একটি স্ক্রিনশটে দেখা যাচ্ছে ভারতের নির্বাচনী বন্ডের (Electoral Bonds) ক্রেতাদের মধ্যে একজন হিসাবে 'হাব পাওয়ার কোম্পানি'-কে (Hub Power Company)। স্ক্রিনশটটি ভুয়ো দাবিসহ ভাইরাল হয়েছে যে কোম্পানিটি পাকিস্তানের (Pakistan)।
বুম দেখে যে দাবিটি ভুয়ো, পাকিস্তানের 'দ্য হাব পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড' বুমকে নিশ্চিত করে জানিয়েছে যে তারা ভারতে নির্বাচনী বন্ড ক্রয় করেনি এবং এদেশের অন্য কোনও ব্যবসায় জড়িত নয়।
সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মেনে এসবিআই ১৪ মার্চ, ২০২৪ তারিখে নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে কোম্পানিগুলির রাজনৈতিক দলগুলিকে অনুদান সংক্রান্ত সমস্ত তথ্য প্রকাশ করেছে। নথিগুলির প্রাথমিক বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এই বন্ডের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে, বিজেপি ৬০৬১ কোটি টাকার অনুদান পেয়েছিল। বিজেপির পরে, তালিকায় ছিল সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস (১৬১০ কোটি টাকা) এবং ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস (১৪২২ কোটি টাকা)।
সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হয়েছে যে পাকিস্তানের হাব পাওয়ার কোম্পানি নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে ৯৫ লক্ষ টাকা দান করেছে। এক্স-এর একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে এই অর্থ কংগ্রেসকে অনুদান করা হয়েছিল এবং ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "পুলওয়ামা হামলার পরপরই, পাকিস্তানের পাওয়ার কোম্পানি হাব পাওয়ার কোম্পানি বৈদ্যুতিক বন্ড কেনে এবং একটি ভারতীয় রাজনৈতিক দলকে দান করে। কিন্তু তিনি কোন দলকে অনুদান দিয়েছেন তা জানতে, একই তারিখে অনুদানগুলির ধরণ লক্ষ্য করুন। অর্থাৎ, পাকিস্তানের পাওয়ার কোম্পানি পুলওয়ামা হামলার পরপরই কংগ্রেসকে ১০ কোটি টাকারও বেশি অনুদান দিয়েছে।"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন এবং আর্কাইভের জন্য এখানে ক্লিক করুন।
অপরদিকে, ফেসবুকে কংগ্রেসের চণ্ডীগড় হ্যান্ডেল কোনও রাজনৈতিক দলের নাম না করেই কীভাবে একটি পাকিস্তানি সংস্থা বন্ড কিনেছিল সে সম্পর্কে একই দাবি করেছে।
পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
এক্স-এ অন্য একটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে বিজেপি এই অনুদানে উপকৃত হয়েছিল এবং ক্যাপশন হিসাবে লেখা হয়েছে, "#বিজেপি: দ্য পাকিস্তান এজেন্ট কনফার্মড!!! *** পাকিস্তানের কোম্পানি, হাব পাওয়ার কোম্পানি, নির্বাচনী বন্ড দান করেছিল #পুলওয়ামা হামলার কয়েক সপ্তাহ পরেই! যখন সমগ্র দেশ ৪০ জন সাহসী সেনার মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত ছিল, তখন কেউ পাকিস্তান থেকে আসা অর্থ উপভোগ করছিল। এখন আপনি বুঝতে পারছেন কেন পুলওয়ামা হামলার কোনও সঠিক তদন্ত করা হয়নি এবং কোনও অপরাধী এখনও ধরা পড়েনি। #নির্বাচনীবন্ডকেস"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন এবং আরকাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে যে পাকিস্তানের দ্য হাব পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এসবিআইয়ের থেকে নির্বাচনী বন্ড ক্রয় করেনি।
আমরা পাকিস্তানের হাব পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ওয়েবসাইট যাচাই করে দেখেছি যে কোম্পানিটির নাম নির্বাচনী বন্ডের নথিতে উল্লিখিত নামের থেকে একটু আলাদা।
পাকিস্তানের কোম্পানির পুরো নাম 'দ্য হাব পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড' কিন্তু, নির্বাচনী বন্ড নথিতে 'হাব পাওয়ার কোম্পানি' হিসাবে উল্লেখ করা আছে। নিচে একটি তুলনামূলক ছবি দেওয়া হল যেখানে এই পার্থক্য স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে।
উপরন্তু, বুম পাকিস্তানের দ্য হাব পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের চিফ অফ স্টাফ এবং হেড অফ বিজনেস পারফরমেন্সের সারশ সেলিমের যোগাযোগ করলে তিনি ভাইরাল দাবিগুলি অস্বীকার করেছেন। দুটি কোম্পানির নামের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে সেলিম বলেন, "এটি ভারতের কোনও কোম্পানি হতে পারে। আমরা জানতামই না যে এই ধরনের একটি কোম্পানি আছে এবং তাদের সাথে আমাদের কোনও সংযোগ নেই। আমরা ভারতকে এখন বা অতীতে কোনও অর্থ প্রদান করিনি।"
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা দরকার, যে একটি বিদেশী কোম্পানি তার ভারতীয় সহায়ক সংস্থাগুলির মাধ্যমে এসবিআই থেকে নির্বাচনী বন্ড কিনতে পারে। কিন্তু, সেলিম বুমকে নিশ্চিত ভাবে জানিয়েছেন যে দ্য হাব পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের ভারতে কোনও সহায়ক সংস্থা নেই।
এখন পর্যন্ত আমরা যা জানি
এরপর, আমরা ভারতে কোনও হাব পাওয়ার কোম্পানি আছে কিনা জানতে অনুসন্ধান করি এবং ইন্ডিয়ামার্টে একটি তালিকাভুক্ত কোম্পানি পাই। সেখান থেকে আমরা জানতে পারি যে কোম্পানিটি বৈদ্যুতিক সরবরাহ নিয়ে কাজ করছে। তালিকায় কোম্পানির জিএসটি নম্বর, 07BWNPM0985J1ZX, দেওয়া রয়েছে।
এই জিএসটি নম্বরের সুত্র ধরে, আমরা সরকারের পণ্য ও পরিষেবা কর পোর্টালে এই কোম্পানিটি খুঁজে দেখি। আমরা দেখতে পাই যে কোম্পানির রেজিস্ট্রি করা ঠিকানা দিল্লিতে।
আমরা আরও দেখতে পাই যে জিএসটি পোর্টালে রবি মেহরাকে ব্যবসার মালিক হিসাবে নামকরণ করা হলেও, ইন্ডিয়ামার্টের তালিকায় মালিকের নাম মনীশ কুমার। আমরা ইন্ডিয়ামার্টের তালিকার সাথে যুক্ত উভয় নম্বরেই যোগাযোগ করার চেষ্টা করি, কিন্তু সেগুলির কোনটাই আর চালু নেই। কোম্পানির জিএসটি রেজিস্ট্রেশনে যে তারিখে কার্যকর হয়েছিল, নভেম্বর ১২, ২০১৮, সেই তারিখই তার জিএসটি স্ট্যাটাস বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু, হাব পাওয়ার কোম্পানির দ্বারা নির্বাচনী বন্ডের তথাকথিত ক্রয় হয় কয়েক মাস পরে, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে।
বুম দিল্লির এই হাব পাওয়ার কোম্পানির ব্যাপারে আর কোনও তথ্য খুঁজে পায়নি, এটিই একমাত্র তথ্য যা অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়াও, হাব পাওয়ার কোম্পানির কাছ থেকে কংগ্রেস বা বিজেপির এই অনুদান পাওয়ার দাবিটি বিভ্রান্তিকর কারণ এসবিআই দ্বারা প্রকাশিত তথ্য থেকে কোন দল কার কাছ থেকে অর্থ পেয়েছে এ সম্পর্কে কিছু জানা যায় না।
এসবিআই দ্বারা প্রদত্ত প্রথম নথিতে ক্রেতাদের বিবরণ এবং তারা যে তারিখে বন্ড কিনেছিল সে বিষয়ে তথ্য মিলেছে। দ্বিতীয় নথি থেকে জানতে পারা যায় যে কোন তারিখে প্রতিটি রাজনৈতিক দল টাকা নিয়েছে এবং তাদের সংশ্লিষ্ট পরিমাণ। তবে, উভয় নথি থেকেই একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অনুপস্থিত, তা হল প্রতিটি ক্রয় এবং নগদকরণের জন্য একটি অনন্য শনাক্তকরণ নম্বর, যা মূলত রাজনৈতিক দলগুলির সাথে অনুদানকারীদের যোগ করতে সাহায্য করবে।
এই শনাক্তকরণ নম্বর ছাড়া, হাব পাওয়ার কোম্পানি থেকে কোন দল অনুদান পেয়েছে তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
১৫ মার্চ তারিখে, প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের একটি বেঞ্চ এসবিআইকে এই অনন্য সনাক্তকরণ নম্বরগুলি প্রকাশ করার নির্দেশ দেয়। বিষয়টি এখন ১৮ মার্চ তারিখ পর্যন্ত পিছানো হয়েছে।