প্ল্যাকার্ড (Placard) হাতে এক দল লোক বসে রয়েছে, যাতে লেখা— 'ভারত-চিন সীমান্তে কোনও রাস্তা নয়'—এই ছবিটি ভুয়ো এবং প্ল্যাকার্ডের লেখাগুলি সম্পাদনা (Morphed) করে জোড়া হয়েছে। এই ছবিটি একটি বিভ্রান্তিকর দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে যে সিটিজেন্স ফর গ্রিন দুন নামে একটি এনজিও নাকি ভারত-চিন সীমান্তে রাস্তা তৈরির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) একটি পিটিশন দাখিল করেছে।
সুপ্রিম কোর্টের কাছে দুটি আলাদা আবেদনে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক ও কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহণ মন্ত্রক উত্তরাখণ্ডের পার্বত্য সড়কগুলিকে ৭ মিটার চওড়া করার জন্য যে পিটিশন করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতেই ওই প্ল্যাকার্ডের ছবি শেয়ার হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে এক নির্দেশনামায় জানিয়েছিলেন, এই পার্বত্য সড়কগুলির প্রস্থ সাড়ে ৫ মিটারের মধ্যে রাখতে হবে।
পরিবেশগত বিপর্যয়ের উদ্বেগ ব্যক্ত করে সিটিজেন্স ফর গ্রিন দুন নামক এনজিও কেন্দ্রীয় সরকারের ওই পিটিশনের বিরোধিতায় নামে। ৪টি প্রধান হিন্দু তীর্থস্থানকে জোড়ার যে 'চার-ধাম প্রকল্প' হিমানয়ের পরিবেশগত ভারসাম্যে গুরুতর বিপর্যয় ডেকে আনবে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সতর্কীকরণের কথা হিন্দুস্তান টাইমস রিপোর্ট করেছে। শীর্ষ আদালত ১১ নভেম্বর এবিষয়ে রায়দান স্থগিত রাখে এই বলে যে, "ব্যাপারটা প্রতিরক্ষা বনাম পরিবেশের নয়... উভয়ের মধ্যেই একটা ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে "।
ভুয়ো ছবিটিকে টুইট করে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, "লজ্জাকর! সিটিজেন্স ফর গ্রিন দুন নামে একটি এনজিও উত্তরাখণ্ডের ভারত-চিন সীমান্তবর্তী সড়কগুলি চওড়া করার প্রকল্পের বিরুদ্ধে পরিবেশগত আপত্তি তুলে সুপ্রিম কোর্টে মামলা ঠুকেছে। এনজিও-র আইনজীবী কলিন গনজালভেস এবং মহম্মদ আফতাব সওয়াল করেছেন, যুদ্ধের সময় তো আকাশপথই ব্যবহার করা যায়, সে জন্য সড়ক চওড়া করার দরকার কি!"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
যে টুইটার হ্যান্ডেল থেকে এই টুইট করা হয়েছে, অতীতে তার অন্য ভুয়ো টুইটের পর্দাফাঁস করেছে বুম।
এই পোস্টটি এখানে দেখতে পারেন।
এই একই ফোটোশপ করা ছবি ক্রিয়েটলি নামের টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও পোস্ট করা হয়েছে ও বিজেপির তথ্য-প্রযুক্তি সেল-এর প্রাক্তন প্রধান এবং মাইগভইন্ডিয়া-র প্রাক্তন সিইও অরবিন্দ গুপ্তাও সেটি পুনঃটুইট করেছেন।
ভুয়ো দাবি সহ এই ফোটোশপ করা ছবি ফেসবুকেও ছড়ানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: জখম মহিলার পুরনো ছবি জোড়া হল মডেল পুনম পাণ্ডের সঙ্গে
তথ্য যাচাই
বুম দেখলো, ভাইরাল হওয়া ছবিটি সম্পাদনা করা হয়েছে ও "ভারত-চিন সীমান্তে কোনও রাস্তা নয়" শব্দগুলি মূল প্ল্যাকার্ডে পরে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। মূল প্ল্যাকার্ডে শুধু লেখা ছিল, "আসুন! সিটিজেন্স ফর গ্রিন দুন-এ যোগ দিন!"
ফেসবুকে এই নামের যে গোষ্ঠী রয়েছে, তার খোঁজ করতেই আমরা মূল ছবিটি পেয়ে গেলাম, যেটি ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে পোস্ট করা হয়েছিল।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
এই গোষ্ঠীর সদস্য ইরা চৌহান লিখেছেন, "আজকাল ছবি ফোটোশপ করে এবং চমকদার ক্যাপশন জুড়ে দিয়ে ঘৃণা এবং মিথ্যা প্রচার জলভাত হয়ে গেছে। মিথ্যে ভুয়ো তথ্য সাজিয়ে এবং ছবি সম্পাদনা করে এ ভাবেই সিটিজেন্স ফর গ্রিন দুন-এর বিরুদ্ধে কলঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, তাঁদের এই এনজিও মোটেই সীমান্তে সড়ক তৈরির বিরোধী নয়...অথচ টুইট মারফত তাঁদের আইনজীবী কলিন গনজালভেসের মুখে ভুয়ো বিবৃতি বসানো হচ্ছে। মহম্মদ আফতাব নামের এক কাল্পনিক আইনজীবীর নাম জুড়ে দিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্রও চালানো হচ্ছে। ওই নামের কোনও আইনজীবী তাঁদের মামলা লড়ছেন না, তেমন কাউকে তাঁরা চেনেনও না।
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
তাছাড়া, এনজিও-র আবেদন সংক্রান্ত রিপোর্টেও কোথাও বলা হয়নি যে, তাঁরা সড়ক নির্মাণের বিরোধিতা করছেন, বরং পরিবেশগত সুরক্ষার যুক্তিতে তাঁরা সড়কগুলিকে আরও চওড়া করার বিরোধিতা করেছেন। প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, ২০১৮ সালেই এক এনজিও সড়ক
চওড়া করার প্রকল্পে গাছ কাটা, পাহাড় ফাটানো এবং কাদা জড়ো করার মতো ক্রিয়াকলাপে হিমালয়ের পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কার কথা তুলে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেছিল এবং শীর্ষ আদালত রবি চোপড়া নামে এক বিশেষজ্ঞর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি দ্বারা ওই বিষয়গুলি পরীক্ষা করার নির্দেশ দেন বলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।
ভাইরাল হওয়া ছবির সঙ্গে আসল ছবিটির তুলনা করলেই স্পষ্ট যে ছবিটি সম্পাদনা করা হয়েছে এবং প্ল্যাকার্ডের শব্দগুলি জুড়ে ভুয়ো দাবি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের হিংসায় নয়, ২০১৫ সালে পদপিষ্ঠে স্বজন হারিয়ে শোকার্ত নারী