প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এস কৃষ্ণমূর্তির (TS Krishnamurty) নামে চালানো একটি ভুয়ো উদ্ধৃতি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা হয়েছে, যাতে নাকি তিনি দাবি করেছিলেন, ভারতীয় জনতা পার্টি গুজরাত (Gujarat) ও হিমাচল প্রদেশে (Himachal Pradesh) ইভিএম (EVM Hacking) কারচুপি করে ভোটে জিতেছিল। একটি সংবাদপত্রের ক্লিপিং-এর চেহারায় উদ্ধৃতিটি ভাইরাল করা হয়েছে।
বুম কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি গোটা বিষয়টিকে ভুয়ো বলে উড়িয়ে দেন। শুধু তাই নয়, তিনি এই ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ নথিভুক্ত করার কথাও বলেন।
এমন সময়ে এই ভুয়ো উদ্ধৃতিটি ভাইরাল করা হয়েছে, যখন পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে বিধানসভার নির্বাচন চলছে। ভোটগ্রহণ চালু হতেই বৈদ্যুতিন ভোটযন্ত্র ইভিএম আবার সংবাদের শিরোনামে চলে এসেছে। অসম বিধানসভার পাথারকান্দি কেন্দ্রে জনৈক বিজেপি প্রার্থীর গাড়িতে ইভিএম যন্ত্র পাওয়া গিয়েছে। এর পরেই নির্বাচন কমিশন ৪ জন আধিকারিককে সাসপেন্ড করে এবং রাতাবাড়ি আসনে পুনর্নির্বাচনের নির্দেশ দেয়।
ভাইরাল হওয়া পোস্টটি একটি সংবাদপত্রের ক্লিপিং শেয়ার করেছে, যার শিরোনাম হল: "বিজেপি ইভিএম যন্ত্রে কারসাজি করে গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশের ভোটে জিতেছেঃ প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এস কৃষ্ণমূর্তি।"
এক টুইটার-ব্যবহারকারী লিখেছেন—'ভাগ্যিস পল এই লিফ্টটা দিয়েছিল, নওয়াজ শরিফ যদি এটা দিত, তাহলে এতক্ষণ তাকে কমিশন অসম থেকে নির্বাচিত এমএলএ ঘোষণা করে দিত!নির্বাচন কমিশন তার বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক দিন আগেই হারিয়েছে, এবার তা আবার নতুন করে প্রমাণিত হল!'
পোস্টদুটি আর্কাইভ করা আছে এখানে ও এখানে।
আরও পড়ুন: না, বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ের গাড়ির কাঁচ ভেতর থেকে ভাঙা হয়নি
তথ্য যাচাই
বুম খোঁজখবর করে দেখেছে, পোস্টটি পুরনো, ২০১৭ সাল থেকে সোশাল মিডিয়ায় রয়েছে। আমরা ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বরের একটি ফেসবুক পোস্ট দেখি, যা ডেইলিগ্রাফ ওয়েবসাইটের একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করেছে।
ডেইলিগ্রাফের ওই প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়েছে— "ইভিএমে কারিকুরি করে বিজেপি গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশের নির্বাচন জিতেছে, প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার টি এস কৃষ্ণমূর্তি নিজেই এ কথা বলেছেন । নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিজেপির এই মধুচন্দ্রিমা আর বেশি দিন চলবে না, কেননা এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই সন্দেহ ঘনাতে শুরু করেছে...।"
(মূল হিন্দিতে: गुजरात और हिमाचल प्रदेश का चुनाव बीजेपी ने ईवीएम हेकिंग से जीता है – टी एस कृष्णमूर्ति पूर्व चुनाव आयुक्त...बीजेपी और चुनाव आयोग की सांठ गाँठ ज़्यादा दिन छुपने वाली नहीं है. ईवीएम हैकिंग को लेकर संदेह के दायरे में आई बीजेपी के लिए आने वाले दिन बहुत ही बुरे हो सकते हैं क्यूंकि)
ডেইলিগ্রাফের প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয় ২১ ডিসেম্বর আর গুজরাত ও হিমাচলের নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হয় ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৭।
ডেইলিগ্রাফ ওয়েবসাইটটি উঠে গেছে, এখন আর পাওয়া যায় না, কিন্তু তাতে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি ভাইরাল ক্লিপিংয়ে অক্ষরে-অক্ষরে পুনর্মুদ্রিত হয়েছে।
বুম গোটা ইন্টারনেট তন্ন-তন্ন করে খুঁজেও প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের এ ধরনের কোনও বিবৃতি পায়নি। কৃষ্ণমূর্তির সঙ্গে বুম যোগাযোগ করলে তিনি সরাসরি এই উক্তির প্রসঙ্গ অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন — "এই নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে এফআইআরও দায়ের করা হয়েছে । এর আগেও এটিকে ভুয়ো খবর বলে সনাক্ত করা হয়েছে এবং সেইমর্মে নির্বাচন কমিশনের সরকারি ওয়েবসাইটে ১১ মার্চ ২০২১ সালে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাও গৃহীত হবে।"
টি এস কৃষ্ণমূর্তি ২০০৪ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশের ১৩ তম মুখ্য নির্বাচন কমিশনার পদ অলংকৃত করেছিলেন।
আরও পড়ুন: গুজরাতের স্টেশনে মহড়া ভিডিও ছড়াল উগ্রপন্থী হামলা বানচাল বলে