প্যালেস্তাইনের কিছু মেক আপ শিল্পীর ২০১৭ সালের একটি ভিডিও ভুয়ো দাবি সহ সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে প্যালেস্তাইনের (Palestine) নাগরিকরা মেক আপ করে ইজরায়েলি হানায় আহত হওয়ার ভুয়ো অভিযোগ করছেন।
বুম অনুসন্ধান করে দেখল, আসল ভিডিওটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষিতে তোলা। তাতে প্যালেস্তাইনের কিছু মেক আপ শিল্পীকে ফরাসি দাতব্য সংস্থা ডক্টরস অব দ্য ওয়ার্ল্ড-এর হয়ে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে। ২০১৮ এবং ২০১৯ সালেও একই ধরনের ভুয়ো দাবির সঙ্গে এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছিল।
ইজরায়েল ও প্যালেস্তাইনের মধ্যে যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতেই এই ভিডিওটি শেয়ার করা হল। ১০ মে তারিখে বিতর্কিত শেখ জারা থেকে ইজরায়েলি বাহিনী জোর করে প্যালেস্তাইনের লোকেদের উচ্ছেদ করায়, এবং আল-আকসা মসজিদে হামলা চালানোর পর থেকেই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে নিরন্তর সংঘর্ষ চলছে। হামাস মিসাইল হামলা চালায়, ইজরায়েলও প্রত্যুত্তর দেয়। নিরন্তর বোমা বর্ষণের ফলে অন্তত ১৫০ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই প্যালেস্তাইনের নাগরিক।
এক মিনিট দৈর্ঘ্যের এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কিছু শিশু এবং পুরুষকে রক্তাক্ত মেক আপ করানো হচ্ছে। সুপারইম্পোজ করে তার সঙ্গে লেখা হয়েছে, প্যালেস্তাইনের লোকরা এ ভাবেই দুনিয়াকে নকল চোট দেখাচ্ছেন।
ভিডিওটির সঙ্গে থাকা টেক্সট-এ লেখা হয়েছে, "গাজার বাসিন্দাদের নতুন জোচ্চুরি। তারা নকল রক্ত তৈরি করছে, ক্ষত আঁকছে। ওগুলোর কোনওটাই সত্যি নয়। ওগুলো শুধু দুনিয়ার সমবেদনা কুড়ানোর, এবং বিশ্বের চোখে ইজরায়েলকে মন্দ প্রতিপন্ন করার চেষ্টা।"
এই ভিডিওটি বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় যে হিন্দি বয়ানের সঙ্গে শেয়ার করা হচ্ছে, তা এই রকম: গাজার মোল্লাদের (মুসলমানদের সম্বন্ধে ব্যবহৃত অসম্মানজনক শব্দ) নাটক দেখুন। তারা মেক আপ ব্যবহার করে আহত ও নিহত লোক তৈরি করছে।
(মূল হিন্দিতে: गाझा के मुल्लो की नौटंकी देखिए । पेंटिंग मेकप करके घायल और मृतक तैयार कर रहे है।)
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ফেসবুক পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বুম তার হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও ভিডিওটি যাচাইয়ের জন্য পায়।
তথ্য যাচাই
এই ভিডিওটিতে স্ক্রিনের উপরে বাঁ দিকে একটি লোগো আছে, যাচে লেখা 'গাজা পোস্ট'। আমরা এই ভিডিওটিকে ইনভিড ভিডিও ভেরিফিকেশন টুল ব্যবহার করে কয়েকটি কি ফ্রেমে ভেঙে নিই।
ইয়ানডেক্স-এ সেই কি ফ্রেমগুলির কয়েকটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা ফ্রান্স ২৪-দ্যা অবজার্ভার-এর ২০১৮ সালে করা একটি টুইটের সন্ধান পাই।
এই ফরাসি তথ্য যাচাইকরারী ওয়েবসাইট ২০১৮ সালে এই ভিডিওটির ভুয়ো তথ্য যাচাই করে দেখে। তখন দাবি করা হচ্ছিল যে বাশাদ আসাদের বিরোধীপক্ষ এই ভুয়ো আঘাতের ছবি তৈরি করে সরিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে নৃশংসতার মিথ্যে অভিযোগ করছে।
২০১৭ সালে দ্য গাজা পোস্ট-এর আসল ভিডিটির উল্লেখও এই রিপোর্টে রয়েছে।
ফ্রান্স ২৪-এর করা তথ্য যাচাই অনুসারে, প্যালেস্তাইনে মেক আপ ও সিনেমায় স্পেশাল এফেক্ট-এ আগ্রহীদের নিয়ে দ্য গাজা পোস্ট একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। আসল ভিডিওটি ২ মিনিট ১০ সেকেন্ডের। তাতে আরবি ভাষায় ভয়েসওভার আছে, এবং দু'জন মেক আপ শিল্পীর সাউন্ড বাইট ব্যবহার করা হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আসল ভিডিওটির খানিকটা অংশ দেখানো হয়— যেখানে বিভিন্ন লোকের ওপর মেক আপ লাগানো হচ্ছে। ভয়েস ওভারের পরিবর্তে একটি বাজনার শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
ভাইরাল ভিডিও (বাম দিকে) এবং আসল ভিডিওর (ডান দিকে) স্ক্রিনশটের তুলনা নীচে দেখা যাবে।
এ ছাড়াও আমরা প্যালেস্তাইনের মেক আপ শিল্পী মারিয়াম সালাহ-র উপর তুরস্কের রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যম টিআরটি-তে প্রচারিত একটি ভিডিও ফিচারেরও সন্ধান পাই।
দ্য গাজা পোস্ট ও টিআরটি-তে প্রকাশিত ভিডিওগুলির তুলনা করে এই সিদ্ধান্ত উপনীত হওয়া সম্ভব যে দুটি ভিডিও একই দিনে তোলা হয়েছে। টিআরটি-র রিপোর্টে জানানো হয় যে, সালাহ ও অন্য মেক আপ শিল্পীরা ফরাসি দাতব্য সংস্থা ডক্টরস অব দ্য ওয়ার্ল্ড-এর একটি প্রকল্পে কাজ করছিলেন।
আরও পড়ুন: ভুয়ো খবর: হনুমানজির স্টিকার সাঁটা, কেরলে অ্যাম্বুল্যান্সকে না দম্পতির