ভারতীয় সেনাকে নিশানা করতে ১২ বছরের পুরনো একটি নেপালের ছবির ব্যবহার হল
বুম দেখে ছবিটি ১২ বছরের পুরনো ২০০৮ সালের, যখন তিব্বতি শরণার্থীদের সঙ্গে নেপালের পুলিশের মোকাবিলা চলছিল।
এক দশকেরও পুরনো একটি ছবি, যেখানে নেপালি পুলিশকে এক প্রতিবাদী তিব্বতি মহিলার টি-শার্টের হাতা ধরে টানাটানি করতে দেখা যাচ্ছে, সেটিকে জিইয়ে তুলে দাবি করা হচ্ছে যে, ভারতীয় সেনা অসমের এক আন্দোলনকারী মহিলাকে নিগ্রহ করছে।
বুম দেখেছে, আসলে ছবিটি ২০০৮ সালের মার্চের, যখন কাঠমান্ডুতে তিব্বতি শরণার্থীদের চিন-বিরোধী প্রতিবাদ তুঙ্গে উঠেছিল।
জাতীয় নাগরিকপঞ্জি এবং নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে প্রতিবাদের মধ্যে এই ছবিটি তার ভুল ব্যাখ্যা সহ ভারতীয় সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।
ছবিটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে: 'আজ যদি এটা অসমের পরিস্থিতি হয়, তবে আগামীতে এই দৃশ্যই দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশেও দেখা যাবে। দিল্লিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষই বসবাস করে, তারা কেমন করে তাদের কাগজপত্র দেখাবে?'
তামিলনাড়ু কংগ্রেসের সংখ্যালঘু বিভাগের সভাপতি জে আসলম বাসা এই ছবিটি শেয়ার করেছেন। সঙ্গের ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন: 'কাশ্মীরে কী ঘটেছে? আজ অসমে কী ঘটছে?'
পরে অবশ্য তিনি টুইটটি মুছে দিয়েছেন। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম টিনআই নামে একটি ছবি যাচাইয়ের সার্চ-ইঞ্জিন মারফত ছবিটির অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, এটি পোস্ট হয়েছে ২০০৮ সালের ২৪ মার্চ।
টিন-আই আমাদের পৌঁছে দেয় অ্যাডোব স্টকে। যেখানে মূল ছবিটিকে আমরা ছবিটি খুঁজে পাই। এটি রয়টার্সের ছবি, যা তুলেছিলেন আলোকচিত্রী দীপা শ্রেষ্ঠা।
ছবিটির বিবরণীতে লেখা: "২০০৮ সালের ২৪ মার্চ এক তিব্বতি প্রতিবাদিনী কাঠমান্ডুতে রাষ্ট্রপুঞ্জের ভবনের সামনে পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছেন। সোমবার নেপালি পুলিশ তিব্বতি শরণার্থীদের একটি চিন-বিরোধী সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরপর ঘটতে থাকা এই বিক্ষোভ-প্রতিবাদের সর্বশেষ জমায়েত থেকে ২৫০ জনেরও বেশি প্রতিবাদীকে গ্রেফতার করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, প্লাস্টিকের ঢালে সজ্জিত পুলিশ প্রতিবাদীদের টেনে-হিঁচড়ে একটি লোহার জালে ঘেরা ভ্যান ও ট্রাকে তুলে আটক-কেন্দ্রে নিয়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা ধৃতদের বেশ কয়েকজনকে আহত হতেও দেখেছেন। রয়টার্স/ দীপা শ্রেষ্ঠা।.."
বুম একই দিনের (২৪ মার্চ, ২০০৮) রয়টার্সের একটি সংবাদ প্রতিবেদনের খোঁজ পেয়েছে।
চিন-বিরোধী বিক্ষোভ দমন করতে গিয়ে নেপালের পুলিশ কাঠমান্ডুতে ২৫০ জন তিব্বতি শরণার্থীকে গ্রেফতার করেছিল। চিনে ওই বছর অনুষ্ঠিত বেজিং অলিম্পিক গেমস-এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত সংগঠিত করতে তিব্বতি শরণার্থীরা ওই সপ্তাহে একের পর এক বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন।
রয়টার্স রিপোর্ট করে, ''নেপালি পুলিশ চিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভরত তিব্বতি শরণার্থীদের দমন করতে ২৫০ জনকে গ্রেফতার করেl তাদের টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায় প্লাস্টিকের ঢালে সজ্জিত লাঠিধারী পুলিশ এবং লোহার জালে ঘেরা ভ্যান ও ট্রাকে তুলে আটক-কেন্দ্রের দিকে নিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।''
বিক্ষোভকারীরা কাঠমান্ডুতে অবস্থিত রাষ্ট্রপুঞ্জের দফতরের দিকে যাত্রা করতেই পুলিশ তৎপর হয়।
এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।