একটি ভিডিওতে আমদাবাদে (Ahmedabad) সাদা পোশাকের পুলিশকে এক সশস্ত্র ব্যক্তি ও তার সাগরেদদের ধরতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ভিডিওটি এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, দিল্লির দাঙ্গার (Delhi riots) সঙ্গে যুক্ত সিরাজ মোহম্মদ আনোয়ার নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার (arrest) করছে ভারুচের পুলিশ।
বুম দেখে ভিডিওটি আমদাবাদে এক দাগী অপরাধী ও তার সাগরেদদের পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার ভিডিও। বেশ কিছু অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে, একটি ধাবা থেকে গ্রেফতার করা হয় তাদের।
তবে আমরা আরও দেখি যে, ২৯ জুন, ভারুচ পুলিশ সিরাজ আনোয়ার নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। কিন্তু তার সঙ্গে দিল্লির দাঙ্গা বা আমদাবাদের ভাইরাল ভিডিওটির কোনও যোগ নেই।
ভিডিওটিতে কয়েকজন সাদা পোশাকের পুলিশকে একটি খাবারের দোকানে ঢুকে টেবিল খুঁজতে দেখা যায়। পরমুহূর্তে তাঁরা একটি টেবিল ঘিরে বসে থাকা অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করেন। ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, "ভারুচ ক্রাইম ব্রাঞ্চের এক লাইভ অভিযানে ধরা পড়ে দিল্লির এক দাঙ্গাবাজ। তার নাম সিরাজ মোহম্মদ আনোয়ার। দিল্লির দাঙ্গার সঙ্গে সে যুক্ত ছিল। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, ভারুচ ক্রাইম ব্রাঞ্চ তাকে গ্রেফতার করে।"
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভিডিওটি ২৭ জুন পাটান জেলায় তোলা হয়। সেখানে একটি খাবারের দোকান থেকে কিশোর পাঞ্চাল ওরফে কিশোর লোহার নামের এক দাগী অপরাধী ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের গ্রেফতার করে আহমেদাবাদ পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ বা অপরাধ দমন শাখা।
'ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস' ও 'টাইমস অফ ইন্ডিয়া' ওই ঘটনাটি সম্পর্কে খবর করে। সেই সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওটি থেকে নেওয়া স্ক্রিনশট ব্যবহার করে তারা।
আমদাবাদ পুলিশের অপরাধ দমন শাখার সহকারী পুলিশ কমিশনার ডি পি চুড়াসামা'র সঙ্গে যোগযোগ করলে উনি বলেন যে, ভাইরাল ভিডিওটিতে যে অভিযুক্তদের দেখা যাচ্ছে, তাদের সঙ্গে দিল্লির দাঙ্গার কোনও সম্পর্ক নেই। উনি বলেন, ওই ব্যক্তিরা দাগী অপরাধী। গুজরাতে অনেকগুলি অপরাধের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাদের খোঁজা হচ্ছিল। "গাড়ি চুরি, মারধর, বাড়িতে চুরি ও অস্ত্র রাখার মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত মূল অভিযুক্ত। তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও জোর করে টাকা তোলার অভিযোগও আছে," বলেন চুড়াসামা। উনি আরও জানান যে, গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তদের কারও নাম সিরাজ মোহম্মদ আনোয়ার নয়। "এই রাজ্যের বাইরে বা দিল্লির দাঙ্গার সঙ্গে এরা যুক্ত, তেমন কোনও তথ্য আমাদের তদন্তে এখনও উঠে আসেনি।"
ভাইরাল হওয়া দাবিতে উল্লেখিত নাম 'সিরাজ মোহম্মদ আনোয়ার' দিয়ে আমরা সার্চ করি। তার ফলে আমরা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ প্রকাশিত একটি খবর দেখতে পাই। তাতে বলা হয়, দু'টি বেআইনি অস্ত্র রাখার অভিযোগে ভারুচ পুলিশ সিরাজ মনসুর আলম আনসারি নামে এক ছোট অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে।
ভারুচের স্থানীয় অপরাধ দমন শাখার ইন্সপেক্টর জে এন ঝালা বুমকে বলেন যে, একটি গোপন সূত্রের খবরের ভিত্তিতে আনোয়ারকে গ্রেফতার করা হয়। ওই ব্যক্তির পিঠ ব্যাগে দু'টি বেআইনি অস্ত্র পাওয়া যায়। "অভিযুক্ত ব্যক্তি দিল্লির মানুষ। কিন্তু অনেক দিন হল উনি গুজরাতের ভারুচেই বসবাস করেন।" ঝালা বলেন, "তিনি আগে কখনও কোনও অপরাধ করেছেন বলে আমরা আমাদের তদন্ত থেকে জানতে পারিনি।" ভাইরাল দাবিটি উড়িয়ে দিয়ে উনি বলেন, "আমরা যতদূর জানি, দিল্লির দাঙ্গা সংক্রান্ত কোনও মামলার সঙ্গে উনি জড়িত নন।"
আমদাবাদ ও ভারুচের অপরাধ দমন শাখা উভয়েই বলে যে, দিল্লির দাঙ্গার সঙ্গে অভিযুক্তের কোনও যোগ নেই।
আরও পড়ুন: সম্পর্কহীন গান জুড়ে ঐশী ঘোষের স্প্যানিশ গানের সম্পাদিত ভিডিও ভাইরাল