সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ভাইরাল একটি ভিডিওতে বেশ কয়েকজন মানুষকে মাঠ পেরিয়ে একটি বাড়িতে হামলা করে সেখানে আগুন লাগিয়ে দিতে দেখা যায় ও হামলাকারীদের বিভিন্ন জিনিসপত্র ও গবাদি পশু ইত্যাদি নিয়ে যেতেও দেখা যায়। ভিডিওটি শেয়ার করে বিভ্রান্তিকর সাম্প্রদায়িক (communal) দাবি করা হচ্ছে সেটিতে বাংলাদেশের (Bangladesh) শেরপুর (Sherpur) জেলায় মুর্শিদপুরের (Murshidpur) একটি গ্রামে মুসলিমদের (Muslim) হিন্দু সম্প্রদায়ের (Hindu) উপর আক্রমণের (attack) দৃশ্য দেখা যায়।
বুম দেখে ভিডিওটি বাংলাদেশের শেরপুর জেলায় মুর্শিদপুরের দরবার শরীফে বা ডোজ পীরের দরবারে পীর-বিরোধী গোষ্ঠীর সম্প্রতি আক্রমণের। বুম বাংলাদেশকে শেরপুর সদর থানার ওসি মহম্মদ জুবায়দুল আলম নিশ্চিত করে জানান এই ঘটনার কোনো সাম্প্রদায়িক দিক নেই।
NewsTapবাংলা নামক একটি গণমাধ্যম তাদের এক্স হ্যান্ডেলে ভাইরাল ভিডিওসহ ২:২০মিনিটের একটি রিপোর্ট পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখে, "#Bangladesh | বাংলাদেশের শেরপুর জেলার মুর্শিদপুরের একটি গ্রামে ইসলামপন্থী জনতা হামলা করেছে। হিন্দুদের বাড়িঘর ও ফসল ধ্বংস করা হয়, গবাদি পশু লুট করা হয় এবং মানুষ হত্যা করা হয়।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
একই দাবিসহ ভাইরাল ভিডিও তারা তাদের ফেসবুক পেজেও পোস্ট করেছে। দেখুন এখানে।
এক এক্স ব্যবহারকারী এই হামলার ৩টি ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখেন, "ব্রেকিং: ইসলামপন্থী জনতা বাংলাদেশের শেরপুর জেলায় মুর্শিদপুরের একটি গ্রামে হামলা করেছে। হিন্দু বাড়ি, ফসল নষ্ট করা হয়েছে। গবাদি পশু চুরি করা হয়েছে। একজন খুন হয়েছেন।"
দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে কিওয়ার্ড সার্চ করে ফেসবুক ও এক্স সমাজমাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওর দৃশ্যসহ একাধিক পোস্ট দেখতে পাই যেখানে ভিডিওগুলি শেরপুরে মুর্শিদপুর দরবার শরীফে হামলার বলে দাবি করা হয়েছে।
দেখুন এখানে।
হিন্দু গ্রাম নয়, হামলা হয় মুর্শিদপুরের দোজা পীরের দরবারে
এরপর, আমরা গুগলে মুর্শিদপুর দরবার শরীফে হামলা সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করে দ্য ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদনে ভাইরাল ভিডিওর অনুরূপ দৃশ্য দেখতে পাই।
প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ২৭ নভেম্বের দোজা পীরের দরবারে প্রথম হামলা হয়। ওই হামলায় একজন আহত ব্যক্তির মৃত্যু হলে উত্তপ্ত জনতা দরবার শরীফে ফের হামলা করে ২৮ নভেম্বর, ২০২৪-এ। দ্য ডেইলি স্টার জানায় তিন ঘণ্টা ব্যাপি হামলায় একাধিক বার দরবার শরীফে আগুন লাগানো হয় এবং পরে, সেখানে লুটপাট করা হয়।
বাংলা ট্রিবিউনের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, "৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক ও এলাকাবাসী সদর উপজেলার লছমনপুর এলাকায় অবস্থিত মুর্শিদপুর দরবার শরীফের কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিয়ে আসছিলেন।"
প্রতিবেদনটি অনুযায়ী ওই মাদ্রাসার অভিযোগ পীরের শরীফে ইসলাম পরিপন্থী কার্যকলাপ চলে। ওই পীরকে উচ্ছেদ করতে মাদ্রাসাশিক্ষক মহম্মদ তরিকুল ইসলামসহ ৪০০-৫০০ জন মানুষ মুর্শিদপুর হামলা চালান।
আমরা ইউটিউবে সময় টিভি ও বাংলা অ্যাফেয়ার্সের চ্যানেলে শেরপুরে পীরের দরবারে হামলার আপলোড করা ভিডিওতে ভাইরাল ভিডিওর অনুরূপ দৃশ্য দেখতে পাই। নীচে ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশটের সঙ্গে একটি তুলনা দেওয়া হল।
স্থানীয় সাংবাদিক এবং কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
বুম বাংলাদেশ ভাইরাল দাবি সম্পর্কে শেরপুরের স্থানীয় একজন সাংবাদিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন মুসলমান সম্প্রদায়ের তৌহিদী গোষ্ঠী পীরের দরবারে ইসলাম বিরুদ্ধ কাজ হত দাবি করে প্রথম হামলা চালায়। সেখানে তাদের দলের একজন নিহত হলে আক্রোশের বশে তারা ফের ২৮ নভেম্বর সেখানে আক্রমণ করে।
তিনি স্পষ্ট করে জানান এই ঘটনার কোনও সাম্প্রদায়িক দিক নেই, মুসলমান সম্প্রদায়ের দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের ভিডিও এটি।
শেরপুর সদর থানার ওসি মহম্মদ জুবায়দুল আলম বুম বাংলাদেশকে নিশ্চিত করে জানায় "ঐ ঘটনায় কোনো সাম্প্রদায়িক ইস্যু ছিলোনা কিংবা তৈরিও হয়নি।"
(অতিরিক্ত রিপোর্টিং: বুম বাংলাদেশ)