তবলিগি জামাত সদস্য আইসোলেশান ওয়ার্ডে উলঙ্গ হয়ে ছুটছে, এই ভিডিওটি অসত্য
বুম দেখে ভিডিওটি ২০১৯ সালের অগস্ট মাসের। পাকিস্তানের করাচিতে মানসিক ভারসাম্যহীন এক রোগী একটি মসজিদের ভিতর ঢুকে পড়েছিল।
পাকিস্তানের করাচিতে মসজিদের ভিতর উলঙ্গ অবস্থায় এক মানসিক রোগীর ছোটাছুটি করার অস্তস্তিকর এক ভিডিওকে ভুয়ো বিবরণী সহ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা হচ্ছে যে, এটি উত্তরপ্রদেশে কোভিদ-১৯ আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশান ওয়ার্ডের দৃশ্য, যেখানে তবলিগি জামাতের এক সদস্য এই কর্মটি করে।
২৮ সেকেন্ডের এই ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি ক্রমাগত নিজের মাথায় আঘাত করছে, কাচের দরজা ভেঙে দিচ্ছে এবং একটি বাড়ির ভিতর ছুটে বেড়াচ্ছে, যখন আশপাশে দাঁড়ানো লোকেরা চিত্কার করছে।
মিথ্যে করে ভিডিওটির ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে: "উত্তরপ্রদেশে আইসেলেশানে এক জামাতি!"
আরও পড়ুন: মিথ্যা: ভিডিও দেখায় করোনাভাইরাস ছড়াতে মুসলিমরা বাসনকোসন চাটছে
ভিডিওটি দৃষ্টিনান্দনিক নয় বলে বুম এটিকে প্রতিবেদনের অন্তর্ভুক্ত না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভিডিওটি দেখা যাবে এখানে। ভিডিওটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
শুধু টুইটারেই নয়, ফেসবুকেও এই একই ভিডিওটি ভুয়ো হিন্দি ক্যাপশন সহ ছড়িয়েছে। ক্যাপশনটি অনুবাদ করলে দাঁড়ায়: "তবলিগি জামাতের লোকেরা অশ্লীলতা ও আতঙ্ক সৃষ্টি করছে...নিভৃতবাসে গোলমাল করছে...জামাকাপড় খুলে উলঙ্গ নৃত্য করছে... প্রশাসন তো জেরবার...।"
(মূল হিন্দিতে পোস্ট: तबलीगी जमात के लोगों ने अश्लीलता और आतंक मचा रखा है...... कोरोंनटाइन में जमकर किया हंगामा. सरम नाम की सारी हदें कर दी पार. खेला नंगा नाच. वीडियो हुवा वाइरल प्रशासन है इन लोगो से परेशान)
ফেসবুকে ভাইরাল
তথ্য যাচাই
আমরা ভিডিওটিকে মূল কয়েকটি ফ্রেমে ভেঙে নিয়ে রুশ সার্চ ইঞ্জিন ইয়ানডেক্স-এর সাহায্যে সন্ধান চালিয়ে দেখি, ভিডিওটি বেশ পুরনো, গত বছরের অগস্ট মাসের।
ভিডিওর দৃশ্যটি পাকিস্তানের করাচির, যেখানে এক মানসিক রোগী সহসা একটি মসজিদের ভিতর ঢুকে পড়ে তাণ্ডব চালায় এবং ঘটনাটি ঘটে ২০১৯ সালের অগস্ট মাসে।
২০১৯ সালের ৪ নভেম্বরে ভিডিওটি একটি ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছিল।
দৃশ্যটি খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে আমরা দেখতে পাই, বাড়িটির মেঝেতে সবুজ গালিচা পাতা এবং আশপাশে মুসলমানি টুপি পরা লোকজন, যা দখে আমাদের অনুমান, ঘটনাটি একটি মসজিদের ভিতর ঘটছে।
এর পর আমরা "মসজিদে উলঙ্গ মানুষ"—এই শব্দগুলি বসিয়ে ইউটিউবে খোঁজ করি এবং দীর্ঘতর একটি ভিডিওর খোঁজ পাই, যেটি পাকিস্তানের করাচির একটি ঘটনার।
২ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের এই দীর্ঘতর ভিডিওটি ইউটিউবে আপলোড করে টপ ট্রেন্ডস নামে একটি চ্যানেল, ২০১৯ সালের ২৫ অগস্ট, ক্যাপশন দেওয়া হয়: "করাচির গুলশন-ই-হাদিদ মসজিদে এক উলঙ্গ ব্যক্তির প্রবেশ।"
দীর্ঘতর ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, উলঙ্গ ব্যক্তিটি মসজিদে প্রবেশ করার আগে একজন মোটরসাইকেলে করে তাকে অনুসরণ করছে। উর্দু থেকে অনুবাদ করা ভিডিওটির ভাষ্যের বয়ান এই রকম: "গুলশন-ই-হাদিদ দ্বিতীয় পর্যায় রোডে আহলে-ই-হাদিথ গোষ্ঠীর খালিদ-বিন-ওয়ালিদ মসজিদে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি জোর করে ঢুকে পড়ে কাচের দরজা ভাঙচুর করে ইমামের আবাসে প্রবেশ করে।"
একই উর্দু ক্যাপশন ব্যবহার করে আমরা ২৩ অগস্টের আরও পুরনো একটি ভিডিও পাই পাকিস্তান টুডে ওয়েব-টিভির ফেসবুক পেজে, যেখানে উল্লেখ করা হয়, উলঙ্গ ওই ব্যক্তিটিকে শফিক আব্রো বলে শনাক্ত ও গ্রেফতার করেছে করাচির স্টিল টাউন পুলিশ, এবং খবরে প্রকাশ, সে একজন মানসিক রোগী।
আমরা ওই একই ব্যক্তির অন্য একটি ভিডিও দেখতে পাই, যাতে লোকটি রক্তাক্ত অবস্থায় একটি ভ্যানের ভিতর পড়ে রয়েছে এবং তার চারপাশে মাছি ভনভন করছে। লোকটি যেন প্রলাপের ঘোরের মধ্যে রয়েছে। অল্টনিউজ আগেই এই ভুয়ো দাবিটির পর্দাফাঁস করেছে।
গত মাসের শুরুতে দিল্লিতেতবলিগি জামাতের সম্মেলনে যোগ দেওয়া কয়েকজনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটার পর দেশ জুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়কে নিশানা করে যে ভুয়ো খবরের বান ডেকেছে, এটি তার মধ্যে সাম্প্রতিকতম।
আরও পড়ুন: খাবারের দোকানে কর্মীর খাবারের মোড়কে ফুঁ দেওয়ার এই ভিডিওটি ভারতের নয়
মার্চ মাসের শুরুতে আরম্ভ হওয়া এই সম্মেলন ২৪ মার্চ ঘোষিত লকডাউনের আগেই সাঙ্গ হয়েছিল। ভারতের বাইরে থেকেও প্রতিনিধিরা ওই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন এবং বেশি লোকর একত্র সমাবেশের উপর কড়াকড়ি চালু হওয়া সত্ত্বেও দেশের অনেক প্রান্তেই বড়-বড় সমাবেশ আয়োজিত হয়। এখন ভারত সরকার এবং মূল ধারার সব বৃহৎ গণমাধ্যমেই সম্মেলনের আয়োজকদের নিশানা করে চলেছে।