নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনে হিন্দুর বেশে মুসলিম রাজনীতিক?
হিন্দু প্রতিবাদী আসলে একজন ছদ্মবেশী মুসলিম রাজনীতিক বলে যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে, সেটি ভুয়ো।
![নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনে হিন্দুর বেশে মুসলিম রাজনীতিক? নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনে হিন্দুর বেশে মুসলিম রাজনীতিক?](https://bangla.boomlive.in/h-upload/2019/12/21/821900-821819-sahiba-khan.webp)
অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন-এর (এআইএমআইএম) নেত্রী সাবিহা খান হিন্দু সেজে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে যোগ দিয়েছে বলে যে সচিত্র পোস্ট সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, সেটি ভুয়ো।
পোস্টটিতে দুটি ছবি পাশাপাশি সাজানো হয়েছে— প্রথমটি এক প্রতিবাদী মহিলার, যিনি হিন্দিতে লেখা একটি পোস্টার ধরে আছেন, যাতে লেখা: আমি স্বাতী এবং আমি ভারতের সংবিধানের পক্ষে। ভারত বনাম হিন্দুত্ব। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নয়, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি নয়। দ্বিতীয় ছবিটি সাবিহা খানেরl নীচে দুজনের তুলনা করে দেখা যেতে পারে।
প্রতিবাদী মহিলা স্বাতী এবং এআইএমআইএম-এর কার্যকর্তা সাবিহা দুজনেই স্বীকার করেছেন, ছবি দুটি তাঁদেরই, যদিও সাবিহা এখন আর সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত নন।
দুটি ছবিকে পাশাপাশি সাজিয়ে ভাইরাল পোস্টে লেখা হয়েছে: "ভীত হয়ে খাতুন কি নিজের অন্য নামও রাখতে পারবে না? এ কেমন স্বৈরতন্ত্র?"
বিদ্রূপাত্মক এই দাবিটির মাধ্যমে ইঙ্গিত করা হচ্ছে যে, সাবিহা খান তাঁর নিজের নাম পাল্টে স্বাতী হয়েছেন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে যোগ দিতে গিয়ে।
বুম এই পোস্টটির একটি লিংক পেয়েছে তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে (৭৭০০৯০৬১১১), যেটি এখানে দেখা যেতে পারে, তবে সেই লিংক অনুসরণ করে ফেসবুকের একটি পোস্টেও পৌঁছে গেছে।
বুম দেখেছে, পোস্টটি সত্যিই ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
প্রাসঙ্গিক কয়েকটি মূল শব্দ বসিয়ে আমরা টুইটারেও খোঁজ করি এবং সেখানেও পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে দেখতে পাই:
अब डरी हुई खातून खुद का फर्जी नाम भी नही रख सकती क्या?
— Dr. Tariq (@Tariqhiarami) December 17, 2019
क्या तानाशाही है मान्यवर! Mudi shud resign 🤣🤣🤣 pic.twitter.com/NWmzYNSYcv
अब डरी हुई खातून खुद का फर्जी नाम भी नही रख सकती क्या...?? 👇👇
— T C Meena 🇮🇳 (@jhanjhat) December 17, 2019
क्या तानाशाही है मान्यवर .... !!#HinduphobicJamia #IsupportCAB2019 pic.twitter.com/aYa94XgMqI
নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনটি সংসদে অনুমোদিত হয় এবং গত সপ্তাহে তাতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের স্বাক্ষরও মেলে। অনেকের কাছেই এটি বিতর্কের বিষয় হয়ে ওঠে এবং ছাত্রযুবকরা বিশেষ করে দেশজুড়ে এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে। আইনে শরণার্থী হয়ে ভারতে প্রবেশ করা ৬টি অ-মুসলিম সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকত্ব প্রাপ্তির প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবাদীদের মতে এই আইন বৈষম্যমূলক, আর সরকারের অভিমত হলো এটা একটি মানবিক আইন, যা যাদের কোথাও যাওয়ার নেই, সেই অসহায় উদ্বাস্তুদের সাহায্য করবে।
তথ্য যাচাই
সাবিহার সঙ্গে স্বাতীর ছবির তুলনাটা নতুন কিছু নয়। এর আগেও গণপিটুনিতে হত্যার প্রতিবাদের সময় সাবিহা খানের ছবি নিয়ে এমন কাণ্ড হয়েছে।
অতীতেও এ ধরনের তুলনাত্মক পোস্টের পর্দাফাঁস করা হয়েছে।
বুম এই ছবিটির বিষয়ে স্বাতীর সঙ্গে যোগাযোগ করে (তাঁর অনুরোধেই তাঁর পদবি এখানে উহ্য রাখা হলো)। উনি নয়াদিল্লিতে থাকেন। উনি জানেন যে, ওঁকে সাবিহা খান বলে চালানো হচ্ছে। তিনি গত ৯ জুলাই পুলিশের কাছে করা একটি লিখিত অভিযোগের প্রতিলিপিও বুমকে দেখান, যাতে তাঁর পরিচয় নিয়ে জট পাকানোর কথা বলা রয়েছে।
বুম এ ছাড়াও এআইএমআইএম-এর এক কর্মকর্তার সঙ্গেও যোগাযোগ করে এবং তাঁকে এই দুটি ছবি ও পোস্ট দেখানো হয়। তখন তিনি বুমকে জানান: "সাবিহা খান ২০১৭ সালের মুম্বই পুরসভার নির্বাচনের সময় তাঁদের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এখন আর দলের সঙ্গে তাঁর কোনও সংশ্রব নেইl তিনি অবশ্য এখনও দলের প্রতীক ব্যবহার করে চলেছেন।"
তা ছাড়া, সাবিহা খানের বর্তমান কার্যকলাপ কী, সে সম্পর্কেও একটা ধারণা এই ফেসবুক পেজ থেকে পাওয়া যায়। এই পেজটি ২ লক্ষের বেশি 'লাইক' পেয়েছে।
সাবিহার সঙ্গেও বুম যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়াও বুম নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-বিরোধী প্রতিবাদ-আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি ভুয়ো খবরের পর্দাফাঁস করেছে।