খালসা এইডের (khalsa Aid) স্বেচ্ছাসেবকদের জম্মু কাশ্মীর (Jammu Kashmir) এবং বিহারের (Bihar) বন্যা (Flood) বিধ্বস্ত অঞ্চলের মানুষকে উদ্ধার করার পুরনো ছবি ৭ ফেব্রুয়ারি উত্তরাখণ্ডে (Uttarakhand) যে হিমবাহ বিস্ফোরণ (Glacier Burst) ঘটে, তার ছবি বলে নতুন করে শেয়ার করা হয়েছে।
ছবিতে শিখ (Sikh) পুরুষদের হাঁটু সমান জমা জলের মধ্যে মানুষকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে দেখা যাচ্ছে। উত্তরাখণ্ডে সাম্প্রতিক হিমবাহ বিস্ফোরণের পর এই ছবি শেয়ার করা হয়েছে এবং সঙ্গে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে যে, এই বিপর্যয়ে সরকারি সাহায্যের সঙ্গে সঙ্গে খালসা এইডের পক্ষ থেকেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বুম অনুসন্ধান করে দেখে যে, এই ছবিগুলি পুরনো এবং উত্তরাখণ্ডের সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের সঙ্গে ছবিগুলির কোনও সম্পর্ক নেই। ছবিগুলির মধ্যে একটি ২০১৪ সালের জম্মু কাশ্মীরের বন্যা (Jammu Kashmir Flood) বিপর্যয়ের সময় ত্রাণকার্যের (Relief Work) ছবি, আর অন্যটি ২০১৯ সালের বিহারের বন্যার (Bihar Flood) ছবি।
খালসা এইড ইউকের (United Kingdom) শিখদের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, যারা পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় প্রাকৃতিক বা অন্য কোনও বিপর্যয়ে আক্রান্ত মানুষদের সাহায্য করে। এই সংস্থার ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে "এটি পৃথিবীর প্রথম মানবিক সাহায্যকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা, যারা শিখ নীতি থেকে নিজেদের অনুপ্রেরণা নিয়ে কাজ করছে।"
বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে যে, উত্তরাখণ্ডের হিমবাহ বিপর্যয়ে আক্রান্তদের সাহায্য করার জন্য এই সংস্থা তাদের প্রথম স্বেচ্ছাসেবী দলকে ইতিমধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছে।
বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে যে, উত্তরাখণ্ডের হিমবাহ বিপর্যয়ে আক্রান্তদের সাহায্য করার জন্য এই সংস্থা তাদের প্রথম স্বেচ্ছাসেবী দলকে ইতিমধ্যে পাঠিয়ে দিয়েছে।
সম্প্রতি চলা কৃষক বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে টুইটার এবং ফেসবুকে এই ছবিটির সঙ্গে যে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, তাতে সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকদের 'সন্ত্রাসবাদী' বলে অভিহিত করা হয়েছে। ওই ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "আমরা আমদের 'সন্ত্রাসবাদীদের' নিয়ে গর্বিত, তারা গতকাল উত্তরাখণ্ডে পৌঁছে গিয়েছে। 'সন্ত্রাসবাদীদের' নিয়ে গর্বিত (খালসা এইড)#কৃষক বিক্ষোভ#আলোচনার জন্য কৃষকরা প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাচ্ছে।"
টুইটটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
অন্য ছবিটি খালসা এইডের ত্রাণকার্যের এবং ছবিটি উত্তরাখণ্ডের সাম্প্রতিক বন্যার ছবি বলে দাবি করা হয়েছে। এই ছবিটি ভাইরাল হয়েছে। স্ক্রিনশটে পাঞ্জাবি ভাষায় লেখা হয়েছে, "সন্ত্রাসবাদীরা উত্তরাখণ্ডে পৌঁছে গিয়েছে।… স্যার আমরা খারাপ লোক এবং আমদের কাজও খারাপ। #উত্তরাখণ্ডের জন্য প্রার্থনা করুন#কৃষকবিক্ষোভ।
(পাঞ্জাবী ভাষায় লেখা মূল টেক্সটঃਉਤਰਾਖੰਡ ਚ ਆਤੰਕਵਾਦੀ ਪੁੱਜ ਗਏ …..ਅਸੀ ਮਾੜੇ ਲੋਕ ਆ ਜਨਾਬ ਤੇ ਕੰਮ ਵੀ ਮਾੜੇ ਵਕਤ ਚ ਈ ਆਈ ਦਾ … #PrayForUttarakhand #FarmersProtests")
(পাঞ্জাবী ভাষায় লেখা মূল টেক্সটঃਉਤਰਾਖੰਡ ਚ ਆਤੰਕਵਾਦੀ ਪੁੱਜ ਗਏ …..ਅਸੀ ਮਾੜੇ ਲੋਕ ਆ ਜਨਾਬ ਤੇ ਕੰਮ ਵੀ ਮਾੜੇ ਵਕਤ ਚ ਈ ਆਈ ਦਾ … #PrayForUttarakhand #FarmersProtests")
তথ্য যাচাই
বুম অনুসন্ধান করে দেখতে পায় যে, ছবিটি আসলে ২০১৪ সালে জম্মু কাশ্মীরে যখন বন্যা হয় সেই সময়ের। অন্যটি ২০১৯ সালে বিহারের বন্যা পরিস্থিতে খালসা এইড-এর করা ত্রানকার্যের ছবি।
ছবি ১
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা ২০১৮ সালের ১৮ আগস্ট প্রকাশিত নিউজ১৮'র একটি চিত্রপ্রতিবেদন দেখতে পাই। ওই ছবির (ছবি নং ৮/৯) বর্ণনায় লেখা হয়, "খালসা এইডের স্বেচ্ছাসেবকরা বুকসমান জলে দাঁড়িয়ে বন্যাবিধ্বস্ত অঞ্চলের মানুষদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস এবং খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করছে। (ছবি নিউজ১৮/ পঙ্কজ তোমার)"।
২০১৮ সালের ২০ আগস্ট প্রকাশিত তাদের একটি প্রতিবেদনে দ্য ট্রিবিউন ইন্ডিয়াও এই ছবিটি প্রকাশ করে।
বুম খালসা এইড ইন্টারন্যাশনালের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজেরও খোঁজ করে এবং এই ছবিটি দেখতে পায়। সেখানে ওই ছবিটি ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আপলোড করা হয় এবং সঙ্গে ক্যাপশন দেওয়া হয়, "আমরা খালসা এইডকে এবং জেকেএসপি স্বেচ্ছাসেবকদের স্যালুট জানাই। গত বছর কাশ্মীরের বন্যায় বন্যাবিধ্বস্ত অঞ্চলে তাঁরাই প্রথম সাহায্য করতে পৌঁছান। ভীষণ প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এই স্বেচ্ছাসেবকরা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। দারুণ কাজ! ধন্যবাদ www.khalsaaid.org"।
ছবি ২
বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখতে পায় ছবিটি আসলে বিহারের। ছবিটি খালসা এইডের টুইটার হ্যান্ডেলেও দেখা যাচ্ছে। সেখানে ছবিটি ২০১৯ সালের ৪ অক্টোবর পোস্ট করা হয় এবং সঙ্গে ক্যাপশন দেওয়া হয়, বিহার বন্যা আমাদের @khalsaaid_india দল বিহারের পাটনায় পৌঁছেছে। আমরা সেখানে জরুরিকালীন সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছি সেই সঙ্গে বন্যা বিধ্বস্ত অঞ্চলের প্রকৃত অবস্থা পর্যালোচনা করছে। আপনাদের সাহায্যের জন্য ধন্যবাদ। #বিহারবন্যা#সেবা#খালসাএইডিন্ডিয়া# খালসাএইড"।
বুম ছবিটি ভালো করে দেখে এবং ত্রাণের গাড়ির ব্যানারের উপর 'ত্রাণ ২০১৯' কথাটি লেখা রয়েছে দেখতে পায়।
২০২১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলায় হিমবাহে ধস নামায় অলকানন্দা ও ধৌলিগঙ্গা নদীতে বন্যা হয়। এই ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণ যায় এবং ওই অঞ্চলের জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওই জেলার বেশি উচ্চতার অঞ্চলে হিমবাহ বিস্ফোরণের ফলে এই বিপর্যয় হয় বলে মনে করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে, এবং ২০০-র বেশি মানুষের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।