একটি হারিয়ে যাওয়া বাচ্চার পরিবারের খোঁজ চেয়ে, দিল্লির পুরনো একটি ভিডিও মিথ্যে দাবি সমেত ভাইরাল হয়েছে। বলা হচ্ছে, বাচ্চাটিকে পাওয়া গেছে মেঙ্গালুরুতে। সে রয়েছে কিছু ভিখারির সঙ্গে। বুম দেখে ভিডিওটি নভেম্বর ২০২০তে তোলা। এবং স্থানীয় এক গুরুদোয়ারার সদস্যরা তাকে খুঁজে পাওয়ার পর তাকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেন।
বুম নিশ্চিত হয় যে, ভিডিওটি নভেম্বর ২০২০ তে তোলা ও গুরুদ্বারটি নতুন দিল্লির জৈতপুর গুরুদোয়ারা। ওই গুরুদোয়ারার সদস্যরা জানান যে, মেয়েটিকে তার পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এবং সেই দিনই তোলা হয় ভিডিওটি।
বলিউডের অভিনেত্রী দিব্যা দত্ত ক্লিপটি শেয়ার করেন। ক্যাপশনে বলা হয়, "দক্ষিণ ভারতের মেঙ্গালুরু শহরে, একদল ভিখারির মধ্যে এই বাচ্চা মেয়েটিকে পাওয়া যায়। সে বলেছে তার নাম সোনাল বিপিন পটেল। ভিখারিরা দাবি করে, মুম্বই থেকে আসা একটি ট্রেনে তাকে পাওয়া যায়। এটি যত পারেন শেয়ার করুন। তাহলে তার বাবা-মাকে খুঁজে পাওয়ার আশা থাকবে।"
একই ক্যাপশন দিয়ে ফেসবুকে সার্চ করে দেখা যায় যে, বিভ্রান্তিকর দাবি সমেত, ক্লিপটি সেখানে শেয়ার করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
ক্লিপটির বিবরণে লেখা হয়, 'মেঙ্গালুরুতে এক দল ভিখারির মধ্যে একটি বাচ্চাকে পাওয়া গেল'। বুম দেখে এই বিবরণের সঙ্গে ২০১৮ সালের অন্য একটি মিথ্যে দাবির
যথেষ্ট মিল রয়েছে। আগের সেই দাবিটিতেও বচ্চাটির নাম সোনাল বিপিন পটেল বলা হয়েছিল। আরও বলা হয়েছিল যে, তাকে অপহরণ করা হয় এবং এক দল ভিখারির মধ্যে পাওয়া যায় তাকে। এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ভাইরাল ক্লিপটির সঙ্গে তার বিবরণের কোনও সম্পর্ক নেই।
'গুরুদোয়ারা মিসিং চাইল্ড ফাউন্ড' (গুরুদোয়ারায় নিখোঁজ বাচ্চা পাওয়া গেছে) – এই কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করলে, নভেম্বর ২০২০তে আপলোড করা ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়। তবে কোনও সোশাল মিডিয়া পোস্টে মেয়েটির নাম দেওয়া ছিল না।
তাছাড়া, নভেম্বর ২০২০ তে করা একটি ফেসবুক পোস্টে বলা হয় নতুন দিল্লির বদরপুর এলাকার জৈতপুরে বাচ্চা মেয়েটিকে পাওয়া যায়।
এর পর আমরা নতুন দিল্লির জৈতপুর গুরুদোয়ারার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁরা জানান যে, ক্লিপটি নভেম্বর ২০২০তে তাঁদেরই গুরুদোয়ারা প্রাঙ্গণে তোলা হয়।
ওই গুরুদোয়ারার এক সদস্য বলেন যে বাচ্চাটিকে গুরুদোয়ারার কাছেই অসহায় ভাবে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। তার সুরক্ষার জন্য তাকে গুরুদ্বারের ভেতরে নিয়ে আসা হয়। সেখানে একটি ভিডিও তুলে মেয়েটির পরিবারের সন্ধান দেওয়ার আবেদন করা হয়। গুরুদ্বারটির সোশাল মিডিয়া টিমের সদস্য সন্দীপ সিংহ রাই বলেন, "এই ভিডিওটি ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে তোলা। যেদিন ভিডিওটি তোলা হয়, সে দিনই মেয়েটি তার বাবা-মাকে খুঁজে পায়।"
উনি আরও বলেন যে, বাচ্চাটির পরিবারের সন্ধান দেওয়ার জন্য যাঁকে আবেদন করতে দেখা যাচ্ছে ভিডিওটিতে, তিনি হলেন হরজীত সিংহ। আমরা যখন তাকে দেখতে পাই, তখন সে (মেয়েটি) কাঁদছিল। সে হারিয়ে গিয়েছিল। তাই আমরা ওই ভিডিওটি তৈরি করে বিভিন্ন গ্রুপে পোস্ট করি, যাতে তার বাবা-মা দেখতে পান। তাকে সনাক্ত করেন, ও তাকে নিয়ে যান," বলেন রাই।
রাই নিজের ও হরজীতের একটি ক্লিপ আমাদের পাঠান। গুরুদোয়ারাতে তৈরি ক্লিপটিতে মেয়েটির পরিবারের সন্ধান জানাতে এই হরজীত সিংহকেই অনুরোধ করতে দেখা গিয়েছিল। আমাদের কাছে পাঠানো ওই ক্লিপে সিংহ পুরো ঘটনাটির বিবরণ দেন। আর বলেন, মেয়েটির বাবা-মার পরিচয় পত্র যাচাই করে নেওয়ার পরই বাচ্চাটিকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। তাতে উনি ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার না করার অনুরোধও করেন। কারণ, উনি বলেন যে, নভেম্বর ২০২০ তে, যেদিন ভিডিওটি তোলা হয়, সেই দিনই বাচ্চাটিও তার পরিবারের সঙ্গে মিলিত হয়।