দিব্যি আগুনের উপর শুয়ে থাকা এক হিন্দু সাধুর একটি ভিডিও ভুয়ো দাবিসহ শেয়ার করা হচ্ছে যে, এটি বিবিসির (BBC) একটি রিপোর্ট যাতে ২০২১ সালে উত্তরাখণ্ডের হরিদ্বারে অনুষ্ঠিত কুম্ভমেলায় (Kumbh Mela) অগ্নিদেবের কাছে ৪০০ জন সাধুর আহুতির দৃশ্য তুলে ধরা হয়েছে।
৩ মিনিটের ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, বিবিসির এক সাংবাদিক দল কুম্ভমেলা রিপোর্ট করার সময় অগ্নিদেবতার কাছে ৪০০ জন সাধুর এই নিজেদের আহুতি দেওয়ার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করেন। এই দৃশ্য তুলে রাখতে বিবিসির দলটিকে অগ্নিকুণ্ড থেকে অনেকটা দূরে সরে যেতে হয় জ্বলন্ত কাঠের তাপ থেকে বাঁচতে।
একই বিভ্রান্তিকর ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে অনেকেই ভিডিওটি শেয়ার করেছেন।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভিডিওটি আসলে একটি তথ্যচিত্র থেকে নেওয়া, যার নাম—"দ্য ফায়ার যোগী: অ্যা স্টোরি অফ অ্যান এক্সট্রাঅর্ডিনারি জার্নি"। এটি তামিলনাড়ুর (Tamil Nadu) যোগী রামভাউ স্বামীর (Yogi Rambhau Swami) অগ্নি-উপাসনা আচার বিষয়ে তৈরি।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিকে কয়েকটি মূল ফ্রেমে ভেঙে নিয়ে খোঁজখবর করে আমরা দেখি, এটি ২০১১ সালের মার্চে ইউ-টিউবে আপলোড হওয়া একটি ভিডিওর সঙ্গে হুবহু মিলে যায়। ৯ মিনিটের সেই ভিডিওটির নাম ছিল—'দ্য ফায়ার যোগী'।
এই সূত্র থেকে আরও সার্চ করে 'দ্যা ফায়ার যোগী' নমে ৪৬ মিনিটের একটি দীর্ঘতর ভিডিও ২০১১ সালের নভেম্বর মাসে ইউটিউবে আপলোড হতে দেখি। এই ভিডিওটির ২০ মিনিটের মাথায় আমরা সেই দৃশ্যটি দেখতে পাই, যেটি ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে রয়েছে।
তথ্যচিত্র থেকে সূত্র পেয়ে আমরা গুগল-এ খোঁজ লাগিয়ে একটি বিবরণ পাই, যাতে লেখা রয়েছে— "এই তথ্যচিত্রে রামভাউ স্বামীর অগ্নি-উপাসনা আচারের এক অসাধারণ নমুনা আমরা পাই, যার পরে তাঁর পোশাকের রাসায়নিক বিশ্লেষণও করা হয় এবং তাঁর নানা শারীরিক পরীক্ষাও করা হয় । ৬৩ বছর বয়স্ক এই যোগী বিগত ৪৫ বছর ধরে অন্তত ১০০০ ঘন্টা এই আগুন-আচার পালন করেছেন । শ্বাসপ্রশ্বাসের এক অনবদ্য প্রকৌশল আয়ত্ত করে এই যোগী আগুনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে পারেন । গত ২৬ বছর ধরে তিনি দিনে দু বার মাত্র দুটি কলা ও এক গ্লাস দুধ আহার করে থাকেন ।"
এই তথ্যচিত্রেরই ডিভিডি আমাজন বিক্রি করছে এবং সেটি মাইক ভাসান পরিচালিত বলে বর্ণনা করা হয়েছে। আমাজনে ৪৭ মিনিটের এই ডিভিডিটির মুক্তি পাওয়ার তারিখ ১৬ অক্টোম্বর, ২০০৭।
আমাজনে ভিডওটি পাওয়া যাবে এখানে।
আবার ২০০৯ সালের ১৭ নভেম্বর টাইমস অফ ইন্ডিয়া যোগী রামভাউ স্বামীর অগ্নি-আচার বিষয়ে এক প্রতিবেদন লিখেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, চিকিৎসক, মনোবিজ্ঞানী এবং যুক্তিবাদীরা এই ব্যাপারটাকে মনের বিভ্রম বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
বুম নিজে থেকে এই অগ্নি-উপাসনা আচারের বিষয়টি পরখ করে দেখেনি। তবে বিবিসি-র সাংবাদিক দল কুম্ভমেলায় ৪০০ হিন্দু সাধুর অগ্নি-আহুতির দৃশ্য ভিডিওতে তুলেছেন বলে যে দাবি করা হয়েছে, সেটি ভুয়ো বলে নিশ্চিত হতে পেরেছে।
আমরা বিবিসির কাছেও ই-মেল মারফত এই বিষয়ে জানতে চেয়েছি। বিবিসি প্রত্যুত্তর দিলে প্রতিবেদনটি সংস্করণ করা হবে।
আরও পড়ুন: বাইকুল্লা চিড়িয়াখানার নাম বদল পিরের নামে? না, বললেন মুম্বইয়ের মেয়র