ভাইরাল হওয়া ছবিতে একটি মন্দিরের ভেতর ইসলামের পবিত্র সংখ্যা ‘৭৮৬’ (786) লেখা একটি সবুজ কাপড় ঝুলে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ছবিটি সোশাল মিডিয়ায় এই বলে শেয়ার করা হচ্ছে যে, ছত্তিসগড়ের (Chhattisgarh) গুন্ডরদেহিতে মা চণ্ডী দেবীর (Maa Chandi Devi Temple) মন্দিরের ওপর ওয়াকাফ বোর্ড (Waqf Board) তাদের দখলদারি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে।
বুম দেখে, দাবিটি মিথ্যে। আমরা প্রাক্তন বিধায়ক ও মন্দির কমিটির পৃষ্ঠপোষক রাজেন্দ্র কুমার রাই-এর সঙ্গে কথা বলি। তিনি নিশ্চিত করে বলেন যে, মন্দিরের কোনও অংশের ওপরই ওয়াকাফ বোর্ড কোনও দাবি করেনি। এবং ওই মন্দিরকে ঘিরে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনও বিবাদও নেই।
ছবিটি হিন্দি ক্যাপশন সহ শেয়ার করা হচ্ছে। তাতে বলা হয়েছে, “ছত্তিসগড়ের গুন্ডারদেহিতে মা চণ্ডীর মন্দির। ওয়াকাফ বোর্ড সেটিকে তাদের সম্পত্তি বলে দাবি করছে। এ সব কী হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী শ্রীভূপেশ বাঘেলজি? এ সব বন্ধ করুন।”
(মূল হিন্দিতে ক্যাপশন: मां चंडी देवी मंदिर, गुंडरदेही छत्तीसगढ़ | वक्फ बोर्ड ने दावा किया है कि यह उनकी संपत्ति हैं | ये सब क्या हो रहा है मुख्यमंत्री श्री Bhupesh Baghel जी इन सबको बंद कीजिए |)
টুইটটি দেখুন এখানে।
একই দাবি সহ ছবিটি ফেসবুকেও শেয়ার করা হচ্ছে।
ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
ভাইরাল দাবিটি সত্য কিনা তা জানতে, বুম ক্যাপশনটিকে সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ করে। তার ফলে ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩-এ, ইটিভি ভারত-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই আমরা।
সেই রিপোর্টে, হিন্দু মুসলমান, উভয় সম্প্রদায়েরই বক্তব্য ছিল। এবং তাঁরা ওই সাম্প্রদায়িক দাবিটি অস্বীকার করেন।
ওই রিপোর্টে বলা হয় যে, মা চণ্ডী দেবীর মন্দির হল সম্প্রীতি ও একাত্মতার প্রতীক। ছত্তীসগঢ়ের বালোদ জেলায় অবস্থিত ওই ১০০ বছরের পুরনো মন্দিরে হিন্দু ও মুসলমানরা উভয়ই পুজো করেন। চণ্ডী দেবী সহ সৈয়দ বাবা’র ‘৭৮৬’ লেখা সবুজ পবিত্র পতাকা পূজিত হন।
স্থানীয় মানুষজন বলেন, মন্দিরের মা চণ্ডীদেবীর মূর্তি ও মুসলমান সম্প্রদায়ের পবিত্র চাঁদ সেখানকার রামসাগর দিঘি থেকে পাওয়া যায়। তাই মা চণ্ডী দেবীর মন্দির স্থাপিত হওয়ার পর, স্থানীয় রাজা ঠাকুর নিহাল সিং সৈয়দ বাবা সাহেব’র পবিত্র পতাকা, ‘৭৮৬’, মন্দিরে প্রতিস্থাপন করেন।
রাজ পরিবারের সদস্য ও গুণ্ডারদেহি’র প্রাক্তন বিধায়ক রাজেন্দ্র কুমার রাই-এর বত্তব্যও ছিল সেই প্রতিবেদনে। তাঁর কথা অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত ওই মন্দিরকে ঘিরে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে কোনও অশান্তি হয়নি। সকলেই সেখানে পুজো করেন।
৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩-এ অমর উজালা-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনেও রাজেন্দ্র কুমার রাই ও স্থানীয় মানুষের বক্তব্য প্রকাশিত হয়। তাঁরা সকলেই ভাইরাল দাবিটি খণ্ডন করেন।
আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা প্রাক্তন বিধায়ক ও মন্দিরের পৃষ্ঠপোষক রাজেন্দ্র কুমার রাই-এর সঙ্গে যোগাযোগ করি।
রাই বুমকে বলেন, “আমার পূর্বপুরুষরা মন্দিরটি তৈরি করেন। প্রাচীন বিশ্বাস অনুযায়ী, স্থানীয় রামসাগর দিঘিতে মুসলমানদের পবিত্র চাঁদ পাওয়া যায়। আমার ঠাকুরদা ও রাজা নিহাল সিংকে সেটি রাখার অনুরোধ করেন মুসলমানরা। একটি বাক্সেতে ভরে চাঁদটি মন্দিরের ভেতরে রাখা হয় ও সবুজ কাপড় দিয়ে মোড়া হয় সেটিকে। সেই থেকে, উভয় সম্প্রদায়ের মানুষই সেখানে পুজো করেন।
ভাইরাল দাবিটি অস্বীকার করে রাই বলেন, “ওয়াকাফ বোর্ড মন্দিরের ওপর কোনও দাবি করেনি এবং ওই মন্দিরকে কেন্দ্র করে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে কোনও অশান্তিও হয়নি।”
মন্দিরের পূজারি বলেন, মন্দিরের দরজা খোলার আগে তিনি সৈয়দ বাবা’র উদ্দেশ্যে ধুপ জ্বেলে দেন। তারপর পুজোর কাজ শুরু করেন।