‘দ্য কেরালা স্টোরি’ (The Kerala Story) ফিল্মটির নির্মাতারা দাবি করেছেন যে, বিগত ১০ বছরে, কেরলের ৩২ হাজার হিন্দু ও খ্রিস্টান মহিলা নিরুদ্দেশ হয়েছেন। এবং তাঁদের সিরিয়া ও আফগানিস্তানে পাচার করে আইএসআইএস-এর (ISIS) মতো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের কাছে যৌনদাসী হিসেবে বিক্রি করা হয়।
তাঁরা এও দাবি করেছেন যে, ‘লাভ-জেহাদ’-এর মাধ্যমে এই কাজ করা হয়েছে। হিন্দু দক্ষিণপন্থীরা দাবি করেন, লাভ-জেহাদ হল একটি চক্রান্ত, যেখানে মুসলমান পুরুষরা, হিন্দু মহিলাদের প্রেমের জালে জড়িয়ে তাঁদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করেন।
বুম দেখে, ‘দ্য কেরালা স্টোরি’র দাবি অতিরঞ্জিত। দেখা যায় যে, ভারত সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার দেওয়া তথ্য ৩২ হাজার সংখ্যাটিকে সমর্থন করে না।
কিছু কিছু ঘটনার খবর অবশ্যই প্রকাশিত হয়েছে (পড়ুন এখানে, এখানে ও এখানে)। চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কেরলের মহিলাদের সঙ্গে প্রতারণা অথবা আইএসআইএস-এর প্রতি তাঁদের দুর্বলতার ঘটনা তদন্ত করছে আইন রক্ষাকারী সংস্থাগুলি। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই ওই বিপুল পরিসংখ্যানের সমর্থনে কোনও তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
বুম দেখে, চিত্র নির্মাতারা যে যুক্তি দিয়েছেন, তা হল ‘এক্সট্রাপোলেশন’-নির্ভর বা নির্দিষ্ট কোনও পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে ভবিষ্যতের সম্ভাব্য সংখ্যা হিসেব করার চেষ্টা। সেই সঙ্গে রয়েছে এমন কিছু সূত্রের উল্লেখ যেখান থেকে তথ্যের অধিকার আইনে (আরটিআই) তথ্য পাওয়ার জন্য আবেদন করা হলেও, কোনও উত্তর মেলেনি।
৫ মে, ছবিটি মুক্তি পাওয়ার কথা। সেই জন্য ছবিটির ট্রেলার দেখানো হয় সম্প্রতি। তার পরই তৈরি হয় বিতর্ক। একটি ফেসবুক পোস্টে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ফিল্মটির তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর পার্টি কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কক্সিস্ট) ও রাজ্যের বিরোধী শক্তি কংগ্রেসও সমালোচনা করে ছবিটির।
‘দ্য কেরালা স্টোরি’র মুক্তি বন্ধ করার চেষ্টা
ছবিটির মুক্তি বন্ধ করার আর্জি জানিয়ে দুটি মামলা করা হয় সুপ্রিম কোর্টে। লাইভ ল’র রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রথম মামলাটিতে আইনজজীবী নিজাম পাশা তাঁর বক্তব্যে বলেন যে, ছবিটি হল “ঘৃণা-ভাষ্যর সবচেয়ে কদর্য নিদর্শন”। এবং “অডিও-ভিসুয়্যাল মাধ্যমের মধ্যে দিয়ে বিদ্বেষ ছড়ানোর প্রোপাগ্যান্ডা”। আইনজীবী কপিল সিব্বলও ওই মামলায় অংশ নেন। কোর্ট কিন্তু মামলাটি গহণ করতে অস্বীকার করে।
আবেদনকারীদের হাইকোর্ট বা অন্য কোনও উপযুক্ত ফোরামের দ্বারস্থ হতে বলা হয়। ফিল্মটির ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে, জামায়েতুল উলেমা-এ-হিন্দও কোর্টে আবেদন করে। গত নভেম্বরে, আদাহ শর্মা অভিনীত, সুদীপ্ত সেন পরিচালিত ও বিপুল শাহ প্রযোজিত প্রথম ট্রেলারটি বাজারে ছাড়া হলে, তখনও আইনের নজরে আনা হয় সেটিকে। ট্রেলারটির বিরুদ্ধে কেরলের রাজ্য পুলিশের তরফ থেকে এফআইআরও করা হয়।
ট্রেলারটিতে শালিনি উন্নিকৃষ্ণনের চরিত্রে শাহকে দেখা যায়। উন্নিকৃষ্ণন হলেন একজন নার্স যিনি, নাম পাল্টে ফাতিমা-বা পরিচয়ে আফগানিস্তানে আইএসআইএস-এর একটি ক্যাম্পে রয়েছেন। উনি বলেন, তাঁর মতো ৩২,০০০ মহিলাকে সিরিয়া ও ইয়েমেন-এ পাচার করা হয়েছে। এবং ওই পাচারের কেন্দ্রস্থল হল কেরল।
ফিল্মটির সঙ্গে যাঁরা জড়িত, সংখ্যাটি সম্পর্কে তাঁরা কী বলেন?
বৈদ্যুতিন সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া ও ৩০ এপ্রিলে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারে ৩২,০০০ সংখ্যাটি সম্পর্কে আদাহ শর্মা বলেন, “গল্পটা সত্যিই ভয়াবহ। কিন্তু সেটিকে প্রোপাগ্যান্ডা বলা বা হারিয়ে যাওয়া মহিলাদের কথা ভাবার আগে সংখ্যাটি নিয়ে বিতর্ক করা আরও ভয়াবহ। প্রতিক্রিয়াটা ঠিক উল্টো হওয়া উচিত। প্রথমে নিরুদ্দেশ মহিলাদের সম্পের্কে আলোচনা হওয়া উচিত ছিল। তারপর সংখ্যাটা নিয়ে ভাবা।”
তিনি আরও বলেন, “ফিল্মটি দেখার পর সংখ্যাটা নিয়ে আর আলোচনা করবে না কেউ।” পাচারের শিকার হয়েছেন এমন একজনের কাছ থেকে পাওয়া লিখিত বার্তাকে ভিত্তি করেই এই ছবির প্রস্তুতি শুরু, জানান শাহ।
এখানে তা পড়তে পারেন।
‘দ্য নিউ ইন্ডিয়ান’-এর রোহান দুয়াকে দেওয়া বিপুল শাহ’র একটি সাক্ষাৎকারের অংশে তাঁকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়েছে, “আত্মঘাতী বোমা হিসেবে কাজ করার জন্য কেরল থেকে মধ্যপ্রাচ্যে পাচার হওয়া মহিলাদের একটা সংখ্যা দেওয়া হয়েছে – ৩২,০০০। ট্রেলার মুক্তির পর, ওই সংখ্যাটি সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। আমাদের কাছে অনেক প্রমাণ আছে। কিন্তু তথ্য জানার অধিকার আইনের ধারা অনুযায়ী আবেদন করি আমরা। তার ফলে, আমাদের একটি ওয়েবসাইটের লিঙ্ক দেওয়া হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথা হল, দেখা যায়, ওই ওয়েবসাইটটির কোনও অস্তিত্বই নেই। এই বিষয়টিকে যে যার মতো করে ব্যাখ্যা করতে পারেন।”
পরিচালক সুদীপ্ত সেন বলেন, “আমরা কেরলের ১৪টি জেলার পুলিশ সদর দপ্তরে যাই। বিগত ১০ বছরে কত জন মহিলা নিরুদ্দেশ হয়েছেন, তার সংখ্যা জানতে চাই আমরা। কত জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, কত মহিলা নথিভুক্ত হয়েছেন, এ সবই জানতে চাওয়া হয়। আমাদের বলা হয়, কেরলের ডিজিপি ১৫ দিনের মধ্যে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তারপর ৪ মাস কেটে গেলেও, কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।”
এখানে তা পড়া যাবে।
শর্মার সঙ্গে দেওয়া একই সাক্ষাৎকারে সংখ্যাটি ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো সম্পর্কে শাহ বলেন, “যে কোনও মানুষের কাছেই এই ঘটনা হৃদয়বিদারক মনে হবে। এটি একটি মানবিক ট্র্যাজিডি। আমাদের দেশেই এমনটা ঘটছে - গল্পটি শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। তাই আমি একটি ফিল্ম তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিই। পরে আমরা আরও রিসার্চ করি এবং স্ক্রিপ্ট লেখা হয়। ছবিটি তৈরি করতে তিন বছর লাগে। এখন সেটি তৈরি হয়ে গেছে। ছবিতে দেওয়া ৩২,০০০ সংখ্যাটি নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, সে সম্পর্কে আমার বক্তব্য হল, বিষয়টির গুরুত্ব খাটো করছে ওই বিতর্ক।”
গত নভেম্বরে মুক্তি-পাওয়া ট্রেলার ও শর্মার টুইটে (ওপরে শেয়ার করা হয়েছে) বলা হয়, ছবিটি হলো কেরলের ৩২,০০০ মহিলাকে নিয়ে। কিন্তু সম্প্রতি দেখানো ট্রেলারে বলা হয়েছে কেবল তিন মহিলার ওপর আলোকপাত করা হয়েছে ফিল্মটিতে। সাম্প্রতিক প্রচারে ৩২,০০০ সংখ্যাটি উল্লেখ করা হয়নি।
কী ভাবে হিসেব করা হয়েছে?
সিটি মিডিয়া নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে, কী ভাবে তিনি হিসেবটি করেছেন, তা জানান সুদীপ্ত সেন। তিনি বলেন, কেরল বিধানসভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী উমেন চন্ডীর দেওয়া এক উত্তরের ওপর ভিত্তি করেই তিনি হিসেবটি করেন। “উমেন চন্ডী ছিলেন কেরলের মুখ্যমন্ত্রী। উনি বিধানসভায় একটি রিপোর্ট পেশ করেন...২০১০-এ, উমেন চন্ডী বলেন, প্রতি বছর আনুমানিক ২,৮০০-৩,২০০ মেয়েকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করা হচ্ছে। এই সংখ্যাটি ২,৮০০-৩,২০০। এটাকে ১০ বছর দিয়ে গুণ করুন। তাহলে দাঁড়ায় এক বিপুল সংখ্যক মেয়েকে, ৩২(০০০) থেকে ৩৩(০০০), ধর্মান্তরিত করা হয়।”
তাঁর বক্তব্য নীচে শোনা যাবে।
চন্ডী তাঁর উত্তরে ঠিক কী বলেছিলেন?
মালয়ালি ভাষায় জুন ২০১২’য় দেওয়া চন্ডীর উত্তরটির খোঁজ পায় বুম। প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়, ২০১২ থেকে ওই রাজ্যে কতজনকে ধর্মান্তরিত করা হয়। উত্তরে, চন্ডী বলেন, ৭,৭১৩ জন ইসলামে ধর্মান্তরিত হন, আর ২,৮০৩ হিন্দু ধর্মে। ওই উত্তরে কোনও লিঙ্গ বিভাজন করা হয়নি।
প্রশ্নটির দ্বিতীয় ভাগে জানতে চাওয়া হয়, কত জন মহিলা ধর্মান্তরিত হন, তাঁদের আদি ধর্ম ও পরের ধর্ম কী (এবং বর্ণের তথ্য, যদি তা থেকে থাকে)? উত্তরে বলা হয়, ২,৬৮৭ মহিলা ইসলামে ধর্মান্তরিত হন। তাঁদের মধ্যে ২,১৯৫ হলেন হিন্দু ও ৪৯২ খ্রিস্টান। ২০০৯ থেকে ৩১ মার্চ ২০১২ অবধি ৭৯ অল্পবয়সী মহিলা খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন। ওই একই সময়ে, তিরুবন্তপুরমের আর্য সমাজের মাধ্যমে ৮ জন মহিলা হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করেন।
এরপর জানতে চাওয়া হয়, কোনও একটি বিশেষ ধর্মে বেশি ধর্মান্তকরণ হয়েছে কিনা ও তার পেছনে কোনও বাইরের শক্তি কাজ করছে কিনা? উত্তরে বেশ জোরের সঙ্গে বলা হয়, “না”।
তৃতীয় প্রশ্নটি ঘিরেই চতুর্থ প্রশ্নটিতে সে বিষয়ে আরও জানতে চাওয়া হয়। উত্তরে বলা হয়, “প্রাসঙ্গিক নয়”।
পঞ্চম প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয় গণধর্মান্তকরণের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কিনা? আবারও উত্তরে বলা হয়, “না”। এবং বলা হয় প্রশ্নটির শেষ অংশটি “প্রাসঙ্গিক নয়”।
উত্তরে ধর্মান্তকরণের কোনও বাৎসরিক হিসেব দেওয়া হয়নি। এবং তাতে কোথাও এ কথাও বলা হয়নি যে, “লাভ-জেহাদের” ফলেই ধর্মান্তকরণ হয়েছে।
উত্তরটি এখানে পড়া যাবে।
আর কী কী সূত্রের কথা আমরা জানি?
আইএসআইএস-এর প্রসারের ক্ষেত্রে কেরলের ভূমিকা সম্পর্কে এবং অন্যান্য পরিসংখ্যানও দেয়, এমন বেশ কিছু খোলা সূত্র রয়েছে আমজনতার জন্য। এই প্রতিবেদনে যে বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে, সেটি সরাসরি সন্ত্রাসবাদ ও পাচারের মধ্যে পড়ে না। ফলে, এই দুই বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত, এমন সূত্রগুলির ওপর নজর দেয় বুম।
১. রাষ্ট্রসঙ্ঘ
যে দলটি আইএসআইএস ও আল কয়েদার ওপর নজরদারি করে, রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদকে তাদের দেওয়া ২৬ তম রিপোর্টটি সেপ্টেম্বর ২০২০তে প্রকাশিত হয়। তাতে কেরল ও কর্ণাটকে “আইএসআইএল কর্মীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যার কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু কেরল অথবা কর্ণাটক থেকে মহিলা পাচারের কোনও উল্লেখ নেই তাতে। রিপোর্টটিতে বলা হয়েছে, আইএসআইএল-এর ভারতীয় সহযোগী গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা ১৮০ থেকে ২০০। ইউএনএসসির তথ্যাদি এখানে দেখা যাবে।
তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হল, ভারত সরকার ওই রিপোর্টের সঙ্গে একমত নয়। ভারত সরকার লোকসভায় জানায়, “কিন্তু কেরল ও কর্ণাটকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আইএসআইএস সন্ত্রাসবাদীদের যে উপস্থিতির কথা রিপোর্টটিতে (ইউএনএসসি) বলা হয়েছে, তা ঠিক নয়। ভারতের সঠিক অবস্থা প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমগুলির সাহায্যে, দ্ব্যর্থহীন ও সুনির্দিষ্ট ভাবে ভারত সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক, বহুপাক্ষিক ও দ্বিপাক্ষিক মঞ্চে এবং কূটনৈতিক চ্যানেলগুলিকে জানিয়ে থাকে।”
লোকসভাকে আরও জানায় যে, জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার মাধ্যমে, সরকার ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ৩৪টি মামলা রুজু করেছে ও লস্কর-এ-তইবার বিরুদ্ধে ২০টি। এই দুই গোষ্ঠীর যথাক্রমে ১৬০ ও ১৮০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
২. দ্য অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন
ভারতে আইএসআইএস কর্মী সংগ্রহ করার ব্যাপারে কেরলের ভূমিকা সম্পর্কে, ২০১৯-এ দ্য অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন একটি গবেষণা প্রকাশ করে। তাতে, ১৮০ থেকে ২০০ আইএসআইএস কর্মীর কথা বলা হয়।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নিজস্ব হিসেব ছিল আনুমানিক ১৫৫ জন। তবে, এর মধ্যে সংখ্যাটা সবচেয়ে বেশি – ৪০ জন ছিল কেরলে। এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে র্যাডিক্যাল মতাদর্শের প্রতি কেরলের ঝোঁক ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে তার ঐতিহাসিক যোগাযোগের কথা উল্লেখ করা হয় ওই গবেষণা পত্রে।
অন্য দিকে, আইএসআইএস যে ভাবে উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য রাজ্যে সমর্থক জোগাড় করে, তার মধ্যে স্থানীয় বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। যেমন, সে সব ক্ষেত্রে, বিদেশের মাটিতে খিলাফত-এর স্বার্থে লড়াই করার বদলে স্থানীয় নিশানা আক্রমণ করাই প্রাধান্য পায়। কিন্তু, কেরলে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, বিদেশে যাওয়ার প্রবণতাই দেখা যায়। কেরলে আন্তর্ধর্মীয় সম্পর্ক ভাল হওয়ার কারণে, সে রাজ্যের অভ্যন্তরে কোনও কিছুকে নিশানা করা থেকে বিরত থাকে কেরলের আইএসআইএস সমর্থকরা।
কেরলে কেন এত ব্যক্তি আইএসআইএস-এ যোগ দেন, তার কারণগুলির একটা তালিকাও তৈরি করেছে অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন। তার মধ্যে একটি হল, আইএসআইএস মালয়ালি ও তামিল ভাষা ব্যবহার করে। এই দুই ভাষা কেরলে স্থানীয় ভাবে প্রচলিত। অন্য দিকে, আল-কায়েদা জোর দেয় উর্দুর ওপর।
তাছাড়া, কেরলের মানুষ সহজেই মধ্যপ্রাচ্যে যেতে পারেন। এই বিশেষত্বটিকেও একটি কারণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। ওই রাজ্যে চারটি বিমানবন্দর আছে। আর সবচেয়ে বেশি অল্প-দূরত্বের উড়ান ছাড়ে সেখান থেকে।
কিন্তু ‘লাভ-জেহাদের’ দৌলতে মহিলা পাচারের কোনও উল্লেখ নেই ওই গবেষণা পত্রে। তাতে সময়েরও কোনও উল্লেখ করা হয়নি, যদিও চিত্র নির্মাতারা দাবি করেছেন যে, ১২ বছর ধরে তা চলে আসছে।
গবেষণা পত্রটি এখানে পড়া যাবে।
২০১৪ থেকে ২০২০’র মধ্যে যাঁরা আইএসআইএস-এ যোগ দেন, সেই সব জানা ঘটনাগুলির তথ্য সংগ্রহ করে রেখেছে অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন। তাঁদের সাত বছরের সংগৃহীত কেসগুলি যোগ করলেও কিন্তু অঙ্কটা ৩২,০০০ দাঁড়ায় না, বা তার ইঙ্গিতও দেয় না। তাছাড়া, তাঁদের তথ্যের বিস্তৃতি শুধু কেরলেই সীমাবদ্ধ নয় – তার মধ্যে উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট ও কর্ণাটকও রয়েছে।
সেটি এখানে দেখা যাবে।
৩. এনসিআরবি
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’র কাছে পাচার হওয়া মহিলাদের তথ্য আছে। রাজ্যে রাজ্যে মানব পাচার দমনকারী যে সংস্থাগুলি রয়েছে, তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে ওই তথ্য ভাণ্ডার।
সেখান থেকে পাচার হওয়া মহিলা ও শিশু সংক্রান্তু তথ্য প্রকাশ করা হয়। আবার কতজন মহিলা ও শিশুকে উদ্ধার করা গেছে, তার হিসেব দিয়ে থাকে ওই ব্যুরো। কিন্তু ধর্মভিত্তিক কোনও পরিসংখ্যান সেখানে রাখা হয় না।
তাদের কাছ থেকে এই তথ্যগুলি পাওয়া যায়:
- কোনও একটি ঘটনার শিকার-হওয়া ব্যক্তি বা উদ্ধার-হওয়া ব্যক্তির বয়স ১৮ বছরের চেয়ে কম না বেশি
- ব্যক্তির লিঙ্গ। শিকারের উদ্দেশ্য – যেমন, বেশ্যাবৃত্তি বা অন্যান্য ধরনের যৌন শোষণ, জোর করে শ্রমদানে বাধ্য করা, খুচরো অপরাধে নিয়োগ করা, জোর করে বিয়ে করা, বাড়িতে কৃতদাসী হিসেবে নিয়োগ করা, শিশু পর্নোগ্রাফিতে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে, শরীরের অঙ্গ চুরি করার জন্য ও ভিক্ষা বৃত্তিতে নিয়োগ করার তাগিদে।
- কেসগুলির নিষ্পত্তি সংক্রান্ত তথ্য।
৪. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট
প্রতি বছর, ‘ট্র্যাফিকিং ইন পারসন’ (মানুষ পাচার) বলে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। তাতে সব ধরনের পাচার সংক্রান্ত শোষণের পর্যালোচনা করা হয়্।
ওই রিপোর্টে ভারতকে টিয়ার-২ দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তার অর্থ হল, মানব পাচার বন্ধ করার জন্য যে মানের ব্যবস্থা প্রয়োজন, সেই ব্যবস্থা এই দেশের নেই, কিন্তু সেই মান অর্জন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
২০২২-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, মানব পাচারের ক্ষেত্রে ভারতের প্রধান সমস্যা অভ্যন্তরীণ পাচার, বিদেশে পাচার নয়। দাস- ও অল্প-টাকার শ্রমিক হল এখানকার সব চেয়ে বড় শিকার। ওই রিপোর্টে একটি গবেষণাকে উদ্ধৃত করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ৮০ লক্ষ মানুষ পাচারের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই দাস-শ্রমিক। এর মধ্যে যৌন পাচারও উল্লেখযোগ্য স্থানে রয়েছে। কিন্তু ওই রিপোর্টে কেরলের মহিলাদের শোষণ সংক্রান্ত কোনও আলোচনা নেই।
রিপোর্টটি এখানে দেখা যাবে।