ভুয়ো ভারতীয় পাসপোর্ট সহ ধৃত বাংলাদেশিদের ৪ বছরের পুরনো ভিডিও জিইয়ে উঠল
ভিডিওটি এতই পুরনো যে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরেও সেটি দেখা গেছে এবং সম্ভবত ভিডিওটি কুয়েতের।
দুটি লোক তাদের জুতোর শুকতলায় লুকিয়ে রাখা বাংলাদেশি পাসপোর্ট বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে দেখাচ্ছে, এমন একটি চার বছরের পুরনো ভিডিও নাগরিকত্ব সংশোধন আইন-বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শেয়ার করা হচ্ছে।
১ মিনিট ৩১ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বাদামি রঙের জ্যাকেট পরা একটি লোক তার জুতোর শুকতলা থেকে একটা লুকনো বাংলাদেশি পাসপোর্ট বের করে বিমানবন্দরের কর্মকর্তাকে দেখাচ্ছে। গোলাপি জামা পরা অন্য একজনও একই ভাবে তার জুতোর লুকনো স্থান থেকে আর একটি পাসপোর্ট বের করে দেখাচ্ছে, যখন ক্যামেরা ঘুরে গিয়ে দেখাচ্ছে, টেবিলের উপর একটি ভারতীয় পাসপোর্টও পড়ে আছে। গোটা ভিডিও জুড়েই এক ব্যক্তিকে আরবি ভাষায় ওই দুই জনকে নির্দেশ দিতে শোনা যাচ্ছে।
Bangladeshi nationals traveling with Indian passports arrested at Saudi Airport.
— Santh Kumar Gogikar (@santhgogikar) December 19, 2019
This is the reason why we need CAA
The ACT came for National benefit while traitors made it communal.
SHAME on the protestors!#IndiaSupportsCAA#CAASupportpic.twitter.com/ksxscnKAJ1
টুইটটি দেখা যাবে এখানে। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ভিডিওটি এই দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে যে, এই দুই বাংলাদেশি নাগরিক জাল ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে ঘোরার সময় সৌদি আরবের বিমানবন্দরে গ্রেফতার হয়।
এটিকে সাম্প্রতিক ঘটনা বলে দাবি করা হচ্ছে এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-বিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সঙ্গের ক্যাপশন: "ঠিক এই জন্যই আমাদের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন দরকারl জাতির উপকারের জন্যই আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে, কিন্তু বিশ্বাসঘাতকরা এটিকে সাম্প্রদায়িক বানিয়েছে। ধিক প্রতিবাদীদের!"
Bangladeshi nationals traveling with Indian passports arrested at Saudi Airport, they are hiding their original Bangladeshi passports in their shoes.
— Meenakshi 🇮🇳 (@Meenu_71) December 18, 2019
SHAMELESS Indians who are protesting against CAB should watch this. pic.twitter.com/AlsKG3mlEL
টুইটটি দেখা যাবে এখানে। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
একই ক্যাপশন দিয়ে আমরা ফেসবুকেও খোঁজ লাগাই এবং দেখি, সেখানেও এটি ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যাচাই
আমরা ভিডিওটিকে মূল কয়েকটি ফ্রেমে ভেঙে রুশ সার্চ ইঞ্জিন ইয়ানডেক্স মারফত সন্ধান করে দেখি, এই ভিডিওটি ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে অর্থাত্ অন্তত চার বছর আগে থেকে অনলাইনে রয়েছে।
২০১৫ সালের ২৪ ডিসেম্বর ইউটিউবে আপলোড হওয়া ভিডিওটির ক্যাপশন আরবি থেকে অনুবাদে দাঁড়ায়—সৌদি আরবের কাস্টমস নিয়ন্ত্রণ। (অরবিতে মূল শব্দ: ضبط الجمارك السعوديه)
তবে 'ভুয়ো', 'পাসপোর্ট', 'ভারতীয়'—এই শব্দগুলো বসিয়ে তল্লাশি করে আমরা আরও পুরনো ১৭ ডিসেম্বরের একটি ভিডিওর খোঁজ পাই, যার ক্যাপশনে লেখা: "জাল ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশি কুয়ায়েতে ঢুকছে।"
এই ভিডিও থেকে কুয়ায়েতের সূত্র পেয়ে আমরা গুগল-এ খোঁজ লাগালে আরব টাইমস অনলাইন নামের একটি ওয়েবসাইটে একটি প্রতিবেদনের সন্ধান পাইl প্রতিবেদনটির শিরোনাম: ভুয়ো ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে ঢুকতে গিয়ে অনেক বাংলাদেশি গ্রেফতার। তাতে লেখা— জাল ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করলে অভিবাসন অফিসাররা অনেক বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছেন। প্রতিবেদনটি তার উৎস হিসাবে আল-শাহাদ দৈনিকের উল্লেখ করে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওয় যে ধরনের ঘটনা ধরা রয়েছে, প্রতিবেদনটিতে সে রকম কিছু নজিরও তুলে ধরা হয়l বলা হয়, সন্দেহভাজন এই লোকগুলিকে আগেও বহিষ্কার করা হয়েছিল। এখন যখন আবার তারা জাল ভারতীয় পাসপোর্ট দেখিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে, তখন তাদের গ্রেফতার করা হয়l তল্লাশি চালিয়ে তাদের জুতোর শুকতলা থেকে তাদের বাংলাদেশি পাসপোর্টগুলো উদ্ধার করা হয়। আল শাহেদ দৈনিককে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, লোকগুলিকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বরে কুয়েত রিপোর্টার নামে একটা ফেসবুক পেজ-এরও আমরা সন্ধান পেয়েছি, যাতে ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি পোস্ট হয়েছে। পোস্টটির ক্যাপশন: "বাংলাদেশিরা কুয়ায়েতে ঢুকছে ভারতীয় পাসপোর্ট নিয়ে।" মূল ক্যাপশন: "Bangladeshi Entered in Kuwait with Indian Passport #Kuwait بنغالي يدخل الكويت بجواز هندي مزور"
বুম আলাদা করে তদন্ত করে নিশ্চিত হতে পারেনি যে, ভিডিওটি কুয়ায়েতের, নাকি সৌদি আরবের ঘটনারl তবে একটা ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, ভিডিওটি ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে অনলাইনে রয়েছে এবং একেবারেই সাম্প্রতিক কোনও ঘটনা নয়, যা নাকি ভাইরাল পোস্টগুলিতে দাবি করা হয়েছে।
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি সংসদে পাস হয়েছে এবং গত সপ্তাহে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সেটি অনুমোদনও করেছেনl এই আইনটি দেশ জুড়ে বিতর্ক ও আন্দোলনের জন্ম দিয়েছেl আইন অনুযায়ী ৬টি অ-মুসলিম সম্প্রদায়ের অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ প্রশস্ত ও ত্বরান্বিত করা হয়েছে। বিরোধীরা যেখানে আইনটিকে বৈষম্যমূলক আখ্যা দিয়েছে, সরকার সেখানে এটিকে মানবিক বলে দাবি করেছে, যা অসহায় উদ্বাস্তুদের অধিকার ও স্থায়ী ঠিকানা পেতে সাহায্য করবে।