লোকসভায় দেওয়া এক ভাষণে, কংগ্রেস দলনেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী (Adhir ranjan chowdhury) দাবি করেন যে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) তাঁর শান্তিনিকেতন (Shantiniketan) সফরকালে রবীন্দ্রনাথের (Rabindranath Tagore) চেয়ারে বসেছিলেন। ৯ ফেব্রুয়ারি, অমিত শাহ অধীর চৌধুরীর ওই দাবি উড়িয়ে দেন। তাছাড়া, বিজেপি সভাপতি জগৎ প্রকাশ নাড্ডা শান্তিনিকেতনকে রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থান বলেছেন বলেও অধীর চৌধুরী যে দাবি করেছেন, সে সম্পর্কেও শাহ মন্তব্য করেন।
বুম দেখে, নাড্ডা (JP Nadda) বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথের জন্ম হয় পশ্চিমবঙ্গে। এই নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় কারণ, বিজেপি4বেঙ্গল (BJP4Bengal) তাদের বক্তব্যের ভুল উদ্ধৃতি টুইট করে। টুইটটি পরে ডিলিট করে দেওয়া হয়।
রবীন্দ্রনাথের চেয়ারে বসে অমিত শাহ রবীন্দ্রনাথের অসম্মান করেছেন: অধীর রঞ্জন চৌধুরী
৮ ফেব্রুয়ারি, লোক সভায় ভাষণ দেওয়ার সময় অধীর রঞ্জন চৌধুরী বলেন যে, রবীন্দ্রনাথের চেয়ারে বসে অমিত শাহ কবির অসম্মান করেন।
২১.২০ থেকে শুরু হওয়া ভাষণে চৌধুরীকে হিন্দিতে বলতে শোনা যায়: "এই সরকার আমাদের সকলের। আমি বলতে চাই যে, বিজেপির নেতা অমিত শাহ ও নাড্ডা সাহেব নির্বাচনের আগে বাংলায় গিয়েছিলেন। তাঁরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন। ওঁরা বলেছেন সেখানে তাঁর জন্ম হয়। এটা খুব অদ্ভুত। পড়াশোনা করে তারপর যান। জানুন কোথায় তিনি জন্মেছিলেন। আপনি হঠাৎ বলছেন, উনি শান্তিনিকেতনে জন্মেছিলেন। লোকে হাসছে। আমাদের খারাপ লাগছে এই ভেবে যে, আপনারা একটা এত বড় দেশের নেতা। আমাদের অমিত শাহ সেখানে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের চেয়ারে বসেন। জানি না লোকে আপনাকে কী বলেছিল যে আপনি তাতে বসলেন। এটা অসম্মান করার শামিল। আপনি যান। কিন্তু স্থানীয় সংস্কৃতি রীতিনীতির প্রতি নজর দিন। সেখানে বার বার যান।"
Full Viewডিসেম্বর ২০২০ তে, তাঁর শান্তিনিকেতন সফরের সময়, শাহ রবীন্দ্রনাথের চেয়ারে বসে ছিলেন, এমনই এক দাবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়। নীচের ছবিটিকে ভিত্তি করেই ওই দাবি করা হয়। তাতে শাহকে এক জায়গায় বসে ভিজিটার্স বইয়ে সই করতে দেখা যাচ্ছে।
শান্তিনিকেতনে কি অমিত শাহ রবীন্দ্রনাথের চেয়ারে বসেছিলেন?
বুম নিশ্চিত হতে পেরেছে যে, ২০ ডিসেম্বর, শান্তিনিকেতনে গিয়ে, শাহ রবীন্দ্রনাথের চেয়ারে বসেননি। উনি বসেছিলেন একটি জানলার সামনের এক জায়গায়। ৯ ফেব্রুয়ারি, লোক সভায় ভাষণ দেওয়ার সময়, শাহ স্পষ্ট করে দেন যে, উনি একটি জানালার সামনের অংশে বসেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের চেয়ারে নয়। তাঁর দাবির সমর্থনে শাহ বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী চিঠিও দেখান। তাতে উপাচার্য শাহর বক্তব্যকেই সমর্থন করেন।
চক্রবর্তীর সই-করা চিঠিতে বলা হয় যে, অতীতে বিশ্বভারতীর প্রাক্তন আচার্য জওহরলাল নেহরু, ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল ও প্রণব মুখার্জী, আর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সহ আরও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি "জানলার এক পাশে" তৈরি করা সিটে বসেছিলেন।
বুম বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রার অশোক মাহাতোর সঙ্গে যোগাযোগ করে। উনি বলেন, "ক্যাম্পাসে রবীন্দ্রনাথের চেয়ারগুলি সাদা কাপড়ে ঢাকা থাকে। এবং ওই চেয়ারে কাউকে বসতে দেওয়া হয় না। ওই সাদা কাপড় মাঝে মাঝে সরানো হয়। কিন্তু শাহর সফরের দিন সেগুলি যথাস্থানেই ছিল। ভাইরাল ছবিটিতে, জানলার সামনে তৈরি করা সিটে বসে শাহকে ভিজিটার্স বই সই করতে দেখা যাচ্ছে।"
রবীন্দ্রনাথ ব্যবহার করতেন এমনই একটি সাদা কাপড়ে ঢাকা চেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানাতেও দেখা যাচ্ছে শাহকে।
নাড্ডা কি বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে জন্মেছিলেন?
৯ ডিসেম্বর, তৃনমূল কংগ্রেসের অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল থেকে একটি টুইটের স্ক্রিনশট শেয়ার করা হয়। টুইটটি করা হয়েছিল বিজেপি4বেঙ্গল নামের যাচাই করা টুইটার হ্যান্ডেল থেকে। তাতে নাড্ডার এক উক্তি উদ্ধৃত করা হয়, যাতে উনি বলেন যে, রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে জন্মেছিলেন। ওই স্ক্রিনশটের লেখাটিতে বলা হয়, "চিন্তা আদানপ্রদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ খ্যাত। এবং বিশ্বভারতী হল রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থান।" সেটিকে ভিত্তি করে তৃণমূল ভুল তথ্য দেওয়ার জন্য নাড্ডাকে কটাক্ষ করে এবং অভিযোগ করে যে, প্রচার করার জন্য বিজেপি বহিরাগতদের নিয়ে আসছে, যাঁরা রাজ্যের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন।
বুম বিষয়টি যাচাই করে দেখে যে, নাড্ডা বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন।