একটি হোর্ডিংয়ে ছবি দেখায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল কীর্তিনগর শিল্পাঞ্চলে ডাস্টবিন বসানোর জন্য তাঁর আম আদমি পার্টির সরকারকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন (Arvind Kejriwal)। এমনই এক ছবি ভাইরাল হয়েছে সোশাল মিডিয়ায়। কিন্তু সেটি জোড়াতালি দিয়ে তৈরি।
সম্ভবতঃ দিল্লির কোনও এক মেট্রো স্টেশনের সামনে, একটি হোর্ডিং দেখা যাচ্ছে ভাইরাল ছবিটিতে। সেই হোর্ডিংয়ে লেখা, "দিল্লিকে অভিনন্দন – কীর্তি নগর শিল্পাঞ্চলে ১০টি ডাস্টবিন বসানো হয়েছে।"
(হিন্দিতে লেখা: बधाई हो दिल्ली कीर्तिनगर इंडस्ट्रियल एरिया में दस नए डस्टबिन की व्यवस्था)
বেশ কিছু ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা, যেমন কপিল মিশ্র, সর্বভারতীয় যুব সম্পাদক তেজিন্দর সিংহ বাগ্গা, এবং বিজেপির সোশাল মিডিয়ার ভারপ্রাপ্ত নেতা নবীন কুমার জিন্দল ওই ভুয়ো ছবিটি শেয়ার করেছেন। আর সেই সঙ্গে '১০টি ডাস্টবিন বসানোর কৃতিত্ব দাবি করে নিজেকেই অভিনন্দন জানানোর জন্য' অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সমালোচনা করেন।
জনস্বার্থমূলক কাজের বদলে কোটি কোটি টাকা বিজ্ঞাপনে খরচ করার অভিযোগ আম আদমি পার্টি ও ভারতীয় জনতা পার্টি, এনেছে এক অপরের বিরুদ্ধে। পোস্টগুলির আর্কাইভ দেখতে এখানে, এখানে ও এখানে ক্লিক করুন।
ছবিটি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে। সেরকম একটি পোস্টের আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাঁথির উক্তি "বাপকে গিয়ে বল" জুড়ল ত্রিপুরা সফরের সঙ্গে
তথ্য যাচাই
যাচাই করা হ্যান্ডেল থেকে টুইটগুলির উদ্দেশ্যে লেখা বেশ কিছু উত্তরে বলা হয় যে, ভাইরাল ছবিটি সম্পাদনা করা হয়েছে। নেটিজেনরা আসল হোর্ডিংয়ের ছবিটিও পোস্ট করেন। কোভিড-১৯ সংক্রমণে যাঁরা তাঁদের প্রিয়জনদের হারিয়েছেন, তাঁদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার যে সিদ্ধান্ত দিল্লি সরকার নিয়েছে, সেটিই বিজ্ঞাপিত হয়েছে ওই হোর্ডিংয়ে।
তথ্য যাচাই সংস্থা এসএম হোক্সস্লেয়ার এই ছবিটি আগেই যাচাই করেছিল। তাঁরা দেখেন, @drapr007 নামের এক টুইটার হ্যান্ডেল ওই জাল ছবিটির একটি উচ্চ রেজুলিউশনের (২০৪৮ x ২০৪৮ পিক্সেল) সংস্করণ টুইট করেছিল। টুইটের সেই ছবিটিকে বিশ্লেষণ করে আমরা তাতে অনেকগুলি অসঙ্গতি দেখতে পাই্।
আমরা দেখি, আসল লেখাটি ফোটোশপ করে মুছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ছবিটির বাঁ দিকের কোণে, সেই লেখাটির একটা অস্পষ্ট অংশ দেখতে পাওয়া যায়।
তাছাড়া, হোর্ডিংটির ওপর আলোর যে প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে, সেটি কিন্তু হিন্দিতে লেখা हो (बधाई हो) শব্দবন্ধের हो শব্দটির ওপর পড়ছে না। তা থেকে বোঝা যায় যে, লেখাটি ডিজিটাল পদ্ধতিতে আলাদা করে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও লক্ষণীয় যে, জুম করে বড় করলে দেখা যায়, ওপরের ডান দিকের কোণে দিল্লি সরকারের লোগোটি ঝাপসা দেখায়। কিন্তু আলাদা করে বসিয়ে দেওয়া লেখাটি বেশ স্পষ্ট। এই তারতম্য থেকেও বোঝা যায় যে, ছবিটি জোড়াতালি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।
ছবিটির ফরেনসিক বিশ্লেষণ
ইনভিড সরঞ্জাম ব্যবহার করে, উচ্চ রেজলিউশনের ছবিটির ফরেনসিক বিশ্লেষণ করা হয়। আমরা ভাইরাল ছবিটির 'এরর লেভেল অ্যানালিসিস (ইএলএ) ও জেপিইগ ঘোস্ট অ্যালগরিদম অ্যানালিসিস করি।
ছবিটির ইএলএ অ্যানালিসিসের ফলাফল নীচে দেওয়া হল। তাতে ছবিটির অনেক অংশে পিক্সেল অসামঞ্জস্য দেখা যাচ্ছে। লেখার জায়গাটিতেই বেশি পিক্সেল অসঙ্গতি লক্ষণীয়। তা থেকে প্রমাণিত হচ্ছে যে, ছবিটিকে ডিজিটাল উপায়ে অদল-বদল করা হয়েছে।
নীচের পরের ছবিতে ঘোস্ট অ্যালগরিদিম অ্যানালিসিসের ফলাফল দেখা যাচ্ছে। ঘোস্ট অ্যালগরিদিম অ্যানালিসিস দেখিয়ে দেয় আসল ছবিতে কোনও পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা।
ভাইরাল ছবিটির ঘোস্ট অ্যালগরিদিম অ্যানালিসিসে লেখার পিক্সেলগুলি হুলুদ ও লাল রঙে হাইলাইট হয়ে যায়। তা থেকে প্রমাণিত হয় যে, ওই অংশটি পাল্টানো হয়েছে।
এছাড়াও, সরকারের লাগানো হোর্ডিংগুলি যাচাই করতে বুম দিল্লির ৫টি মেট্রো স্টেশনে যায়। একটি স্টেশনে তোলা ছবি নীচে দেওয়া হল।
আপ হোর্ডিংয়ের বদলে-দেওয়া ছবি এই প্রথম ভাইরাল হল, এমনটা নয়। এর আগে, বুম-হিন্দি একটি পোস্টারের ভাইরাল ছবি যাচাই করে। সেটিতে রাস্তায় স্পিড-ব্রেকার বা গতি-নিয়ন্ত্রক লাগানোর জন্য অরবিন্দ কেজরিওয়াল সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে দাবি করা হয়।
(অতিরিক্ত রিপোর্টিং সুজিত এ)
আরও পড়ুন: বিশ্ব ব্যাঙ্ক থেকে ভারত সরকার গত ৭ বছরে ঋণ নেয়নি, জিইয়ে উঠল ভুয়ো দাবি