বিভ্রান্তিকর দাবি সহ ছড়াল মাছের ডিমে নিমাটোডস সংক্রমণের পুরনো ছবি
বুম যাচাই করে দেখে ইন্দোনেশিয়ায় ফেসবুকে ছবিগুলি ভাইরাল হয়েছিল ২০২০ সালের এপ্রিলে, সামুদ্রিক মাছের ডিমে এই সংক্রমণ হয়।
ইন্দোনেশিয়ার সোশাল মিডিয়ায় পেজে ভাইরাল হওয়া পুরনো ৩ টি সম্পর্কহীন এক সেট ছবি নতুন করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। রসনা সংক্রান্ত বাংলা ফেসবুক গ্রুপে ওই ছবিগুলি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সেগুলি মাছের ডিমের গায়ে কৃমি।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবি তিনটির একটিতে মাছের ডিমের গায়ে কালচে লালাভ ধমনি-উপধমনি। অন্য ছবিটিতে দেখা যায় আকার পরিবর্তন করা ডিমের গায়ে থকথক করছে লালচে কৃমির মত জীব। আর তৃতীয় ছবিটিতে দেখা যায় বেসিনের পাশে জড়ো করা হয়েছে সেই সব লালাভ কৃমি আকৃতির জীব।
ছবিগুলি শেয়ার করে ফেসবুকে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, ''অনেক সময় মাছের ডিমের ভিতরে এমন কালো কালো ছাপ দেখা যায়, এই গুলো আসলে কৃমি এমন দাগ দেখলে সেগুলো ফেলে তবেই মাছের ডিম খান। এমন আরো তথ্য পেতে যুক্ত হন আমাদের গ্রুপে Bhoj Adda"
তথ্য যাচাই
বুম রিভার্স সার্চ করে দেখে ছবিগুলি ২০২০ সালের এপিল মাসে ইন্দোনেশিয়ার একাধিক ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে ভাইরাল হয়েছিল। সেখানে দাবি করা হয় মাছের ডিমে নাকি মিলেছে ওই পরজীবী।
কি বলছেন বিশেষজ্ঞ
বুম ছবিগুলি মাছের স্বাস্থ্য ও পরজীবী বিশেষজ্ঞ প্রবীনরাজ জয়াসিমহানকে দেখায়। প্রবীনরাজ আইসিআর-কেন্দ্রীয় অন্তর্দেশীয় কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী। তিনি বলেন, ''সামুদ্রিক মাছের ডিমে ফাইলোমেট্রা প্রজাতির নিমাডোটস বাসা বাঁধতে পারে। খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। তবে এটি কোন মাছ এভাবে দেখে বলা সম্ভব নয়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় কাঁচা মাছ দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার খাওয়ার রীতি আছে তা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।''
বুম ২০১৫ সালে ফ্লোরিডা ফিস অ্যান্ড ওয়াইল্ড লাইফ কমিশনের তোলা এরকমই একটি মাছের ডিমে ফাইলোমেট্রা সংক্রমণের ছবি খুঁজে পেয়েছে। আফ্রিকা উপকূলের সমুদ্রে মাছের ডিমে ফাইলোমেট্রা সংক্রমণ বিষয়ক একটি গবেষণা পত্র পড়া যাবে এখানে।
থাই বিশেষঞ্জরা কাঁচা মাছের খাবার খাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন আগেই। জাপানে প্রচলন রয়েছে 'শুশি' নামের কাঁচা মাছের পদ। থাইল্যান্ড, লাউস, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, চিন ও কোরিয়াতে বিভিন্ন গ্রাম্য এলাকার নদীর জলের মাছেও 'ফ্লুক' নামে একধরণের পরজীবীর সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়। এগুলি লিভার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। বিস্তারিত পড়ুন ২০০৭ সালে প্রকাশিত রয়টর্সের প্রতিবেদন।
বুম পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎসবিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যপক তপন কুমার ঘোষের সঙ্গে কথা বললে তিনি বুমকে জানান, ''মাছের ডিম তো ভারতে কাঁচা খাওয়া হয়না। পরিপাক করে খাওয়া হয়। তবে যিনি খাচ্ছেন তাঁর সচেতন হওয়া জরুরি কেমন মাছ খাচ্ছেন তিনি।''
বুম আগে মাছের শরীরে মরফিন ভাইরাস বলে নিমাডোটস জাতীয় প্রাণীর বিভ্রান্তিকর গুজবের তথ্য-যাচাই করেছিল। বিভ্রান্তিকর ভিডিও ছড়িয়ে বলা হয়েছিল বিষ্ণুপুর মহাকুমা হাসপাতালে অসুস্থ হয়ে অনেকে ভর্তি হয়েছেন।
আরও পড়ুন: আসানসোল পৌরনিগম সাইনবোর্ডে বাংলা ব্রাত্য? জিইয়ে উঠল কাটছাঁট করা ছবি