সম্প্রতি বাংলাদেশে (Bangladesh) গণপিটুনিতে (mob lynching) নিহত হিন্দু যুবক দীপু চন্দ্র দাসের (Dipu Chandra Das) অন্তিম কিছু মুহূর্ত দাবি করে ঢাকার একটি পুরনো, অসম্পর্কিত ভিডিও ভাইরাল হয় সমাজমাধ্যমে। ক্রন্দনরত এক ব্যক্তিকে পুলিশের ধরে নিয়ে যাওয়ার ভিডিওটি শেয়ার করে ব্যবহারকারীরা দাবি করেন, তাতে উত্তেজিত জনতার হাতে দীপু দাসকে তুলে দিতে দেখা যায় বাংলাদেশ পুলিশকে (police)।
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিওয় দৃশ্যমান ব্যক্তি হলেন ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবদুল মোমিন। মোমিনকে এবছর নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলাকালীন পুলিশ আটক করে। এছাড়াও, ঢাকা মহানগর পুলিশের আইজি শাহাদাত হোসেন বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করে, ভাইরাল ভিডিওর সাথে দীপু চন্দ্র দাসের কোনও সম্পর্ক নেই।
গত ১৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে পোশাক কারখানার শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে (২৭) নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করে তার বিবস্ত্র দেহকে আগুন লাগিয়ে দেয় একদল উন্মত্ত জনতা। দীপু চন্দ্র দাসের হত্যার ঘটনা এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সম্প্রতি নয়াদিল্লি ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনার ভারতীয় দুতাবাস বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়াও ১৮ ডিসেম্বর ছাত্রনেতা শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে বাংলাদেশ জুড়ে হওয়া বিক্ষোভে ঢাকার কিছু সংবাদমাধ্যমের অফিস এবং পার্লামেন্ট ভবনেও ভাঙচুর করা হয়।
দাবি
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে দাবি করেন, "মৃত্যুর আগে দীপু চন্দ্র দাসের শেষ ভিডিওটি সামনে এসেছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, একজন বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তা দীপু চন্দ্র দাসকে হাজার হাজার বর্বর ও নৃশংস মানুষের একটি ভিড়ের হাতে তুলে দিচ্ছেন। দীপু চন্দ্র দাস কাঁদতে কাঁদতে বলছে যে সে কোনো ভুল করেনি এবং তাকে ফাঁসানো হচ্ছে। এরপর সে ক্ষমা চেয়ে বলে, "যদি কোনো ভুল করে থাকি, তবে আমাকে ক্ষমা করে দিন।" এতৎসত্ত্বেও পুলিশ অফিসার তাকে হিংস্র জনতার হাতে তুলে দিয়ে বলেন, "এই নাও, একে নিয়ে মা_রো।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
সংবাদমাধ্যম নিউজ ১৮ বাংলাও ভাইরাল ভিডিওটি ময়মনসিংহে মৃত্যুর আগে দীপু চন্দ্র দাসকে দেখা যাচ্ছে দাবি করে রিপোর্ট করে।
অনুসন্ধানে আমরা কী পেলাম
১. ভিডিওর ব্যক্তি ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী: বুম ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশটের কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বাংলাদেশ ভিত্তিক গণমাধ্যম ভোরের কাগজ লাইভের ১৮ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখের পোস্টে একই ভিডিও দেখতে পায়। পোস্টটিতে ভিডিওয় দৃশ্যমান ব্যক্তিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী বলে চিহ্নিত করা হয়।
ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তিকে ঢাকা কলেজের লোগো সহ পিঠে "মোমিন" লেখা একটি জার্সি পরা অবস্থায় দেখা যায়। ভিডিওয় তাকে পুলিশের কাছে কাঁদতে কাঁদতে বলতে শোনা যায়, তিনি ঢাকা কলেজের ছাত্র এবং বিক্ষোভের সাথে তিনি যুক্ত নন।
এরপর, আমরা কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে একই ঘটনার একটি দীর্ঘতর সংস্করণ পাই বাংলাদেশি গণমাধ্যম এনপিবি নিউজের ফেসবুক পেজে। ভিডিওটির ১:২৩ মিনিট অংশে দৃশ্যমান ব্যক্তিকে নিজের নাম আবদুল মোমিন ও নিজেকে ঢাকা কলেজের ছাত্র বলতে শোনা যায়। ভিডিওর শেষে দেখা যায়, মোমিনকে একজন পুলিশকর্তা রিকশায় তুলে দিচ্ছেন।
আমরা দেখি, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাজা ঘোষণা হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত ছাত্র-জনতা ধানমন্ডি ৩২-এ শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুর করতে একত্রিত হয় এবং সেখানে পুলিশের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়। এবিষয়ে প্রতিবেদন দেখুন এখানে ও এখানে। এনটিভি নিউজের রিপোর্ট অনুসারে, রাত অবধি সেই সংঘর্ষ চলে এবং প্রতিবাদকারীরা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙতে আসলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়।
২. বাংলাদেশ পুলিশের স্পষ্টীকরণ: বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বুম বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (আইজি) শাহাদাত হোসেনের সাথে যোগাযোগ করে। হোসেন ভাইরাল দাবিটি খণ্ডন করে বুম বাংলাদেশকে বলেন, "দীপু চন্দ্র দাসের সঙ্গে এই ভিডিওর কোনও সম্পর্ক নেই।"
(অতিরিক্ত রিপোর্টিং: মামুন আবদুল্লাহ, বুম বাংলাদেশ)






