজ 'ডের থেগেসস্পিগেল'-এর একটি রিপোর্টও আমাদের নজরে আসে। ভাইরাল ক্লিপটিতে যা দেখা যায়, ওই সংবাদপত্রে প্রকাশিত ছবিতেও একই দৃশ্য দেখতে পাই আমরা। রিপোর্টটিতে বলা হয় যে, ইসলাম সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ফিল্মের বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাতে গিয়ে, মারমুখী বিক্ষোভকারীরা জার্মান দূতাবাসের ওপর চড়াও হয়ে সেটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১২ তে প্রকাশিত ডিডাব্লিউ'র রিপোর্টে বলা হয়: শুক্রবার, জার্মান ও ব্রিটিশ দূতাবাসের দিকে ধেয়ে যাওয়া ৫০০০ হামলাকারীকে বাধা দিতে সুদান পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। তা সত্ত্বেও, কিছু বিক্ষোভকারী গেট পেরিয়ে জার্মান এমব্যাসির মধ্যে ঢুকে পড়তে সক্ষম হয়।
ওই রিপোর্টে আরও বলা হয় যে, বিক্ষোভকারীরা খার্তুমে অবস্থিত আরও দু'টি কেন্দ্রকে লক্ষ করে পাথর ছোঁড়ে। তারপর তারা জার্মান দূতাবাসে ঢুকে, বাড়ির সামনেটা ভাঙচুর করে, জার্মান পতাকা নামিয়ে সেখানে কালো ইসলামি পতাকা ওড়ায় ও বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
ওই রিপোর্টে আরও বলা হয় বেসরকারি প্রযোজনায় তৈরি মার্কিন ছবিটিতে নবী মহম্মদকে লম্পট, সমকামী ও শিশু নিগ্রহকারী হিসেবে দেখানো হয়। আর সেটাই বিক্ষোভের কারণ।
ডিডাব্লিউ'র রিপোর্ট দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
ওই ঘটনার ওপর, আমরা সিএনএন-এর একটি ভিডিও প্রতিবেদনও দেখি। তাতেও ভাইরাল ক্লিপটির মত একই ছবি দেখানো হয়। আর সংবাদে বলা হয়, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২ তে সুদানের খার্তুম শহরে, বিক্ষোভকারীরা সুরক্ষা বলয় ভেঙ্গে জার্মান দূতাবাসে ঢুকে পড়ে।
প্যারিসে ফরাসি শিক্ষক হত্যা সংক্রান্ত ভুল খবর আমরা আগেও নস্যাৎ করি। সেটিতে সম্পর্কহীন ভিডিও আর ছবি শেয়ার করে মিথ্যে খবর ছড়ানো হচ্ছিল।
আরও পড়ুন: ইমানুয়েল মাকরঁর মন্তব্যের জেরে ফ্রান্সের জাতীয় দল ছাড়েননি পল পোগবা