একদল লোক পুলিশকে (Police) লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়ছে-- এই মর্মে একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে ভুয়ো দাবি জানানো হচ্ছে যে, পাথর নিক্ষেপকারীরা নাকি সকলেই মুসলিম।
বুম যাচাই করে দেখে ঘটনাটি রাজস্থানের এবং এর মধ্যে কোনও সাম্প্রদায়িক রং নেই।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, এক দল লোক একটি রাস্তার এক প্রান্তে জড়ো হয়ে পাথর ছুঁড়ছে অন্য প্রান্তে জড়ো হওয়া পুলিশকে লক্ষ্য করে। পুলিশকে পিছু হটতেও দেখা যাচ্ছে ভিডিওতে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির হিন্দি ক্যাপশনের অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, "করৌলি এবং যোধপুরের পর এই শান্তিপ্রিয় সম্প্রদায় এবার ধোলপুরে পাথর ছোঁড়ায় লিপ্ত!
এখানে তো কোনও রামনবমীর ডিস্ক-জকিরা গান বাজাচ্ছে না যে, তাদের দিকে পাথর ছুঁড়তে হবে!"
এর আগে রাজস্থানের করৌলি এবং যোধপুরে যে সাম্প্রদায়িক গোলমাল হয়েছিল, ক্যাপশনটিতে সেই দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
এ সংক্রান্ত পোস্টটি দেখুন এখানে।
টুইটারেও একই ভুয়ো দাবি সহ পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: ইয়াসিন মালিকের যাবজ্জীবন সাজায় তাঁর স্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ছড়াল পুরনো ভিডিও
তথ্য যাচাই
"ধৌলপুর" শব্দটি বসিয়ে বুম ইউটিউবে অনুসন্ধান করে সেখানে একটি সংবাদ-প্রতিবেদন আপলোড হতে দেখেছে ফার্স্ট ইন্ডিয়া নিউজ-এর ইউটিউব চ্যানেলে, গত ২৬ মে, ২০২২ তারিখে। সেখানে বলা হয় রাজস্থানের ধৌলপুরের বারি-তে এই গোলযোগটি ঘটেছে।
ওই একই দিনে (২৬ মে) দৈনিক ভাস্কর সংবাদপত্রেও একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়l তাতে লেখা হয়— 'কৃষ্ণ নামে হরি সিং-এর জনৈক পুত্র আত্মগোপন করে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে। তার ভাইয়ের স্ত্রী-ই এই অভিযোগ এনেছিল মাস-তিনেক আগে।' প্রতিবেদনটিতে আরও লেখা হয়, সে সময় তাকে গ্রেফতার করা হলেও পরে সে জামিনে মুক্তি পায়। কিন্তু দু-দিন আগে পুলিশ যখন তার খোঁজে বাড়িতে পৌঁছয়, সে তখন বাড়িতে ছিল না। পুলিশ তার বাড়ির লোকদের বলে আসে, সে যেন থানায় দেখা করে।
২৬ মে সকালে সে মাতাল অবস্থায় থানায় পৌঁছে পুলিশকে গালমন্দ করতে থাকে।
তখন তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই সে সংজ্ঞা হারায়। পরে তাকে ধৌলপুর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
ইতিমধ্যে গুজব রটে যায়, অভিযুক্তকে পুলিশ মারধর করেছে এবং সে কথা শুনে বারি ও বাসেদি-র রাস্তায় লোকজল জড়ো হতে থাকে। তারা পাথর ও কাঠ দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে এবং পুলিশ এলে তাদের লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে থাকলে পুলিশ অগত্যা পিছু হটতে বাধ্য হয়।
দৈনিক ভাস্করের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভিযুক্তের পরিবারের লোকজন পুলিশের বিরুদ্ধে থানা লক-আপে প্রহার করার অভিযোগ আনে, যদিও পুলিশ সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
বুম পুলিশের সঙ্গেও কথা বলে দেখেছে, এই ঘটনায় কোনও রকম সাম্প্রদায়িক ব্যাপার যুক্ত ছিল না।
একজন পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, লক-আপের ভিতর প্রহারে তার মৃত্যু হয়েছে, এমন গুজব ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষিপ্ত জনতা জমায়েত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়তে থাকে। অথচ লোকটি এখন দিব্যি ভালো আছে, মিছিমিছি তার মৃত্যুর গুজব চাউড় করে এত কাণ্ড হল। আর সাম্প্রদায়িক বিভাজনের কোনও অবকাশই এই ঘটনায় ছিল না, জানালেন ধোলপুর পুলিশের অফিসার।
আমরা ধোলপুর পুলিশের সুপারিন্টেন্ডেন্ট নারায়ণ টোগাস-এর একটি বিবৃতিও পেয়েছি, যেখানে তাঁকে হিন্দিতে বলতে শোনা যাচ্ছে, "বারি থানায় হরি সিং-এর ছেলে কৃষ্ণর বিরুদ্ধে একটা মামলা দায়ের হয়েছে। আজ সকালেই সে থানায় এসেছিল এতটাই মাতাল হয়ে যে, আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বাধ্য হই। সেখানে তাকে ভাল করে পরীক্ষা করা হয়l তারপর ওকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও করা হয়েছেl গণ্ডগোলের জায়গায় আমরা বাড়তি পুলিশও পাঠিয়েছি।"
আরও পড়ুন: ভুয়ো বার্তার দাবি মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলায় ভারত সরকারের খয়রাতি ৩০, ৬২৮ টাকা