অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিককে কৃষক বিক্ষোভে আহত প্রতিবাদী বলা হল
বুম দেখে ওই অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিক হলেন ক্যাপ্টেন পিপিএস ধিলন যিনি কৃষকদের প্রতিবাদে সামিল হননি।
একজন প্রাক্তন সেনা অফিসার ও কৃষক আন্দোলনে আহত এক প্রতিবাদী কৃষকের ছবি এক সঙ্গে শেয়ার করা হচ্ছে এবং দাবি করা হচ্ছে যে তাঁরা একই ব্যক্তি। ওই কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে যে, একজন সেনা অফিসারও পুলিশের মারের হাত থেকে রেহাই পাননি।
প্রথম ছবিতে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর শিখ রেজিমেন্টের পোশাক পরিহিত এক বয়স্ক শিখ ভদ্রলোককে দেখা যাচ্ছে। তাঁর সামনে রাখা একটি কেকের ওপর তাঁর নাম, ক্যাপ্টেন পিপিপি ধিলন লেখা আছে। দ্বিতীয় ছবিটি হল এক বয়স্ক শিখ বিক্ষোভকারীর। তাঁর চোখে আঘাত লেগেছে।
বুম ধিলনের ছেলে সুখবিন্দর সিংহয়ের সঙ্গে কথা বলে। উনি বলেন, দ্বিতীয় ছবিতে যে বয়স্ক ও আহত ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, তিনি তাঁর বাবা নন। সুখবিন্দর বলেন, তাঁর বাবা পঞ্জাবের পাট্টিতে রয়েছেন। কৃষকদের প্রতিবাদ আন্দোলনে তিনি নেই।
কৃষক আন্দোলন সম্পর্কে ভুয়ো খবর ছড়াতেই, মিথ্যে দাবি সমেত ওই ছবি দু'টি শেয়ার করা হচ্ছে। ওই আন্দোলনে পঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে কৃষকরা দিল্লির দিকে পদযাত্রা করেন। ২৭ নভেম্বর ২০২০ তে, দিল্লি-হরিয়ানার সিঙ্গু সীমান্তে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষ বাধে। কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে পঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে কয়েক হাজার কৃষক এখনও রাজধানী দিল্লির দিকে চলেছেন। ৬ ডিসেম্বর ২০২০ কৃষকদের আন্দোলন ১২ দিনে প্রবেশ করল।
আরও পড়ুন: না, এটি কৃষি বিল বিরোধী বিক্ষোভে নাজির মহম্মদের শিখ সাজার ভিডিও নয়
ছবিগুলির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়, "এই ফটোগুলি একই ব্যক্তির। যখন তিনি সেনা অফিসার ছিলেন, তখন ওরা তাঁকে স্যালুট করত। তিনি যখন কৃষক হয়ে যান, তখন তারা চেন দিয়ে তাঁর চোখে আঘাত করে। কী লজ্জার এই ভারত সরকার। #ফারমারপ্রোটেস্ট।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
(অনুবাদ: দু'টো ছবি একই ব্যক্তির। সীমান্তের রক্ষক। অবসর নেওয়ার পর কৃষক হয়ে যান। এবং অধিকার রক্ষায় কৃষকদের সঙ্গে আছেন। ইনি হলেন পিপিএস ধিলন সাহেব। আইটি সেল-এর জন্য উনি অবশ্য খালিস্তানি)
পোস্টটি দেখার জন্য ক্লিক করুন এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
(হিন্দি বয়ান - दोनों तस्वीरें एक ही इंसान की हैं. सीमा के रक्षक की भी और रिटायर होने के बाद किसानों के साथ किसान होकर हक़ के लिए सड़क पर उतरने वाले की भी । पी पी एस ढिल्लों साहेब हैं ये। ITCell वालों के लिए ये खालिस्तानी हैं।)
ফেসবুকে ভাইরাল
একই ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে সার্চ কেরলে দেখা যায়, ওই ছবির সেটটি, একই মিথ্যে দাবি সমেত সেখানেও ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: ২০১৯ সালে তোলা ৩৭০ ধারার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ছবি জুড়ল কৃষক আন্দোলনে
তথ্য যাচাই
বুম দেখে দু'টি ছবিতে যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁরা একই ব্যক্তি নন। যে সেনা অফিসারকে দেখা যাচ্ছে, আমরা তাঁকে ক্যাপ্টেন পিপিএস ধিলন হিসেব শনাক্ত করতে পারি। আমরা আরও জানতে পারি যে, ছবিটি ২৯ নভেম্বর তোলা হয় এবং জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর ছেলে সেটি পোস্ট করেন।
কেকের ওপর তাঁর নাম লেখা ছিল 'ক্যাপ্টেন পিপিএস ধিলন'। ওই নামটিকে কি-ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করে আমরা ফেসবুকে সার্চ করি। দেখা যায়, ২৯ নভেম্বর, ২০২০তে ওই একই ছবি 'শিখ মিলিটারি হিস্ট্রি ফোরাম' নামের একটি ফেসবুক পেজে পোস্ট করা হয়। সুখবিন্দর সিংহ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে সেটি পোস্ট করা হয়েছিল। সুখবিন্দর সিং উবোকে-র সরপঞ্চ। ওই পোস্টে উনি বলেন তিনি তাঁর বাবা পৃথিপাল সিংহ ধিলনের জন্মদিন উদযাপন করছেন। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৭ শিখ রেজিমেন্ট থেকে উনি ১৯৯৩ সালে অবসর নেন।
বুম সুখবিন্দর সিংহয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে উনি বলেন, দ্বিতীয় ছবিতে যে বয়স্ক ও আহত ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, উনি ওনার বাবা নন। "এটা ভুয়ো। উনি আমার বাবা নন। ২৯ নভেম্বর, ২০২০তে আমার বাবার জন্মদিনে, আমি কেক সমেত ওনার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করি। সেটির অপব্যবহার হয়েছে। উনি পাট্টিতে নিজের বাড়িতে আছেন। কৃষকদের প্রদিবাদে যোগ দিতে উনি দিল্লি যাননি," বুমকে বলেন সুখবিন্দর।
পোস্টটি দেখুন এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আমরা দেখি, সুখবিন্দর বাবার সঙ্গে নিজের প্রায় একই রকম অন্য একটি ছবি পোস্ট করেন। সেটি থেকে স্পষ্ট হয় যে, তাঁর বাবাকে ভাইরাল ছবিতেও দেখা যাচ্ছে। ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, "আজ আমার বাবা সম্মানীয় ক্যাপ্টেন পৃথিপাল সিংহ ধিলনের জন্মদিন। ১৯৯৩ সালে অবসর নেন। ১৭ শিখ রেজিমেন্ট থেকে। যে সেনারা ১৯৬৫ ও ১৯৭১-এর যুদ্ধে অংশ নেন, উনি তাঁদের মধ্যে একজন। অপারেশন শ্রীলঙ্কায়ও ছিলেন। ভগবান আপনাকে আশির্বাদ করুন, বাবা।"
পোস্টটি দেখার জন্য ক্লিক করুন এখানে, পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আমরা সুখবিন্দর সিংহয়ের মন্তব্যও দেখতে পাই। ভাইরাল ছবিতে যে আহত ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, তিনি ওনার বাবা নন বলেই জানান সিংহ। উনি আরও বলেন, তাঁর বাবা বাড়িতে আছেন এবং বিক্ষোভে সামিল হননি।
আহত বয়স্ক ব্যক্তির ছবিটি ২৯ নভেম্বর, ২০২০ থেকে সোশাল মিডিয়ায় ছড়াতে থাকে।
ওই আহত প্রবীণের একটি ক্লিপ অন্য এক ব্যক্তি ২৯ নভেম্বর ২০২০তে টুইট করেন। ক্লিপটিতে ওই প্রবীণকে কথা বলতে দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ২০১৮ সালের ছবিকে মিথ্যে করে বলা হল কৃষক বিক্ষোভের ছবি