২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের (Bangladesh) টঙ্গিতে বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের (clash) ছবিকে সে দেশের সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়। ফেসবুক পোস্টে নাবালকের ছবি শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে ইসলামপন্থী মাদ্রাসা শিক্ষক ও ছাত্রদের সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের শিশুদের মোদী বিরোধী বিক্ষোভে ব্যবহার করছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) শুক্রবার ও শনিবার দু'দিনের সফরে বাংলাদেশে যান। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের সূচনা সহ একাধিক অনুষ্ঠানে সামিল হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই সফরকে ঘিরে মূলত হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে মোদী বিরোধী প্রতিবাদে (Protest) অংশ নেয় ইসলামিক সংগঠনগুলির একাংশ। চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে বিক্ষোভকারীদের। বিক্ষোভ পরে হিংসাত্মক রূপ নেয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এপর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। রবিবার ব্রাহ্মণবাড়়িয়াতে বনধ্ ডাকা হয়। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে জানাচ্ছে গণমাধ্যম প্রথম আলো। ভাইরাল হওয়া ছবিটি এই প্রেক্ষিতেই ছড়ানো হচ্ছে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে দেখা যায় লাঠিসোটা ও ইঁট পরে রয়েছে রাস্তার উপর। কাঁদতে থাকা এক নাবালক মাদ্রাসা পড়ুয়ার সঙ্গে এক নিরাপত্তাক্ষীকে কথা বলতে দেখা যায়। ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "এই অবুঝ বাচ্চাটিকে মাঠে নামিয়েছে মামুনুল আর হেফাজতিরা। অথচ মামুনুল হকের ৩ সন্তানের কেউই মাঠে নেই, ওরা নিরাপদে ঘরে রয়েছে। মাঠে নেই জুনাইদ বাবু নগরীরও কোনো ছেলে। এইরকম অবুঝ বাচ্চাদেরও হেফাজত খারাপ স্বার্থে ব্যবহার করছে। এতিম বাচ্চাদের কে মাদ্রাসায় পড়ানোর জন্য দিয়েছেন, আর তারা করাচ্ছে ভিহ্মা, আর সেই টাকার জুরে আজ এই হরতাল।"
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
অন্যান্য ফেসবুক ব্যবহারকারীরাও এই ছবিটিতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাম্প্রতিক ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করেছেন।
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: ২০১৯ সালে উত্তরপ্রদেশে আহত বালকের ছবি ছড়াল বাংলাদেশ পুলিশের মার বলে
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ছবিটি বাংলাদশে ইসালামিক সংগঠনের সাম্প্রতিক হিংসার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। বুম ছবিটিকে গুগলে রিভার্স সার্চ করে দেখে ভাইরাল ছবিটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের টঙ্গীতে হওয়া তাবলিগ জামাতের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের সময়ের।
সে সময় আমাদের সময় ডট কম, ডেইলি বাংলাদেশে ও আলোর পরশ প্রভৃতি স্থানীয় ওয়েব গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে ভাইরাল ছবিটি প্রকাশিত হয়।
ঢাকা ট্রিবিউনে ১ ডিসেম্বর ২০১৮ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ব ইজতেমা অয়োজনকে কেন্দ্র করে তাবলিগ জমাতের দুই সংগঠনের মতাদর্শগত বিরোধের জেরে টঙ্গী এলাকায় দু'পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় নিহত হয় ১ ব্যক্তি। দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে আহত হয় প্রায় ২০০ জনের বেশি। বিষয়টি নিয়ে যুগান্তরের প্রতিবেদন পড়া যাবে এখানে।
বুম টঙ্গীর এই সংঘর্ষের ঘটনার বিক্ষিপ্ত ভিডিও নিয়ে একাধিকবার তথ্য-যাচাই করেছে। টঙ্গীর ওই সংঘর্ষের দৃশ্য শেয়ার করে ২০১৯ সালে দাবি করা হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে দাঙ্গার ঘটনা। ২০১৮ সালে টঙ্গীর ওই ঘটনার আরেকটি ভিডিও ২০২০ সালে ছড়ানো হয়েছিল দিল্লিতে দাঙ্গার ঘটনা বলে।
আরও পড়ুন: মোদীর বাংলাদেশ সফরের সাথে জোড়া হল ফ্রান্স-বিরোধী বিক্ষোভের ছবি