বোয়িং বিজনেস জেট ৭৭৭x-এর (Boeing 777) কেবিনের ভিতরের নকশাটা কেমন হবে, তার ধারণা সম্বলিত কিছু ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দাবি করা হচ্ছে, এগুলি নাকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর (Narendra Modi)ব্যবহৃত এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান (Air India One) বিমানের অন্দরসজ্জার ছবি।
বুম দেখলো, ছবিগুলি বিজনেস জেট ৭৭৭-x-এর কেবিনের ভিতরকার নকশা কেমন হবে, সে সংক্রান্ত কিছু ধারণাগত প্রস্তাব, যা ২০২০ সালে বাস্তবায়িত হওয়ার কথা ছিল, আর প্রধানমন্ত্রীর এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান একটি ৭৭৭-ER বোয়িং বিমান।
আরও পড়ুন: আলোকচিত্রী ছবি তুলছেন প্রধানমন্ত্রী মোদীর? বদলানো ছবি ভাইরাল
তিন দিনের মার্কিন সফরে যাওয়ার পথে মোদী বিমানের ভিতর বসে কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করার ছবি টুইটারে প্রকাশ করার পরেই বিমানের কেবিনের ভিতরকার এই সব বিলাসবহুল আসবাবপত্রের ছবি ভাইরাল করা হয়।
সোশাল মিডিয়ায় ওই সব ছবি ভাইরাল করে ইঙ্গিত করা হয়, মোদী যখন একটি অতি সাধারণ আসনে বসে কাজকর্ম সারছেন, তখন ওই বিমানেই তাঁর আরাম-আয়েশ ও বিলাস-ব্যসনের নানা উপকরণ কিন্তু মজুত রয়েছে।
ছবি সহ এ রকমই একটি পোস্ট নীচে দেখতে পারেন:
টুইটারেও একই পোস্ট ছাড়া হয়েছে:
আরও পড়ুন: ২০১৯ সালের 'হাউডি মোদী' ভিডিও প্রধানমন্ত্রী মোদীর মার্কিন সফরে অভ্যর্থনা বলে ছড়াল
তথ্য যাচাই
বুম এই ছবিগুলি খোঁজখবর চালিয়ে দেখেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বিজনেস ইনসাইডার পত্রিকায় বোয়িং কোম্পানির নতুন বিজনেস জেট ৭৭৭-x বিমানের ভিতরকার এই ছবিগুলি দিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। তাতে কেবিনের ভিতরকার আসবাব ও সাজসজ্জা নিয়ে তিনটি সংস্থা গ্রিনপয়েন্ট টেকনোলজি, জেট অ্যাভিয়েশন স্টুডিও এবং ইউনিক এয়ারক্র্যাফ্ট ডিজাইন-এর প্রস্তাবিত নকশা দেওয়া ছিল।
বিজনেস ইনসাইডার-এর প্রতিবেদনটি এখানে দেখতে পারেন।
এই পোস্টে যে ছবিগুলি দেওয়া হয়েছে, বিজনেস ইনসাইডারের প্রতিবেদনের ছবির সঙ্গে সেগুলো হুবহু এক। এবং এগুলি মোটেই এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান বিমানের ভিতরকার অন্দরসজ্জার ছবি নয়।
গ্রিনপয়েন্ট টেকনোলজি এক বিবৃতিতে জানায় যে, ২০১৮ সালে তারা বিজনেস জেট ৭৭৭-x-এর অন্দরসজ্জার এই নকশা অনুমোদন করেছিল, যা এখানে পড়ে দেখতে পারেন। জেট অ্যাভিয়েশন স্টুডিওর তরফেও একটি জনসম্পর্ক সংস্থা এক বিবৃতিতে এ কথা জানায়। একই ভাবে ইউনিক এয়ারক্র্যাফ্ট ডিজাইনের প্রস্তাবিত নকশাও এভাবেই তাদের ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপিত করা হয়।
তা ছাড়া, এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান-এর উড়ান যখন চালু হয়, তখন বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে সে সংক্রান্ত সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। নিউজ ১৮ এবং ইন্ডিয়া টুডে-র প্রতিবেদনগুলি এখানে দেখে নেওয়া যায়l পোস্টে ভাইরাল হওয়া অন্দরসজ্জার ছবির সঙ্গে এই সব প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবির কিন্তু কোনও মিল নেই।
বোয়িং কোম্পানি জানিয়েছে বোয়িং ৭৭৭-x বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং দক্ষ দুই ইঞ্জিনের বিমান। প্রতিযোগী অন্যান্য বিমানের চেয়ে এ ১০ শতাংশ কম জ্বালানি খায় এবং এর চালানোর খরচও ১০ শতাংশ কম। বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের চেয়েও এই বিমানে আরও নতুন কিছু জিনিস সংযোজিত হয়েছে, যে ব্যাপারে এখানে পড়ে নেওয়া যেতে পারে।
ভারতের কি বোয়িং ৭৭৭-x বিমান আছে?
না, অন্তত বোয়িং সংস্থার তথ্যভাণ্ডারে সে রকম কিছু তথ্য নেই।
সংস্থাটি ১৪৯টি ওই বিমান বিক্রি করেছে বটে, তবে তার সবটাই হয় বাণিজ্যিক বা ব্যবসায়িক ক্রেতাদের, নয়তো মার্কিন বিমানবাহিনীকে।
প্রকাশিত তথ্য বলছে, বর্তমানে ২২২টি ৭৭৭-x বিমানের অর্ডার সংস্থা এখনও পূরণ করে উঠতে পারেনি, তবে এগুলির কোনওটিই ভারত থেকে অর্ডার দেওয়া হয়নি।
ফরমায়েশ অনুসারে সরবরাহের যে তথ্য বোয়িং কোম্পানির রয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি ও মার্চ মাসে এয়ার ইন্ডিয়াকে তারা দুটি বোয়িং ৭৭৭-ER বিক্রি করেছিল, যে দুটিই ভিভিআইপি-দের ব্যবহারের জন্য তুলে রাখা হয়। পড়ুন এখানে l
কেনার পরেই এই বিমানগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিউস্টনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কিছু নিরাপত্তামূলক বন্দোবস্ত সংযোজন করার জন্য। প্রথম বিমানটি পাঠানো হয় ২০১৮ সালের ১ জুন, দ্বিতীয়টি ৩০ জুন।
হিন্দু সংবাদপত্রের এক প্রতিবেদনে এয়ার ইন্ডিয়ার এক আধিকারিককে উদ্ধৃত করে লেখা হয়, "ডালাসের ফোর্থওয়ার্থে বোয়িং-এর নির্মাণকেন্দ্রের উদ্দেশে বিমানটি উড়ে গেছে কিছু বাড়তি সরঞ্জাম সংযোজন করাতে । ১৮ মাসের মধ্যে সে কাজ সম্পূর্ণ করার জন্য বোয়িং-এর সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়ার চুক্তিই রয়েছে ।"
এই সব বাড়তি সরঞ্জাম যোগ করার খরচ হিসাবে ২০১৮ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে ৪৪৬৯ কোটি টাকা বরাদ্দও করা হয়।
ভিভিআইপি-র ব্যবহারের জন্য প্রথম বিমানটি এয়ার ইন্ডিয়া ওয়ান হিসাবে ভারতে চলে আসে ২০২০ সালের অক্টোবরে। পড়ুন এখানে।
বোয়িং কোম্পানির দেওয়া এই সব তথ্যই ২০২১ সালের ৩১ অগস্ট পর্যন্ত হালনাগাদ করা। পড়তে পারেন এখানে l