সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলাদেশে (Bangladesh) এক পরিবারের কিছু দুষ্কৃতীর হাতে আক্রান্ত হওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। নেটিজেনদের একাংশ ভিডিওটি শেয়ার করে ভুয়ো দাবি করেছেন সেখানে পশ্চিমবঙ্গে (West Bengal) ভোট-পরবর্তী হিংসার (Post-Poll Violence) দৃশ্য দেখা যায়।
বুম যাচাই করে দেখে ভিডিওটিতে বাংলাদেশের ময়মনসিংহের গ্রীন অরণ্য পার্কে ঘুরতে গিয়ে এক বাংলাদেশী পরিবারের আক্রান্ত হওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। ঘটনাটি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটে।
৪:১৭ মিনিটের ভিডিওটি আক্রান্ত পরিবারের গাড়ির ভিতর থেকে তোলা হয়। ভিডিওটিতে একটি পরিবারের গাড়িকে ঘেরাও করে তার দরজা-জানালায় ধাক্কা দিতে দেখা যায় কিছু লোককে। যে ব্যক্তি ভিডিও করছিল তাকে বারবার হামলাকারীদের অনুরোধ করতে শোনা যায় তাদের ছেড়ে দিতে এবং গাড়িতে তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। ভিডিওর সব কথোপকথন বাংলায় শোনা যায়।
এই ভিডিওটি শেয়ার করে ব্যবহারকারীরা দাবি করেছেন এটি পশ্চিমবঙ্গে ভোট পরবর্তী হিংসার একটি নমুনা। ভিডিওটি শেয়ার করে কিছু ব্যবহারকারী সাম্প্রদায়িক দাবি করেছে মুলত হিন্দু পরিবারই মুসলমানদের হাতে আক্রান্ত হয়েছে।
এক্সে ভিডিওটি শেয়ার করে হিন্দিতে ক্যাপশন হিসাবে লেখা হয়েছে, "নির্বাচনের পর বাংলায় কী হচ্ছে, দেখুন ঘাবড়াবেন না এটা আপনাদের সাথেও হবে, আজ নয় কাল।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে হিন্দিতে লিখেছেন, "নির্বাচনের পর বাংলায় কী হচ্ছে, দেখুন ঘাবড়াবেন না এটা আপনাদের সাথেও হবে, আজ নয় কাল। দেখুন মুসলমানদের আতঙ্কবাদী রূপ হিন্দুদের হত্যা করা হচ্ছে জাগো হিন্দুরা জাগো।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম লক্ষ্য করে ভাইরাল ভিডিওর নীচে 'নিউজ ১৩ অসম লাইভ' লেখাটি লক্ষ্য করে। আমরা এই সুত্রধরে ফেসবুকে নিউজ ১৩ অসম লাইভ পেজে ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪-এর পোস্টে ভাইরাল ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে দেখি।
ভিডিওটির ক্যাপশন হিসাবে লেখা হয়েছে, "পত্নি-সন্তানসহ পার্কে ঘুরতে গিয়ে কিছু লোক এইভাবে পরিবারটিকে আক্রমণ করেছে।"
পোস্টটি দেখুন এখানে।
এরপর, আমরা এক্সে কমিউনিটি নোট্সে জাগোনিউজ২৪.কম-এর ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই।
'ঘুরতে এসে হামলার শিকার পরিবার, ভিডিও ভাইরাল' শীর্ষক প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায় ভাইরাল ভিডিওর ঘটনা বাংলাদেশের ময়মনসিংহের গ্রীন অরণ্য পার্কের। প্রতিবেদন অনুযায়ী ঘটনাটি ঘটে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ এবং পরিবারটিকে হামলাকারী লোকেরা ওই পার্কেরই কর্মকর্তা ও কর্মচারী। ঘটনায় আক্রান্ত শাহজাহান মিয়া বাদী ভালুকা মডেল থানায় পুলিশের কাছে অভিযোগ করে এবং পুলিশের তরফ থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। ৭ ফেব্রুয়ারি তিন কর্মচারীকে গ্রেফতারও করে পুলিশ।
এই প্রতিবেদন থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন পরবর্তী হিংসার সাথে যুক্ত নয় এবং ঘটনায় কোনও হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িকতার দিক নেই।