বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র (Sambit Patra) একটি ভিডিও টুইট করেছেন যেটিতে সম্প্রতি আয়োজিত কংগ্রেসের (Congress) এক জনসভার মঞ্চ থেকে আজান দিতে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু ওই ভিডিওটির একটি বড় সংস্করণে দেখা যায় যে, ওই জনসভায় সব ধর্মের প্রার্থনাই স্থান পেয়েছিল।
ভিডিওটি এই দাবি সমেত ভাইরাল হয়েছে যে, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা ও কংগ্রেস পার্টি মুসলমানদের খুশি করার জন্য আজানের ব্যবস্থা করেন।
ভিডিওর একটি সেটের মধ্যে একটি ভিডিওতে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা ও অন্যান্য কংগ্রেস কর্মকর্তাদের মঞ্চে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ও পেছনে শোনা যায় আজানের ধ্বনি। অন্য একটি ভিডিওতে একজন সাংবাদিককে কিছু লোকের সঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়, যাঁরা ওই জনসভায় আজান সম্পর্কে তাঁদের অসন্তোষ ব্যক্ত করছেন।
আরও পড়ুন: রাজনাথ সিংহের দাবি মতো, গাঁধী কি সাভারকারকে ক্ষমা পত্র পাঠাতে বলেন?
১০ অক্টোবর, কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বারাণসীতে আয়োজিত কিষাণ ন্যায় র্যালিতে ভাষণ দেন। ওই র্যালির একটি কাটছাঁট-করা ভিডিও এখন এক মিথ্যে দাবি সমেত ভাইরাল হয়েছে।
ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা সম্বিত পাত্র ওই ভিডিও সেটটি টুইট করেন। এবং মন্তব্য করেন, "১৪ অক্টোবর, প্রিয়ঙ্কা বঢরা ও কংগ্রেস পার্টি এটা করেন খুশি করার জন্য,,."
নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকেও পাত্র ভিডিওটি শেয়ার করেন।
একই ক্যাপশন সমেত, ভিডিওটি একধিক টুইটার হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করা হয়েছে।
হিন্দিতে একই দাবি করে ভিডিওটি ফেসবুকেও শেয়ার করা হচ্ছে।
পোস্টগুলি দেখুন এখানে ও এখানে।
আরও পড়ুন: বিদেশে খালিস্তানপন্থীদের পতাকা ছেঁড়া জোড়া হল ভারতের কৃষকদের সঙ্গে
কংগ্রেসের মঞ্চ থেকে আজান? একটি তথ্য যাচাই
১০ অক্টোবর, উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে আয়োজিত কংগ্রেসের জনসভার দেড়ঘন্টার একটি ভিডিও বুম দেখে। ভিডিওটি কংগ্রেসের অফিসিয়াল ইউটিউব পেজে আপলোড করা হয়। সেটির শিরোনামে লেখা হয়, "লাইভ: উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে কিষাণ ন্যায় র্যালিতে ভাষণ দিচ্ছেন শ্রীমতি প্রিয়ঙ্কা গাঁধী"।
ভিডিওটির প্রথম ৩০ সেকেন্ড কোনও অডিও শোনা যায় না। তারপর একজন কংগ্রেস কর্মীকে জনতার উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে শোনা যায়। ০.৫৮ সময়চিহ্নে ওই কংগ্রেস কর্মীকে বলতে শোনা যায়, "প্রথমত, আমাদের ঐতিহ্য হল...কংগ্রেস পার্টি সব সময় মনে করেছে যে, সব ধর্মই সমান...তাই আমি প্রথমে হিন্দু ধর্মের এক বন্ধুকে এখানে এসে মন্ত্র উচ্চারণ করতে...তারপর আমাদের মুসলমান ভাইদের, তারপর শিখ ভাইদের, তারপর খ্রিস্টান ভাইদের এখানে স্বাগত জানানো হবে ও তাঁরা এখানে এসে একত্রিত হবেন"।
(হিন্দিতে যা বলা হয়: सबसे पहले हम अपनी परम्पराओं के अनुसार ... कांग्रेस पार्टी का हमेशा रहा है कि सर्व धर्म सद्भाव हम अपनाते रहें हैं तो सबसे पहले हमारे हिन्दू धर्म के जो साथी यहाँ पर आएं हैं उनसे मैं निवेदन करता हूँ कि मंत्रोचार के साथ जो है ... फिर हमारे मुस्लिम भाई फिर हमारे सिख भाई फिर हमारे ईसाई भाई जो हैं वो वहाँ पर स्वागत करेंगे और फिर आ के यहां पे भेंट करेंगे)
১.৫৩ সময়চিহ্ন থেকে ৫.০৩ পর্যন্ত অডিও শোনা যায় না। ৫.০৪ সময়চিহ্নে অডিও আবার ফিরে আসে আর সেই সঙ্গে 'হর হর মহাদেব' ধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়।
সময়চিহ্ন ৫.৪৪ থেকে আজান শোনা যায়। তারপর শোনা যায় শিখ প্রার্থনা। পরে কংগ্রেস কর্মীরা প্রিয়ঙ্কা গাঁধীকে অভ্যর্থনা জানান। ৫৪.৫০ সময়চিহ্ন থেকে প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরা ভাষণ দেন ও দূর্গা মন্ত্র উচ্চারণ করেন।
ওই জনসভার আরও একটি ভিডিও বুমের হাতে আসে। তাতেও মন্ত্রধ্বনি শোনা যায়।
১০ অক্টোবরের জনসভায় যে হিন্দু পুরোহিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের পৌরহিত্য করেন, সেই মুকেশ পান্ডের সঙ্গে আমরা কথা বলি। উনি বলেন, মন্ত্রপাঠের মধ্য দিয়েই জনসভাটি শুরু হয়।
বুমকে পান্ডে বলেন, "এটা হল কাশীর গঙ্গা যামুনি তেহজিব'র ঐতিহ্য। সেখানে সব ধর্মের মানুষ প্রার্থনা করেন। এখানে কোনও ব্যক্তিগত প্রার্থনা ছিল না। ওই জনসভার শুরুতে কাশীর ১১ জন পুরোহিত মন্ত্রপাঠ করেন। তারপর মুসলমান ও শিখ সম্প্রদায়ের প্রার্থনা হয়। কাশী ও সারা বিশ্বে শান্তির জন্য ওই প্রার্থনাগুলি করা হয়।
পান্ডে আরও জানান যে, প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বা কোনও পার্টির জন্য কোনও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়নি। সবটাই হয়েছিল বিশ্ব শান্তির জন্য।
আরও পড়ুন: দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের কয়লা দানের আবেদন করা বিজ্ঞাপনটি ভুয়ো