সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একদল উত্তপ্ত জনতার প্যান্ড্যাল করা একটি বাড়ি ও তার সংলগ্ন জায়গায় ভাঙচুর করার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ব্যবহারকারীদের একাংশের দাবি ভিডিওয় তৌহিদি জনতাকে (Towhidi Janata) একটি হিন্দু (Hindu) বিয়েবাড়িতে (wedding) হামলা করতে দেখা যাচ্ছে।
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল দাবিটি ভুয়ো এবং এই ঘটনার কোনও সাম্প্রদায়িক দিক নেই। বাংলাদেশের দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় বাবা রহিম শাহ ভাণ্ডারী মাজারে এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ওরসের আয়োজন চলাকালীন কট্টর ইসলামপন্থী তৌহিদি জনতার হামলার দৃশ্য দেখা যায় ভিডিওয়।
৩০ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিও শেয়ার করে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ক্যাপশনে দাবি করেন, “আরও বলো এক বিন্তে দুটি কুসুম। রোজার মাস বলে হিন্দু বিয়ে বাড়িতে হামলা করেছে তৌহিদি জনতা।”
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম সম্পর্কিত কিওয়ার্ড সার্চ করে একটি বাংলাদেশী ফেসবুক পেজে ভাইরাল ভিডিওর একটি দীর্ঘতর সংস্করণ দেখতে পায়। ১ মার্চের পোস্টটির ক্যাপশন অনুযায়ী ভিডিওর ঘটনাস্থল বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটে রহিম বাবার মাজার যেখানে এলাকার তৌহিদি জনতা ভাঙচুর চালিয়েছে।
এছাড়াও, আমরা এক বাংলাদেশী ব্যবহারকারীর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ তারিখে রহিম বাবা মাজার ভাঙচুরের একটি সরাসরি সম্প্রচারও দেখতে পাই।
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
এরপর, আমরা গুগলে রহিম বাবা মাজারে হামলা সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যম প্রথম আলোর একটি প্রতিবেদন পাই।
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় ওই দিন বিকেলে সীরাতে মুস্তাকিম পরিষদ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এলাকার তৌহিদি জনতা লাঠিমিছিল করে বাবা রহিম শাহ ভাণ্ডারী মাজারে ভাঙচুর চালায় ও আগুন লাগিয়ে দেয়।
প্রথম আলোর রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায়, ২ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত মাজারে বার্ষিক ওরসের আয়োজন করা হয়েছিল যার প্রস্তুতি চলছিল। হামলাকারি তৌহিদি জনতার অভিযোগ এই ওরসের আড়ালে মাজারটিতে মাদক সেবন, গানবাজনা ও নানারকম অশ্লীল কাজ চলত।
তৌহিদি জনতা একটি কট্টর ইসলামপন্থী দল যারা বাংলাদেশে একাধিক হিংসাত্মক হামলা করেছে।
বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যম কালবেলা নিউজও এই ঘটনা সংক্রান্ত একটি ভিডিও রিপোর্ট প্রকাশ করে। ১ মার্চ, ২০২৫-এর ওই রিপোর্টে ভাইরাল ভিডিওর অনুরূপ দৃশ্য দেখা যায়।
বুম বাংলাদেশ ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার নাজমুল হকের সঙ্গে ভিডিওর বিষয়ে যোগাযোগ করলে তিনি ভাইরাল সাম্প্রদায়িক দাবিটি খণ্ডন করেন।
হক বলেন, “ভিডিওটি ঘোড়াঘাটের রহিম শাহ বাবা ভাণ্ডারী মাজারের। এখানে গত ২৮ ফেব্রুয়ারিতে তৌহিদি জনতার একটি মাজার-বিদ্বেষী হামলার দৃশ্য দেখা যায়। ঘটনার কোনও হিন্দু বা সাম্প্রদায়িক যোগ নেই।”
(অতিরিক্ত রিপোর্টিং: তৌসিফ আকবর, বুম বাংলাদেশ)