সোশাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর দাবি করা হয়েছে যে, হোলির (Holi) দিন শ্লীলতাহানি, উত্যক্ত করা ও বচসা (crime) সংক্রান্ত ৩৫ হাজার (35 thousands) অভিযোগ দিল্লি পুলিশের (Delhi Police) কাছে জমা পড়েছে।
বুম যাচাই করে দেখে ওই রিপোর্টটি ছ’বছরের পুরনো। এ বছর, হোলির দিনের অভিযোগের খতিয়ান অন্যদিনের হিসেবের চেয়ে মোটেই খুব বেশি নয়।
ইনশর্ট-এর একটি রিপোর্ট সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। তাতে দেওয়া অভিযোগগুলির মধ্যে রয়েছে ১১ খুন, ২১ ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানি, ২১১ মহিলাদের উত্যক্ত করা, ৪৬ বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো, ১৪২ ছুরি মারা ও ৪০ গুলি চালানোর ঘটনা।
হোলির দিন দিল্লিতে যৌন নিগ্রহ ও আইন ভাঙ্গার ঘটনার ফিরিস্তি হিসেবে রিপোর্টটি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক হল দিল্লির পাহাড়গঞ্জ এলাকায় এক জাপানি মহিলার শ্লীলতাহানির ঘটনা। ওই ঘটনা সম্পর্কে পড়ুন এখানে। অন্য একটি ঘটনার ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক দল নেশাগ্রস্ত লোক একজন বৃদ্ধকে উত্যক্ত করছে এবং শেষে পুলিশের একটি পিসিআর ভ্যান হাজির হচ্ছে ঘটনাস্থলে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে গাড়িটিতে দিল্লির নম্বরপ্লেট লাগানো রয়েছে। (ভিডিওটি দেখুন এখানে ও এব্যাপারে পড়ুন এখানে।)
ওই পুরনো স্ক্রিনশটটি, একটি খবরের ক্লিপ ও ক্যাপশন সহ শেয়ার করা হচ্ছে। ক্যাপশনে বলা হয়েছে, “একটি সাংবিধানিক গণতন্ত্রে হোলির দিন এমন কী হয় যে, সেদিন রাজধানীতেই খুন, ধর্ষণ, মহিলাদের উত্যক্ত করা, শ্লীলতাহানি সহ ৩৫,০০০ অপরাধের ঘটনা ঘটে। যার থেকে অনুমান করা যায় যে, হোলির দিন সারা দেশে কী পরিমাণ অপরাধ হয়।”
(হিন্দিতে মূল লেখা: "संवैधानिक लोकतंत्र में होली के दिन ऐसा क्या हो जाता है कि हत्या, बलात्कार, महिलाओं का शोषण, महिलाओं के साथ छेड़छाड़ समेत तमाम तरह के संगीन अपराधिक मामले केवल राजधानी में ही होली के दिन 35000 से अधिक होते हैं? खैर, इससे आप पूरे देश में होली के दिन होने वाले अपराधों का अंदाजा खुद ही लगा सकते हैं…")
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ইনশর্ট-এর রিপোর্টটি ছ’ বছরের পুরনো। সেটিতে, ২০১৬ সালে ইন্ডিয়া টুডেতে প্রকাশিত একটি লেখা উদ্ধৃত করা হয়।
আমরা আসল ইনশর্ট রিপোর্টটি দেখি। দেখা যায়, ইন্ডিয়া টুডে-তে ২০১৬ সালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টের উদ্ধৃতি দেওয়া হয় ওই রিপোর্টে।
দেখুন এখানে।
আমরা ইন্ডিয়া টুডে-তে প্রকাশিত রিপোর্টিও দেখি। সেটি ছিল পিটিআই-এর একটি প্রতিবেদন। তাতে হোলির দিন দিল্লি পুলিশের কন্ট্রোল রুমে (পিসিআর) অপরাধের যে সব অভিযোগ জমা পড়ে সেগুলির উল্লেখ ছিল। লেখাটি সাত বছর আগে, ২৭ মার্চ, ২০১৬ প্রকাশিত হয়েছিল।
দেখুন এখানে।
দিল্লি পুলিশও টুইট করে জানায় যে, ভাইরাল-হওয়া খবরটি মিথ্যে।
তাতে বলা হয়, “হোলির দিন দিল্লি পুলিশের কাছে অপরাধের অভিযোগ জমা পড়ার যে পরিসংখ্যান সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেল থেকে টুইট করা হয়েছে সেটি মিথ্য। ওই সংখ্যাগুলি ৭ বছর আগের একটি রিপোর্ট থেকে নেওয়া। তথ্য যাচাই না করে, মিথ্যে খবর ছড়াবেন না।”
ইনশর্টও একটি টুইটের মাধ্যমে স্পষ্ট করে যে, মিথ্যে খবর ছড়াতে তাদের একটি পুরনো রিপোর্ট ব্যবহার করা হচ্ছে।
বুম দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (অপারেশন) আনন্দ মিশ্রর সঙ্গে কথা বলে। তিনি নিশ্চিত করে বলেন যে, তাঁদের পিসিআর-এ যে অভিযোগ জমা পড়ে তার সংখ্যা প্রায় সাধারণ দিনের মতোই ছিল। তিনি বলেন, “যে ফোন কলগুলি আমাদের কাছে আসে, আমরা সেগুলিকে দু’ভাবে ভাগ কারি – ম্যাচিওর্ড (নিষ্পত্তি হয়ে গেছে) ও অ্যাকশনেবল (পদক্ষেপ নেওয়ার যোগ্য)। ম্যাচিওর্ড হল সেই সব কল যেগুলি তামাশা করার জন্য করা হয় এবং যেগুলি সম্পর্কে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। পদক্ষেপ যোগ্য কল হলে সেই সব ফোন কল যেগুলির ভিত্তিতে তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে বাহিনী পাঠানো হয়।”
মিশ্র জানান যে, পিসিআর-এ প্রতিদিন ২৩-২৪ হাজার ফোন আসে (১৬-১৭ হাজার ম্যাচিওর্ড ও ৬-৭ হাজার অ্যাকশনেবল)। “হোলির দিন আমরা প্রায় ১৯ হাজার ম্যাচিওর্ড ও ৮ হাজার অ্যাকশনেবল কল পাই (মোট ২৭ হাজার)। দৈনিক গড়ের তুলনায় সেটা একটু বেশি,” মিশ্র ব্যাখ্যা করে বলেন। তিনি আরও বলেন, যে কোনও উৎসবের দিন বা ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের মতো বিশেষ দিনে, পিসিআর-এর পাওয়া অভিযোগের সংখ্যা বেড়ে যায়।