২০১৭'য় বিহারের (Bihar) পূর্ণিয়ায় এক ব্যক্তি তাঁর স্ত্রীর মৃতদেহ মোটরসাইকেলে করে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন, এমনই এক ছবি গুজরাতের (Gujarat) কোভিড-১৯-এর (COVID19) ধাক্কার দৃশ্য বলে শেয়ার করা হচ্ছে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এক ব্যক্তি মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন আর পেছনে যিনি বসে আছেন তিনি এক মহিলার মরদেহ ধরে আছেন।
ভারতে কোভিড-১৯ ভাইরাসের বিধ্বংসী দ্বিতীয় হানার পরিপ্রেক্ষিতে ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে। বেশ কয়েক দশকে ভারত এমন স্বাস্থ্য সঙ্কটের সম্মুখীন হয়নি। অতিমারির ধাক্কা সারা দেশেই অনুভূত হচ্ছে। শ্মশানে জমে উঠছে শব। হাসপাতালের সামনে দেখা যাচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সের লম্বা লাইন। এই মারাত্মক দ্বিতীয় হানার মোকবিলা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ফ্রান্স ও ব্রিটেন সহ প্রায় ১৫ টি দেশ আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ব্যবহারের জন্য জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম ভারতে পাঠাচ্ছে।
ভাইরাল ছবিটির সঙ্গে দেওয়া বাংলা ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "বাবা আর ছেলে মিলে মায়ের মৃতদেহ বহন করে নিয়ে যাচ্ছে - সোনার গুজরাট তোফা ফেকুজী তোফা এনারা আবার সোনার বাংলা করবে। ছিঃ ছিঃ ধিক্কার (মানবতার গর্ব মমতা)।"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন; আর্কাইভ দেখতে এখানে।
সতর্ক বার্তা: অস্বস্তিকর ছবি
টুইটারে ছবিটি একটি হিন্দি ক্যাপশন সহ শেয়ার করা হচ্ছে। তাতে লেখা হয়েছে, "ডিজিটাল ইন্ডিয়ায় বুলেট ট্রেন। মোদী একটা শয়তান। কৃষকরা কষ্ট পাচ্ছেন। নো অক্সিজেন, নো ভোট।"
(ক্যাপশনটির হিন্দি বয়ান: "बूलेट ट्रेन" वाला डिजिटल इंडिया... #मोदी_शैतान_भुगतें_किसान #No_Oxygen_No_Vote")
টুইটটির আর্কাইভ দেখুন এখানে।
আরও পড়ুন: বিজেপি প্রার্থী সুকুমার রায়ের মন্তব্য বলে বিকৃত সংবাদের ছবি ভাইরাল
তথ্য যাচাই
বুম ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। তার ফলে, ৪ জুন ২০১৭'য় হিন্দুস্থান টাইমস'এ প্রকাশিত একটি খবর আমাদের নজরে আসে। তাতে ওই একই ছবি ছাপা হয়েছিল। ঘটনাটি বিহারের পূর্ণিয়ায় ঘটে। সেখানে বাবা ও ছেলে মিলে ছেলের স্ত্রীর মরদেহ মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যেতে বাধ্য হন, কারণ তাঁদের কোনও শবযান দেওয়া হয়নি।
ওই রিপোর্টে বলা হয. "বাবা শঙ্করনাথ শাহ ও ছেলে পাপ্পু দু'জনেই পাঞ্জাবে দিন মজুরের কাজ করতেন। সেখানে তাঁরা সুশীলার অসুস্থতার খবর পান। দেশে ফিরে তাঁরা সুশীলাকে পূর্ণিয়া সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে তিনি মারা যান। 'আমার স্ত্রীর মৃত্যু হলে, আমাকে তাঁর দেহ নিয়ে যেতে বলা হয়। আমার স্ত্রীর মরদেহ আমার গ্রামে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা শবযানের জন্য অনুরোধ করি। তখন আমাকেই তার ব্যবস্থা করতে হবে বলে বলা হয়', জানান শাহ। তাঁরা একটি অ্যাম্বুলেন্সের চালকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ২,৫০০ টাকা চেয়ে বসেন। সেই টাকা দেওয়ার সামর্থ ছিল না তাঁদের।"
পাপ্পু তাঁর স্ত্রীর দেহ মোটরসাইকেলে বসান আর তাঁর বাবা পেছনে বসে সেটিকে ধরে থাকেন। সেই ভাবে তাঁরা মরদেহটি তাঁদের গ্রামে নিয়ে যান।
একই ঘটনাটি সম্পর্কে 'এশিয়ান এজ' ও 'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস'এ প্রকাশিত রিপোর্ট এখানে ও এখানে দেখতে পাবেন। এই ভাইরাল ছবিটি ২০১৭'য় তোলা। ঠিক এই রকমই একটা ঘটনা অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামেও ঘটেছিল। সেখানেও এক মহিলার মরদেহ মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যাওয়া হয়, কারণ কোনও অ্যাম্বুলেন্স যেতে রাজি হয়নি। সে বিষয়ে পড়ুন এখানে ও এখানে।
আরও পড়ুন: অক্সিজেন প্ল্যান্টের জন্য রাজ্যগুলি কী পিএম কেয়ার্স থেকে টাকা পেয়েছিল?