অন্ধ্রপ্রদেশের (Andhra Pradesh) পুলিশ ভাইরাল হওয়া একটি ভুয়ো দাবির পর্দাফাঁস করেছে যে, রাজ্যের গুন্টুর (Guntur) জেলার একটি পাহাড়ের মাথায় এক হিন্দু ধর্মস্থানকে (Hindu Shrine) সরিয়ে একটি বিশাল ক্রুশ (Cross) বসানো হয়েছে। গুন্টুর পুলিশ টুইটারে একটি ভিডিও মারফত এই দাবিটিকে অসার প্রতিপন্ন করে দেখিয়েছে, ক্রুশটি অন্য একটি পাহাড়ের শীর্ষে বসানো হয়েছে এবং সীতা বা নরসিংহের মূর্তিলাঞ্ছিত দুটি মন্দিরের কোনওটির গায়েই হাত পড়েনি।
সুনীল দেওধর (Sunil Deodhar) নামে বিজেপির জাতীয় সম্পাদক তাঁর টুইটারে প্রথম এই ভুয়ো দাবিটি করেনl অন্ধ্রপ্রদেশে বিজেপির ভারপ্রাপ্ত নেতা দেওধর তাঁর যাচাই করা টুইটার হ্যান্ডেল মারফত দাবি করেন: "দেখুন— অন্ধ্রপ্রদেশের এদালপাড়ুতে বেআইনিভাবে নির্মিত ওই বিশাল ক্রুশ, যেখানে সীতামায়ের পদচ্ছাপ রয়েছে এবং নরসিংহের ভাস্কর্যও রয়েছে। গুন্টুর জেলায় খ্রিস্টান মাফিয়া রীতিমত দাপিয়ে বেড়াচ্ছে l আরএসএস ও তার সহযোগীরা তাদের বাধা দিচ্ছে, কিন্তু প্রশাসন ওই মাফিয়াকে সমর্থন করছে।"
অপইন্ডিয়া (Opindia),
স্বরাজ্য (Swarajya) এবং
অর্গানাইজার (Organiser)-এর মতো দক্ষিণপন্থী ওয়েবসাইটে এই ভুয়ো দাবিটা দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায় এবং রকমারি গাঁজাখুরি প্রতিবেদন প্রকাশিত হতে থাকেl অপইন্ডিয়া-র প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়— "খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা একটি হিন্দু মন্দিরে একটা বিরাট ক্রুশ খাড়া করেছে গুন্টুর জেলার এদলাপাড়ুতে, যেখানে সীতার পদচিহ্ন রয়েছে বলে কথিত আছে"। স্বরাজ্য-র প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, "প্রশাসনের এক উচ্চপদস্থ খ্রিস্টান জেলা আধিকারিক আরএসএস ও বিজেপির আপত্তি অগ্রাহ্য করে এই অবৈধ কাজটিতে মদত জুগিয়েছেনl অন্ধ্রপ্রদেশে খ্রিস্টধর্মে অন্তরিত করা এবং হিন্দু মন্দির আক্রমণ চালানোর ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে, ইত্যাদি।"
অপইন্ডিয়া এবং স্বরাজ্য উভয়েই অর্গানাইজারের অভিমত সমর্থন করে লিখেছে— "রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস জগন্মোহন রেড্ডি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকেই খ্রিস্টানদের এই বাড়বাড়ন্ত। জেলাশাসক স্যামুয়েল নিজেও একজন খ্রিস্টান এবং তাঁর প্রশ্রয়েই একটি আস্ত পাহাড় খুঁড়ে সমতল করে সেখানে একটি বিরাট ক্রুশ তৈরি করা হয়েছে।"
তথ্য যাচাই
গুন্টুর পুলিশ অবশ্য টুইট করে জানিয়েছে, যে-পাহাড়ে হিন্দু মন্দির রয়েছে এবং যেটিতে ক্রুশ চিহ্ন খাড়া করা হয়েছে, সেগুলি দুটো আলাদা পাহাড়, যাদের মঝখানে আরও ছোট-মাঝারি পাহাড়ও রয়েছে। দেওধরের টুইটের অপপ্রচারের জবাবে তাঁরা ঘটনাস্থল এদলাপাড়ু গ্রাম থেকে তোলা একটি ভিডিও টুইট করেছেন। জনৈক পুলিশ আধিকারিক সেই ভিডিওটি দেখিয়ে এলাকার ভৌগোলিক চিত্র তুলে ধরছেন এবং দেখাচ্ছেন, ক্রুশ তৈরি হয়েছে যে পাহাড়ে আর মন্দির রয়েছে যেখানে, সে দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন পাহাড় এবং ক্রুশ আদৌ নরসিংহ স্বামীর মন্দিরের জায়গা দখল করে বানানো হয়নি ।
গুন্টুরের জেলা কালেক্টরও ওই ভুয়ো দাবি নস্যাত্ করে জানিয়েছেন, সীতামাতার পদচ্ছাপওয়ালা পাহাড় আর ক্রুশ চিহ্নিত পাহাড় দুটি সম্পূর্ণ আলাদাl
জেলা কালেক্টরের দফতর থেকে দেওধরের
টুইটের জবাবে বলা হয়েছে, স্থানীয় তহশিলদার এবং স্টেশন হাউস অফিসার আইন মোতাবেক বিষয়টির তদন্ত করে দেখছেন এবং যতদিন তা সম্পূর্ণ না হয়, ততদিন স্থিতাবস্থা বজায় থাকবে।
আমরা এক স্থানীয় রিপোর্টারের কাছ থেকে অন্য একটি ভিডিও পেয়েছি, যাতে স্পষ্ট যে দুই ধর্মের অর্চনাস্থানগুলি দুটি আলাদা-আলাদা পাহাড়ে অবস্থিত এবং কেউ কারও জায়গা অধিকার বা দখল করে নেই। এদলাপাড়ুর যে পুলিশ অফিসার ভিডিওটি তুলেছেন, তিনি দূরে একটি পাহাড়ের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলছেন, "ওই দেখুন, ওখানে একটা ক্রুশের কাঠামো তৈরি করা হচ্ছে। তার আগে অন্য পাহাড়ে কিছু খনিসংক্রান্ত খোঁড়াখুঁড়িও চলছে l তার এপাশে যে পাহাড়টা, তার উপরেই আমরা এখন দাঁড়িয়ে রয়েছি, আর এর আধ কিলোমিটার পরেই নরসিংহ স্বামীর মন্দির। ওই পাহাড়েও কিছু খনির কাজ চলছে। দুটি পাহাড়ের মধ্যে অন্তত আধ কিলোমিটারের দূরত্ব রয়েছে এবং আছে অন্য কয়েকটি ছোট-ছোট পাহাড়ও।"
নিচের ভিডিওটি দেখুন:
এদালপাড়ুর সাব-ইনস্পেক্টরকে উদ্ধৃত করে
দ্য নিউজমিনিট জানাচ্ছে: "নরসিংহ স্বামীর মন্দির রয়েছে যে পাহাড়ে, তার থেকে অন্তত আধ কিলোমিটার দূরে রয়েছে সেই পাহাড় যেখানে ক্রুশটি নির্মিত হচ্ছে। যে ছোট পাহাড়টিলার উপরে ক্রুশটি তৈরি হয়েছে, সেটিকে স্থানীয়রা রাহাদারি মাতার মন্দির বলে জানে।"