ইন্ডিয়া টুডে (India Today) গ্রূপের বাংলা সংবাদমাধ্যম আজতক বাংলা (AajTak Bangla) রাজস্থানের ঘটনা দাবি করে সম্প্রতি বাসের চালকের আসনে বসে এক মহিলার তর্ক করা ভিডিও সম্প্রচার করে।
আজতক বাংলা ভিডিওটি প্রকাশ করে দাবি করে রাজস্থানে এক বাসে বসার আসন না পেয়ে চালকের সিটে বসে পড়েছিলেন ওই মহিলা। এতে চালক আপত্তি জানালে মহিলাটি বাসচালকের সাথে তর্ক জুড়ে দেন এবং তাকে অন্য সিটে বসে বাস চালাতে বলেন।
ভিডিওটির একাংশে বলা হয়, "নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছা করছে হঠাৎ করে ওই মহিলা চালকের আসনেই বা বসলেন কেন? তাহলে শুনুন, ওই বাসের বয়স্ক মহিলা বৌমাকে সঙ্গে নিয়ে বাসে করে যাওয়ার জন্য স্ট্যান্ডে আসেন। বাসে উঠে শাশুড়ি জায়গা পেলেও বৌমার দিকে ছেঁড়েনি। এদিক ওদিক তাকিয়ে একমাত্র চালকের আসনটিই ফাঁকা দেখতে পান বৌমা। এরপরেই আর দেরি না করে চালকের আসনেই বসে পড়েন তিনি।"
ঘটনাটি নিয়ে আরও দাবি করা হয়, "বাস ছাড়ার একটু আগেই চালক ফিরে দেখেন তার আসনে বসে রয়েছেন এক মহিলা! এরপরে ওই মহিলাকে আসন ছাড়তে বললে ওই মহিলা বেঁকে বসেন। ড্রাইভার তাকে বোঝান সিট না ছাড়লে তিনি বাস চালাবেন কেমন করে? অন্যদিকে, চালকের আসনে বসে থাকা ওই মহিলার যুক্তি বাসের মধ্যেই অন্য যেকোনো আসনে বসে বাস চালান। ভাবুন অবস্থা! এই বচসার ভিডিও ততক্ষণে মোবাইলবন্দি করতে শুরু করেছেন বাসস্ট্যান্ডে থাকা বেশ কয়েকজন যুবক।"
আজতক বাংলা সেই ভিডিওটি তাদের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করে। 'বিশেষ কিছু' ঘটনা হিসেবে প্রকাশিত আজতক বাংলার খবরের ভিডিওটি নিচে দেখতে পাওয়া যাবে।
এর আগে একাধিকবার বুম আজতক বাংলার প্রকাশ করা ভুয়ো খবরের পর্দাফাঁস করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এমনই কিছু উল্লেখযোগ্য প্রতিবেদন পড়ুন এখানে এবং এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটির কীফ্রেম এবং প্রাসঙ্গিক কীওয়ার্ড ব্যবহার করে দেখতে পায় ভিডিওটির এক দীর্ঘ সংস্করণ ২০২০ সালের জুলাই মাসে ফেসবুকে আপলোড করা হয়েছিল।
প্রায় ৫ মিনিট দীর্ঘ এই ভিডিওর শেষ অংশে ড্রাইভার হিসাবে দেখতে পাওয়া ব্যক্তি এবং চালকের আসনে বসা মহিলাকে অন্য ব্যক্তির ইশারায় ছবি তুলতে দেখা যায়।
এর থেকে আমাদের সন্দেহ হয় যে ভিডিওটি কোনো সাজানো ঘটনার হতে পারে।
এরপর আমরা প্রাসঙ্গিক কীওয়ার্ড দিয়ে ইউটিউবে ভিডিওটি খোঁজার চেষ্টা শুরু করি এবং এক ইউটিউব চ্যানেলে ৬ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও দেখতে পাই। এই ভিডিওতে মহিলাটিকে বাসে উঠতে এবং একটি সিট খোঁজার চেষ্টা করতে দেখা যায়। সেই সময় বাসে উপস্থিত আরেকজন মহিলা তাকে বলেন, শুধু চালকের আসনই খালি রয়েছে।
ভিডিওর পরের অংশে ড্রাইভারকে একটি চায়ের দোকানে চা পান করতে দেখা যায়। কিছুক্ষণ পর সে উঠে বাসের কাছে আসে। আর তারপরই সেই একই অংশ ভিডিওতে দেখা যায় যে অংশটি ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে ড্রাইভারের সাথে তর্কের আগের অংশটি আমাদের বেশ নাটকীয় বলে মনে হয়। এছাড়াও, ভিডিওটির পটভূমিতে শিশুদের হাসির মতো মজার শব্দ ব্যবহার শুনতে পাওয়া যায়।
এর থেকে আমরা ভিডিওটির শিরোনামে প্রদত্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে আরও খোঁজ করি এবং 'HP MUSIC & VLOG' নামের এক ইউটিউব চ্যানেল খুঁজে পাই।
এই চ্যানেলটি খুঁটিয়ে লক্ষ্য করার সময়, আমরা ভাইরাল ভিডিওর ওই মহিলাকে বিভিন্ন ভূমিকায় অন্যান্য ভিডিওতে দেখতে পাই। চ্যানেলটিতে ২০২০ সালের অগাস্ট মাসের এক ভিডিওতে এই মহিলাটিকেই বাসে জায়গা না পেয়ে চালকের আসনে বসে থাকতে দেখা যায়।
এই ভিডিওতেও মহিলা ও বাসচালকের মধ্যে চালকের আসনে বসা নিয়ে তর্কাতর্কি হয় এবং শেষ পর্যন্ত চালক মহিলাটিকে বাস থেকে নামিয়ে দেন।
২০২০ সালে মার্চের ৩ তারিখে আপলোড করা আরেকটি ভিডিওতে ওই মহিলাকেই চালককে বাস চালানো শেখানোর জন্য জোর করতে দেখা যায়। মহিলাটি সেখানে চালকের আসনে বসেন এবং নিজে থেকে বাস চালানোর জন্য জোর শুরু করেন।
আমরা এই চ্যানেলে ভাইরাল ভিডিওটি খোঁজার চেষ্টা করলেও তা খুঁজে পাইনি। যদিও আমরা এই চ্যানেলের অন্যান্য ভিডিও এবং ভাইরাল ভিডিওতে দেখতে পাওয়া মহিলার মধ্যে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ করি যা নিচে দেখতে পাওয়া যাবে।
এই ইউটিউব চ্যানেলের সম্পর্ক বিভাগে স্পষ্ট লেখা হয় চ্যানেলটির উদ্দেশ্য শুধুমাত্র বিনোদনমূলক ভিডিও তৈরি করা। চ্যানেলের বর্ণনায় বলা হয়, “এটি 'হেমা প্রজাপত'-এর অফিসিয়াল চ্যানেল, যেখানে আপনি আঞ্চলিক ভাষা রাজস্থানীতে প্রচুর বিনোদন দেখতে পাবেন। আমরা সবসময় মানুষকে হাসাতে ভালোবাসি। আমরা যদি মজা করে কোনো নির্দিষ্ট জাতিকে কিছু বলি, দয়া করে খারাপ লাগবে না এবং মনে রাখবেন না। সমর্থন করতে থাকুন, হাসতে থাকুন।"
আমরা তদন্তে আরও দেখি, ভাইরাল ভিডিওতে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে এবং যে মহিলাটি তাকে চালকের আসনে বসতে বলছে তাকে অন্য একটি ভিডিওতেও একসাথে দেখা যাচ্ছে । নিচে দেখুন।
এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায় যে ভাইরাল ভিডিওটি আসলে একটি সাজানো নাটক। ভাইরাল ভিডিওর সেই মহিলাকে অন্যান্য ভিডিওতেও নানা চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা যায়।