সম্পাদনা করা একটি গ্রাফিক ছবিতে দিল্লিতে প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারাডের দুটি ছবি ভুয়ো বিভ্রান্তিকর বর্ণনা দিয়ে ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে। বিভ্রান্তিকর পোস্টে দুটো ট্যাবলোর ছবির তুলনা করে বলা হচ্ছে কংগ্রেসের আমলে জিহাদি টিপু সুলতানকে নিয়ে ট্যাবলো বানানো হত, এখন প্রধানমন্ত্রী মোদীর আমলে রাম মন্দির নিয়ে ট্যাবলো হয়।
বুম যাচাই করে দেখে, যে ট্যাবলোকে টিপু সুলতানের ট্যাবলো বলা হয়েছে সেটি ২০১১ সালে ৬২ তম প্রজাতন্ত্র দিবসে বিহারের ট্যাবলো ছিল যার বিষয়বস্তু ছিল পটনার অদূরে অবস্থিত সুফি তীর্থ মানের শরিফ, এটি টিপু সুলতানের উপর তৈরী ট্যাবলো নয়।
প্রজাতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে দিল্লিতে প্রতি বছর বিশেয় প্যারাড, অস্ত্র প্রদর্শনী এবং ট্যাবলোর আয়োজন করা হয়ে থাকে। তাই আসন্ন, ৭১ তম সাধারনতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে দিল্লিতে এবারও প্রদর্শনীর আয়োজোন করা হয়েছে, যদিও এই বছর প্রজাতন্ত্র দিবসে কোনও মুখ্য অতিথি উপস্থিত থাকবেন না। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উপস্থিত থাকার কথা ছিল কিন্তু নয়া কোভিড সংক্রমণ দেখা দেওয়ায় জনসন এবার অতিথি হয়ে আসছেন না ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের তরফে আগেই জানানো হয়। এবার প্রজাতন্ত্র দিবসে ১৭ টি রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল, নয়টি মন্ত্রীসভার দপ্তর ও ছয়টি প্রতিরক্ষা বিভাগ থেকে মোট
৩২ টি ট্যাবলো থাকবে। এবার উত্তরপ্রদেশের
ট্যাবলোর বিষয়বস্তু ছিল অযোধ্যার ঐতিহ্য এবং রাম মন্দিরের একটি প্রতিরূপ।
এরই প্রেক্ষিতে ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর পোস্টটি করা হয়েছে। গ্রাফিক পোস্টের বাম দিকে দেখা যায় একটি ট্যাবলো যার বিষয়বস্তু হচ্ছে মুসলমান ধর্মীয় সংস্কৃতি বিষয়ক প্রদর্শনী। গ্রাফিকের ডান দিকে রয়েছে নির্মীয়মান রাম মন্দিরের প্রস্তাবিত প্রতিরূপের একটি মডেল।
এই গ্রাফিকে লেখা রয়েছে, "'দেশ বদলাচ্ছে মিত্র,' কংগ্রেস শাসনে প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলো, জিহাদি টিপু সুলতান, বিজেপির শাসনে প্রজাতন্ত্র দিবসের ট্যাবলোতে রাম মন্দির, এভাবেই একদিন সমগ্র ভারতে হিন্দুত্বের আধিপত্য স্থাপন হবে এবং তা করবেন স্বয়ং মোদি জী।"
পোস্ট দেখা যাবে
এখানে। আর্কাইভ করা আছে
এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল হওয়া গ্রাফিক পোস্টের দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ২০১১ সালে ৬২ তম প্রজাতন্ত্র দিবসে বিহার রাজ্যের তরফে ট্যাবলো করা হয় সুফি তীর্থ মানের শরিফ। এটি টিপু সুলতানের ট্যাবলো নয়।
বুম '
republicday.nic.in' ওয়েবসাইট থেকে ২০১১ সালের ৬২ তম প্রজাতন্ত্র দিবসে দিল্লির অনুষ্ঠানের আর্কাইভ থেকে বিহারের এই ট্যাবলোটি খুঁজে পায়। ওই ভিডিওতে ১ ঘণ্টা ৩৪ মিনিট ৫৬ সেকেন্ড থেকে প্রায় ২ মিনিট বিহারের ট্যাবলো প্রদর্শিত হয়, ভাষ্যকার মানের শরিফের ঐতিহ্য ও ঐতিহাসিক বর্ণনা দেন, তারপর বেজে উঠে আমির খুসরুর দোহা 'ছাপ তিলক সব ছিনি রে।'
নিচে 'রিপাবলিক ডে এনআইসি ইন' ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া সম্প্রচারিত ভিডিওর অংশ দেওয়া হল।
বুম গেট্টি ইমেজের সংগ্রহেও ২০১১ সালের সাধরনতন্ত্র দিবসের বিহারের ট্যাবলোর ছবি খুঁজে পায়। গেট্টি ইমেজের সংগ্রহে এই ট্যাবলোর অন্য ছবিগুলি দেখা যাবে
এখানে , এখানে।
মানার শরিফ
পটনা শহর থেকে
মানের শরিফ ভারতের অন্যতম সুফি তীর্থ। সুফি সন্ত মকদুম ইহায়া মানেরির সমাধি সৌধ যা 'বড়ি দরগা' ও তাঁর অনুগামী মকদুম শাহ দৌলতের সমাধি যা 'ছোটি দরগা' নামে পরিচিত। শাহ দৌলত ১৬০৮ সালে মারা যান। বিহারের শাসক ইব্রাহিম খান কাকার ১৬১৬ সালে তাঁর স্মৃতিতে এখানে সমাধি সৌধ স্থাপন করেন।
গঙ্গা, শোন ও ঘঘরা নদী মিশে একমাত্র সচল ত্রিবেনী সঙ্গম রয়েছে এই শহরেই। সংস্কৃত ভাষা ও ব্যাকরণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের আঞ্চলিক পীঠস্থান ছিল মানের শরিফ। সংস্কৃত ব্যাকরণের রূপকার পন্ডিত পাণিনি এখানে অধ্যয়ন করেন।