২০১৯ সালের একটি টিভি নাটকের (TV Drama) দৃশ্য এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে এবং তাতে বলা হচ্ছে মায়ানমার (Myanmar) সেনাবাহিনীকে সে দেশের লুঙ্গলার-এ ঘরবাড়ির ওপর বোমা ফেলতে দেখা যাচ্ছে।
২০২১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০ সেপ্টেম্বর, লুঙ্গলার গ্রামে মায়ানমার সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র অসামরিক মিলিশিয়া চিনল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স-এর মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয় যে, ওই সংঘর্ষের ফলে, থান্টলাঙ্গ শহর থেকে, তিয়াউ নদী পেরিয়ে, মিজোরাম-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে, প্রায় ১০০ শরণার্থী মিজোরামে প্রবেশ করেন। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, লুঙ্গলার গ্রাম ও মিজোরামের থিঙ্গসাই গ্রামের মাঝখান দিযে সীমান্তরেখা চলে গেছে।
ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "১০ সেপ্টেম্বর, মিজোরামের থিঙ্গসাই-এর লাগোয়া মায়ানমারের চিন প্রদেশের লুঙ্গলার গ্রামে বোমা ফেলা হয়; গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতির কারণে, ১৫০ জন মায়ানমার নাগরিক ভারতে চলে আসেন।"
পোস্টটি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
পোস্টটি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: তথ্য যাচাই: পার্লে-জি বিস্কুটের বাচ্চা মেয়ে কি এখন ৭০ বছরের বৃদ্ধা?
তথ্য যাচাই
বুম দেখে, ভিডিওটি ২০১৯-এ মুক্তিপ্রাপ্ত চিনা টিভি সিরিয়াল 'গ্লোরি অফ দ্য স্পেশ্যাল ফোর্সেস'-এর (স্পেশ্যাল ফোর্সের গৌরবগাথা) একটি দৃশ্য।
ভাইরাল ভিডিওটির প্রধান ফ্রেমগুলি দিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করায়, আমরা ২০১৯ সালের অগস্ট মাসে ইউটিউবে আপলোড করা ভিডিওটি দেখতে পাই। তা থেকে প্রমাণ হয় ভিডিওটি সাম্প্রতিক নয়, পুরনো।
আরও সার্চ করলে, চিনা সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত কয়েকটি লেখার লিঙ্ক পাই আমরা। সেই লেখাগুলিতে যে ছবি ছাপা হয়, সেগুলির সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওটির দৃশ্য মিলে যায়। ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর চিনা ওয়েবসাইট জিজল.কম-এ প্রকাশিত একটি লেখায় বলা হয় যে, ভিডিওটি আগেও এই মিথ্যে দাবি সমেত ভাইরাল হয়েছিল, ২০১৯ সালের ১৬ অগস্ট উত্তর মায়ানমারে সংঘর্ষের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে তাতে।২০১৯ সালের ওই লেখায়, ভিডিওটির সত্যতা খণ্ডন করা হয়।
তাতে বলা হয়, "সাঙ্ঘাই রিউমার রিফিউজাল প্ল্যাটফর্ম দেখে সেটি হল একটি টেলিভিশন সিরিয়ালের দৃশ্য। পরিচালক শু জিঝৌ সেটি প্রথম পোস্ট করেন তাঁর ব্যক্তিগত ওয়েইবো অ্যাকাউন্টে।" লেখাটিতে আরও বলা হয়, "শু জিঝৌ-এর সাম্প্রতিক ওয়েইবো থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ভিডিওটি টিভি সিরিয়াল 'গ্লোরি অফ স্পেশ্যাল ওয়ারফেয়ার' থেকে নেওয়া একটি ক্লিপ।"
এর পর আমরা, তাইওয়ানের তথ্য-যাচাই ওয়েবসাইট তাইওয়ান ফ্যাক্টচেক সেন্টার-এর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁদের সঙ্গে চিনা সোশাল মিডিয়া ওয়েবসাইট ওয়েইবো'র যোগাযোগ আছে।
তাইওয়ান ফ্যাক্টচেক সেন্টার আমাদের জানায়, সিরিয়ালের পরিচালক ওই একই ভিডিও তাঁর অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে আপলোড করেন। তাইওয়ান ফ্যাক্টচেক সেন্টার আমাদের পিয়াও-র করা একটি পোস্টের স্ক্রিনশট পাঠায়। ভাইরাল ভিডিওটির সত্যতা খণ্ডন করে পিয়াও তাঁদের ওয়েইবো অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেন।
পিয়াও-র পোস্টে বলা হয় যে, ভাইরাল ভিডিওটিতে যা দেখা যাচ্ছে, তা হল একটি চিনা সিরিয়ালের দৃশ্য। পিয়াও হল চিনের এক সংস্থা যা সোশাল মিডিয়ায় মিথ্যে খবর খণ্ডন করে।
ওয়েইবো'র স্ক্রিনশটে যা লেখা ছিল, আমরা তা গুগল লেন্সের সাহায্যে অনুবাদ করি। তাতে বলা হয়, "'উত্তর মায়ানমারের যুদ্ধে সন্ত্রাসবাদীদের বোমা বিস্ফোরণের দৃশ্য' - এই শীর্ষকের ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। ওটা আসলে একটি শুটিংয়ের দৃশ্য। সম্প্রতি, 'উত্তর মায়ানমারের যুদ্ধে সন্ত্রাসবাদীদের বোমা বিস্ফোরণের দৃশ্য', এই দাবি সমেত একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি দেখার পর কিছু নেটিজেন স্বস্তি প্রকাশ করে বলেছেন যে, তাঁরা চিনে বসবাস করার জন্য আনন্দিত! কিন্তু ভিডিওটি আসলে একটি ফিল্ম ও টেলিভিশন নাটক।"
এছাড়াও আমরা ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ওই ভিডিও ক্লিপটি সম্পর্কে পিয়াও-র প্রকাশিত একটি লেখা দেখতে পাই। তাতে বলা হয়, শু জিঝৌ পরিচালিত টিভি সিরিয়াল 'গ্লোরি অফ দ্য স্পেশ্যাল
ফোর্সেস'-এর একটি দৃশ্য দেখা যচ্ছে ভিডিওটিতে। পিয়াও-র লেখায়, পরিচালক জিঝৌ-এর ওয়েইবো পোস্টটিও তুলে দেওয়া হয়। ওই পোস্টটিতে পরিচালক একই ভিডিও আপলোড করেন ও ক্যাপশনে লেখেন, "আরও একটি দৃশ্য সম্পূর্ণ হল।"
টিভি সিরিয়ালটি সম্পর্কে আইএমডিবি ওয়েবসাইটে বিস্তারিত জানা যাবে।
আরও পড়ুন: তালিবানপন্থী মহিলাদের বৈঠকে বোরখা পরা পুরুষের ভাইরাল ছবিটি কারসাজি করা