একাধিক মৃতদেহ (Dead Bodies) এবং ঠাণ্ডা পানীয়ের (Cold Drink) বোতলের কিছু আপত্তিকর ছবির একটি সেট সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, ঠাণ্ডা পানীয় নির্মাতা সংস্থার এক কর্মী পানীয়তে ইবোলা-সংক্রমিত (Ebola) রক্ত মিশিয়ে দিয়েছে।
বুম যাচাই করে দেখে যে, দাবিটি মিথ্যে আর ছবিগুলি পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কহীন।
বেশ কয়েকটি আলাদা মৃতদেহ এবং ঠাণ্ডা পানীয়ের বোতলের ছবি বিভিন্ন ফেসবুক পেজ থেকে ভাইরাল হয়েছে। হিন্দিতে তার ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "সব বন্ধুকে ফরোয়ার্ড করুন। হায়দরাবাদ পুলিশ গোটা ভারতকে জানিয়েছে। আগামী কয়েক দিন মাজা, ফান্টা, সেভেন আপ, কোকা কোলা, মাউন্টেন ডিউ বা পেপসি-র মতো ঠাণ্ডা পানীয় খাবেন না। কারণ সংস্থার এক কর্মী এই ঠাণ্ডা পানীয়ে ইবোলা-সংক্রমিত রক্ত মিশিয়ে দিয়েছে। গতকাল এনডিটিভি চ্যানেলে খবরটি সম্প্রচারিত হয়েছে। দয়া করে এই মেসেজটি শেয়ার ও ফরোয়ার্ড করুন।"
(হিন্দিতেi: #प्लीज सभी मित्रो फोर्वर्ड करे. Hyderabad पुलिस की तरफ़ से पुरे भारत मे सूचना दि गयी है. क्रुपया आने वाले कुछ दिनो तक आप कोई भी कोल्ड ड्रिंक जैसे माज़ा, फैन्टा, 7 अप, कोका कोला, mauntain डीओ, पेप्सी, इत्यादि न पिये क्यूकी इसमेसे एक कम्पनी के कामगार ने इसमे इबोला नामक खतरनाक वायरस का दूषित खून इसमे मिला दिया है. ये खबर कल NDTV चैनल मे बतायी थी. आप जल्द से जल्द इस मेसेज को फोर्वर्ड करके मदद करे. ये मेसेज आपके परिवार मे फोर्वर्ड करे आप जितना हो सके इसे शेअर करे.. धन्यवाद.)
যে ছবিগুলি শেয়ার করা হয়েছে, সেগুলি সংবেদনশীল চরিত্রের। পাঠকদের অনুরোধ করা হচ্ছে, তাঁরা যেন নিজস্ব বিবেচনা অনুসারে ছবিগুলি দেখেন।
পোস্টগুলি এখানে এবং এখানে দেখা যাবে।
আরও পড়ুন: বিভ্রান্তিকর দাবি সহ ভাইরাল তামিলনাড়ুর মহিলা দাহ-কর্মী পি জয়ন্তীর ছবি
তথ্য যাচাই
বুম প্রতিটি ছবিকে আলাদা ভাবে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখতে পায় যে, ঠাণ্ডা পানীয়ে জীবাণু মেশানোর দাবির সঙ্গে ছবিগুলির কোনও সম্পর্ক নেই।
প্রথম ছবি
এই ছবিটিতে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা ২০২০ সালে এএফপি-র করা একটি তথ্য যাচাইয়ের সন্ধান পাই। তখন একটি ভিন্ন ক্যাপশনের সঙ্গে এই ছবিটি ভাইরাল হয়েছিল। তখন এএফপি জানায় যে ছবিটির সঙ্গে ক্যাপশনের কোনও সম্পর্ক নেই।
সেই তথ্যযাচাইয়ে এএফপি ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে ডেকান হেরাল্ডে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের উল্লেখ করে। সেই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছিল যে তেলঙ্গানার সূর্যপেট অঞ্চলে এক পরিবারের ছয় সদস্য কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেন।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, মোটা অঙ্কের দেনা পরিশোধ না করতে পেরেই পরিবারটি এমন চরম পদক্ষেপ করে। ছয় মৃতের মধ্যে দুই জন মহিলা ও দুই জন শিশু।
দ্বিতীয় ছবি
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা ২০২০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ইউটিউবে আপলোড করা একটি ভিডিওর হদিশ পাই, যার শিরোনাম ছিল 'বিষাক্ত কোলা!! জনপ্রিয় ঠাণ্ডা পানীয়ের পর্দা ফাঁস'। সেই ভিডিওর থাম্বনেল হিসেবে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছিল, সেটিই এখন ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু এই ভিডিওতে ভাইরাস মিশ্রিত ঠাণ্ডা পানীয়ের কোনও উল্লেখ নেই। সিটি ৪২ নামে এই ইউটিউব চ্যানেলটি পাকিস্তানের লাহোর থেকে পরিচালিত হয়।
এই ভিডিওটির সূত্র ধরে আমরা 'পাকিস্তানে নকল কোকা কোলা কোম্পানি' দিয়ে একটি কিওয়ার্ড সার্চ করে, এবং দেখি যে, Pak101 নামের একটি ওয়েবসাইটে ২০১৫ সালে ছবিটি প্রকাশিত হয়েছিল সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, এটি পাকিস্তানের গুজরানওয়ালার বৈগপুর গ্রামে এক নকল কোলা কোলা কারখানায় পুলিশি হানার ছবি।
ওয়েবসাইটিতে এই হানার অন্য ছবিও রয়েছে।
তৃতীয় ছবি
এই ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা টুইটারে ২০১৫ সালে প্রকাশিত একই ধরনের ছবির সন্ধান পাই।
এই ছবিটি কোথা থেকে এসেছে, বুম নিরপেক্ষ ভাবে তা যাচাই করতে পারেনি।
চতুর্থ ছবি
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা তেলুগু তথ্য যাচাই ওয়েবসাইট ফ্যাক্টলি-তে ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের সন্ধান পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদনে হিন্দি ওয়েবসাইট গোরখপুর টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনের উল্লেখ ছিল, যাতে এই ছবিটি এই রকম আরও কয়েকটি ছবির সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছিল।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছিল যে ছবিগুলি উত্তরপ্রদেশের সিদ্ধার্থনগরের একটি ঘটনার। সেখানে একটি গাড়ি রাপ্তি নদীতে পড়ে যায়। ঘটনায় দুই মহিলার মৃত্যু ঘটে, কিন্তু গাড়ির চালক বেঁচে যান। এক অপ্রাপ্তবয়স্কের দেহের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
আমরাও আরও খোঁজ করি যে, হায়দরাবাদ পুলিশ ভাইরাস-মিশ্রিত ঠাণ্ডা পানীয়ের বিষয়ে সতর্কবার্তা জারি করেছে, এমন কোনও সংবাদ প্রতিবেদনের সন্ধান পাওয়া যায় কি না। তেমন কোনও সংবাদ প্রতিবেদন আমাদের চোখে পড়েনি। তবে এই দাবিটিকে নাকচ করে দেওয়া বেশ কিছু তথ্য যাচাই প্রতিবেদনের খোঁজ পাওয়া যায়।
দ্য নিউজ মিনিট-এ ১৪ জুলাই ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয় যে, হায়দরাবাদ সিটি পুলিশ তাদের সম্বন্ধে এই ভুয়ো খবরটিকে নাকচ করে একটি বিবৃতি দিয়েছে।
ইবোলা ভাইরাস কি?
১৯৭৬ সালে প্রথম ইবোলা ভাইরাস রোগ ধরা পড়ে। দক্ষিণ সুদান ও ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো-তে একই সঙ্গে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে। কঙ্গোতে এই রোগ ছড়িয়েছিল ইবোলা নদীর পার্শ্ববর্তী একটি গ্রামে। সেখান থেকেই রোগটির নামকরণ হয়। ২০১৪-১৬ সালের মধ্যে পশ্চিম আফ্রিকা ইবোলার যে সংক্রমণ হয়, ১৯৭৬ সালের পর সেটাই সবচেয়ে বড়। বন্য জন্তু থেকে এই রোগটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তবে, এক বার মানুষের দেহে ঢুকলে তা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রমিত হতে পারে।
আরও পড়ুন: না, এটি সোনিয়া গাঁধীর সাথে বোফর্স কাণ্ডের ওট্টাভিও কোয়াত্রুচি ছবি নয়