সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি ভিডিওতে কিছু লোককে লাঠি দিয়ে এক নাবালিকাকে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে। এই ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে রাজস্থানে ভগবত গীতা স্পর্শ করার জন্য এক দলিত নাবালিকাকে মারধর করছে একটি রাজপুত চৌহান পরিবার।
বুম দেখে ভিডিওটি দুবছর পুরোনো এবং ঘটনাটি আমেঠীর। ওই দলিত নাবালিকাকে মোবাইল চুরির সন্দেহে মারধর করার অভিযোগে তিন যুবককে গ্রেপ্তারও করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।
৩০ সেকেন্ডের ভাইরাল ভিডিওটিতে তিন যুবককে এক নাবালিকাকে লাঠি দিয়ে মারধর করতে দেখা যায়। বুম ভিডিওটির গ্রাফিক প্রকৃতির জন্য সেটি অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই ভিডিওটি শেয়ার করে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ক্যাপশন হিসাবে লিখেছেন, “ভারতের রাজস্থানে ভাগবত গীতা স্পর্শ করায় দশ বছর বয়সী এক শূদ্র জাতের কাজের মেয়েকে বেধড়ক মারধর মারতেছে রাজপুত চৌহান পরিবার। নিম্নবর্ণের হিন্দুদের প্রতি এই হিন্দুদের কোনো সহানুভূতি নেই। কীভাবে তারা আমাদের বন্ধু হতে পারে?”
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
আরও একজন ব্যবহারকারী এই পোস্টটি শেয়ার করেছেন।
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে ভাইরাল ভিডিওটির কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ইন্ডিয়া.কম -এর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাই।
২৯ ডিসেম্বর ২০২১ সালে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের আমেঠীতে ২০১৯ সালে ঘটে। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা তার অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে এই ঘটনার নিন্দা করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছিলেন।
পোস্টটি দেখুন এখানে।
ওই প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি উত্তরপ্রদেশ পুলিশ একজন অভিযুক্তকে পকসো এবং এসসি/এসটি ধারায় গ্রেপ্তার করেছিল। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
আমরা ২৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে আমেঠী পুলিশের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে করা একটি পোস্ট দেখতে পাই। আমেঠী পুলিশ একটি প্রেস নোট পোস্ট করে জানায়, "নাবালিকাকে মারধরকারী তিন অভিযুক্ত সুরজ সোনি, রাহুল সোনি এবং শুভমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ আইপিসির ৩৪২, ৩২৩, ৩৫৪ পকসো আইনে মামলা দায়ের করেছে।”
পোস্টটি দেখুন এখানে।
আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করে ২৮ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে আজ তকের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি ঘটনাটি ঘটেছে আমেঠী কোতোয়ালি থানা এলাকার রায়পুর-ফুলওয়ারি গ্রামে। ওই গ্রামের বাসিন্দা সুরজ সোনির বাড়ি থেকে মোবাইল ফোন চুরির ঘটনা সিসিটিভিতে ধরা পড়েছিল। সিসিটিভি ফুটেজ থেকে কয়েকজন যুবক মেয়েটিকে শনাক্ত করে তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়।এরপর ওই তিন যুবকটি মেয়েটিকে নৃশংসভাবে মারধর করে এবং তার একটি ভিডিও করে।
পরে সেই ভিডিও সামাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আমেঠী পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে নির্যাতিতার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তিন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
এছাড়াও, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে প্রকাশিত টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন থেকে আমারা আমেঠী তৎকালীন সার্কেল অফিসার অর্পিত কপূরের টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া বক্তব্য পাই। তিনি জানান নাবালিকার বাবার কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরে, ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়ে। তিনি বলেন, “নাবালিকার বাবা পুলিশকে জানিয়েছিলেন তার মেয়ের মানসিক ভারসাম্যহীন এবং সে পথ হারিয়ে অভিযুক্তের বাড়িতে প্রবেশ করে। অভিযুক্তরা তাকে চোর ভেবে মারধর করে।”
কপূর আরও জানান শুভম গুপ্তা, রাহুল সোনি এবং সুরজ সোনি, তিন অভিযুক্ত যুবককেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।